উপকূলীয় এলাকায় খাঁচায় মাছ চাষ যেন নতুন এক সম্ভাবনার বার্তা
Admin
কৃষিসংবাদ ডেস্কঃ
বরগুনা ও পটুয়াখালী উপকূলীয় এলাকায় ‘খাঁচায় মাছ চাষ’র জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এ পদ্ধতি মৎস্য চাষের নতুন সম্ভাবনার দিক নিয়ে খুলে দিচ্ছে। নদীপ্রধান উপকূলীয় অঞ্চলে বিস্তৃত রয়েছে বলেশ্বর, বিষখালী, পায়রা, বুড়িশ্বর, আন্ধার-মানিক, আগুনমুখো নদীসহ প্রচুর ছোটবড় জলাশয়, প্রায় হাজার খানেক ছোটবড় খাল। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ অধিবাসী জীবিকা নির্ভর করে মৎস্য সম্পর্কিত নানা পেশায়। গড়ে উঠেছে বৃহৎ মৎস্য শিল্প। জেলে-চাষিদের মাঝে সমাদৃত এই পদ্ধতিটি হতে পারে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বপ্নপূরণের চাবি-কাঠি।বরগুনা ও পটুয়াখালীর প্রতিটি উপজেলায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রচুর ‘খাঁচায় মাছ চাষ প্রকল্প’ চলমান রয়েছে। স্থানীয়দের অনেকেই স্থানীয় পদ্ধতিতে খাঁচা তৈরি করে নিজ উদ্যোগেও প্রকল্প পরিচালনা করছেন। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে অনেক বেকার যুবক এমনকি গৃহিনীরাও।সমপ্রতি বরগুনার আমুয়া খালে এ ধরনের একটি মাছ চাষ প্রকল্প নজর কেড়েছে এলাকাবাসীর। স্থানীয় মৎসচাষি গোলাম মোর্শেদ স্বপন ৪০টি খাঁচা নিয়ে গড়ে তুলেছেন মুক্ত জলাশয়ে খাঁচায় মাছ চাষের প্রকল্প। গোলাম মোর্শেদ স্বপন জানান, খোলা জলাশয়ে মাছ চাষের এই পদ্ধতিতে ২০০ বর্গফুটের প্রতিটি খাঁচা তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ১৬ হাজার টাকা। ১০ বছর টেকসই প্রতিটি খাঁচায় ১০ হাজার তেলাপিয়া মাছ, চার মাস মেয়াদে বছরে তিনবার চাষ করা যায়। খাঁচা প্রতি চার মাসে ২৫০ কেজি মাছ উৎপাদন করতে মোট খরচ হয় ১৭ হাজার টাকা। প্রথমবার ১০ হাজার টাকা লাভের পাশাপাশি পরবর্তী প্রতিবার ২৫ হাজার টাকারও বেশি লাভ থাকে এই মাছ চাষ পদ্ধতিতে। শুধুমাত্র তেলাপিয়া নয় নদী ও পুকুরের সব প্রজাতির মাছ চাষ করা যায় এ ধরনের নেটের ভেতরে।মৎস্য বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তা আলফাজ উদ্দীন শেখ জানান, পুকুরের তুলনায় খাঁচায় মাছ চাষ করলে একদিকে যেমন খাবার সাশ্রয় হয় তেমন মাছের বৃদ্ধিও হয় প্রায় দেড়গুণ। প্রকৃতিক পানির সরবরাহ এবং স্রোতের কারণে মাছের রোগ ব্যাধিও প্রায় হয় না বললেই চলে। ফলে চাষিদের যেমন বাড়তি সার ওষুধ প্রয়োগ করতে হয় না তেমনি মাছের মৃত্যু ঝুঁকিও থাকে খুব কম। বরগুনার আমতলীর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আধুনিক সফল মৎস্য চাষি জিএম দেলোয়ার হোসেন জানান, সরকারি তরফ থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতা পেলে এই মাছ চাষ পদ্ধতি দূর করতে পারে এলাকাবাসীর দারিদ্র্য। নদীতে মাছের ডিম দেয়ার মৌসুমে সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জীবিকার তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে নদীতে মাছ ধরে লক্ষাধিক জেলে। জেলেদেরকে এই খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতির আওতায় আনলে একদিকে যেমন জেলেদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হবে অন্যদিকে রক্ষা পাবে ডিমওয়ালা মাছ ও পোনা মাছ নিধন।