Site icon

শেরপুরের নকলা উপজেলায় আমড়ার বাম্পার ফলন : চালান হয় ঢাকায়

আমড়ার বাম্পার ফলন
মো. মোশারফ হোসেন, শেরপুর প্রতিনিধি ঃ

আমড়ার বাম্পার ফলন ঃশেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় আমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। এখানকার আমড়া দেশের বিখ্যাত বরিশালের আমড়ার মতো বড় ও সুস্বাদু হওয়ায়, বিভিন্ন জেলাসহ রাজধানী ঢাকায় নকলার আমড়ার যথেষ্ট কদর ও চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে নকলার আমড়া ট্রাকে ট্রাকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। এই আমড়া ব্যবসার সাথে জড়িত হয়েছেন উপজেলার অন্তত অর্ধশত পরিবার। তারা এই মৌসুমী ফলের ব্যবসা করেই তাদের সংসার ও ছেলে মেয়ের পড়া-লেখার খরচ বহন করেন।

আমড়া ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সারা বছর বিভিন্ন মৌসুমী ফলের ব্যবসা করেন। তার মধ্যে আমড়া, আম, জাম্বুরা, জলপাই, বেল, জাম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল রয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই এখানকার পাইকাররা বাড়ী বাড়ী ঘুরে অগ্রীম টাকা দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে মালিকদের কাছে গাছের ফল চুক্তি হিসেবে কিনে রাখেন। সময় হলে তথা পরিপক্ক হলে ওইসব ফল পেড়ে বিভিন্ন জেলাসহ রাজধানী ঢাকায় সরবরাহ করেন তারা। নকলা থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫ থেকে ২০ ট্রাক আমড়া ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে যাচ্ছে বলে জানান আমড়া ব্যবসায়ীরা।

তারা জানান, মাসে অন্তত ৮ থেকে ১০বার ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে চালান দিতে পারেন। তাদের দেয়া হিসাব মতে, বছরে অন্তত শত’বার চালান করেন তারা। প্রতিচালানে এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা করে তাদের লাভ থাকে। এতে করে প্রতি পাইকারের প্রতি বছরে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা করে লাভ হয়। ওই লাভের টাকাতেই চলে তাদের সংসার ও সন্তানদের শিক্ষা খরচ।

এমন এক মৌসুমী ফল বিক্রেতা উপজেলার জালালপুর এলাকার শ্রী রতন চন্দ্র তিলক দাস জানান, তার মতো অন্তত অর্ধশত পাইকার এই নকলা উপজেলাতে আছেন, যারা নাকি বাড়ী বাড়ী ঘুরে ফলের গাছ চুক্তিতে কিনে রেখে পরে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে থাকেন। তাদের মধ্যে, জালালপুরের আব্দুল মিয়া, কব্দুল আলী, তারা মিয়া ও মস্তু মিয়া; চরকৈয়া এলাকার বাবুল মিয়া, আব্দুল আলী ও শহিদুল; কায়দা গ্রামের আবুল মিয়া, সাহাপাড়া এলাকার রুপচাঁন, ধনাকুশা এলাকার আসাদুলসহ অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন মৗসুমী ফল ব্যবসায়ী উল্লেখ যোগ্য।

রতন আরও জানায়, মৌসুমী ফলের ব্যবসার আয় দিয়েই জীবন জীবীকা নির্বাহ করেন তারা। সে ১৪ বা ১৫ বছর ধরে এই ব্যবসা করে আসছেন। প্রতিটি ফলের মৌসুমে অন্তত ১০ থেকে ১৫ টি চালান দিতে পারেন। চলতি আমড়ার মৌসুমে গত দুই মাসে ৩৫ হাজার টাকার ব্যবসা থেকে, অন্তত ২৫ হাজার টাকা লাভ পেয়েছেন তিনি।

অন্য ফল ব্যবসায়ী আব্দুল আলী ও শহিদুল জানান, প্রতি চালানে তাদের ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মাল যায়, আর তাতে দ্বিগুণ লাভ হয় (৮ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা)। কিন্তু পরিবহণ ব্যয়, ফল পাড়ার শ্রমিক ও ফলের মালিকের খরচ বাদে প্রতি চালানে লাভ থাকে দেড় হাজার টাকা থকে দুই হাজার টাকা। তারা উদাহরণ হিসেবে জানান, জালালপুরে এক আমড়া গাছ কিনেছেন একহাজার ২০০ টাকায়। এতে দুইমনি প্রায় দুই বস্তা আমড়া হয়েছে, যা গননা করলে দুই সহ¯্রাধিক হবে। প্রতি বস্তা আমড়ার বর্তমান দাম এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। ফলে এই এক হাজার ২০০ টাকার আমড়া গাছ থেকেই তাদের আয় হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর খরচ বাদে এই ছোট্ট একটি গাছ থেকেই তাদের লাভ থাকছে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা।

মৌসুমী এই ফল ব্যবসায়ীরা দাবী করে জানান, সরকার যদি সহজ ঋণে তাদের জন্য ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করতেন, তাহলে তারা আত্ম নির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী হয়ে উঠতেন। তাদের দেখাদেখি অনেকেই এই ব্যবসার প্রতি ঝুঁকতেন। ফলে কিছুটা হলেও বেকারত্ব কমত বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুর ওয়াদুদ জানান, নকলা উপজেলার মাটি আমড়া চাষের জন্য বেশ উপযোগী। উপজেলায় অগণিত ফলদায়ী আমড়া গাছ রয়েছে। এসব গাছের আমড়া অনেকটাই ঐতিহ্যবাহী বরিশালের আমড়ার মতো বড় ও সুস্বাদু। তাই অন্যান্য জেলায় এখানকার আমড়ার যথেষ্ট কদর রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ূন কবীর বলেন, নকলার যে কেউ আমড়া চাষ করে অতি সহজে স্বাবলম্বী হতে পারেন। ফল চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তাদেরকে কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ সেবা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আমড়া চাষী ও চাষের পরিমান বাড়লে, প্রয়োজনে আমড়া চাষীদের জন্য আলাদা ভাবে সেবার ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান।

 

Exit mobile version