মৎস্য চাষ পদ্ধতি : জালের খাঁচায় মাছের চাষ খাঁচায় মুরগি পালন বিষয়টির সঙ্গে ইতোমধ্যে আমরা বেশ পরিচিত হয়েছি এবং এই পালন ব্যবস্থাটির প্রসারও ঘটেছে। ছিক এ মুহূর্তে যদি আপনাকে বলা হয় ‘জালের খাঁচায় মাছের চাষ’ করবেন? হবে হঠাৎ করে আপনিও সেই সময়কার মতো একটু অবাক হবেন, যেমন খাঁচার মুরগি পালনের জন্য ব্যবস্থাটি কী ত্বরিৎ গতিতে প্রসারিত হয়েছে কত মানুষ আজ এ পেশায় কর্মের সংস্থান করে নিয়েছেন। জালের খাঁচায় মাছের চাষ ব্যবস্থাটিও একদিন এমনি জনপ্রিয় হবে, হাজারও মানুষের কর্মের সংস্থান হবে এ খাতে, আমিষের উৎপাদন বাড়বে, শক্ত হবে জাতীয় অর্থনীতি।
যাদের পুকুর নেই: মাছ চাষ আজ আর তাদের জন্য সমস্যাই নয়। জালের খাঁচায় মাছ চাষের আদর্শ ক্ষেত্রই হচ্ছে নদী-নালা, খাল-বিলসহ উন্মুক্ত জলাশয়। যেখানে প্রবল স্রোত নেই অথচ আছে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ। মাছ চাষের জন্য উত্তম জায়গা হচ্ছে এমন উৎসগুলো। মশারির মতো বিশাল আকারের জাল প্রবহমান পানিতে ডুবিয়ে চারকোনা বেঁধে তাতে ২চ্- ৩চ্ সাইজের পোনা ছেড়ে মাস চারেক লালন-পালন করে পুকুরে যে উৎপাদন পাবেন তার অন্তত কৃড়িগুণ বেশি পাবেন এখানে।খাঁচায় মাছ চাষের সুবিধা : দেশের ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, হালদা, সুরমাসহ অধিকাংশ নদ-নদীর বাঁকে এ ধরনের মৎস্য চাষ সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে পানি দুষণমুক্ত, খর স্রোতমুক্ত এবং শত্রুমুক্ত হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ করলে সহজেই প্রবহমান নদীর পানি পাওয়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক উৎস্য থেকেও অনেকটা খাবার পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে পুকুর খনন ও তৈরির অতিরিক্ত খরচ কমে যায়। যে কোন সময়ই খাঁচার সংখ্যা বৃদ্ধি করে খামার সমপ্রসারণ সম্ভব। নদীর প্রবহমান পানিতে প্রচুর অক্সিজেন থাকায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া খাঁচার মাছের বর্জ্য পানির স্রোতে অন্যত্র চলে যায়, ফলে পানি দূষিত হয় না। যদিও খাঁচা তৈরিতে কিছু খরচ হয়, তথাপি ভূমির মালিকানা সমস্যা, ভূমি ক্রয় এবং ভূমির ব্যবহার থেকে রেহাই পাওয়া যায়। ফলে ওই জমি কৃষি কাজে ব্যবহার করা সম্ভব।মৎস্য চাষ পদ্ধতিখাঁচা কোথায় বসাতে হবে : খাঁচা যে কোন মাপের হতে পারে। ১ বর্গ মি. (২ হাত- ২ হাত প্রায়) বা ৫ বর্গ মি. ১০৫০ বা ১০০.৫০ বর্গ মি. মাপের। এই খাঁচা বড় পুকুরেও বসাতে পারেন। তবে সেখানে সব পুকুরের আয়তনের মাত্র ৫ ভাগ অথবা ১০ ভাগ ব্যবহার করতে পারবেন ভালো উৎপাদন যেমন প্রতি ঘনমিটারে (২ হাত-২ হাত-২ হাত প্রায়) ১০ কেজি থেকে ১৫ কেজি। আপনি পেতে পারেন ৪/৫ মাসে। সেখানে খাঁচা বসাতে হবে চলমান খোরা পানিতে। যেমন বর্ষা মৌসুমে যে সব এলাকা ডুবে যায়, সেখানে অথবা নদীর বাঁকে যেখানে স্রোত থাকে খুব কম। খাঁচা বসাতে পানির গভীরতা থাকতে হবে সর্বনিম্ন ১.২ মি. বা ৪৬ ইঞ্চি তবে সর্বস্ব পানির উচ্চতায় কোন হিসাব নেই। পানি যতই বৃদ্ধি পাক খাঁচার কোন অসুবিধা নেই। খাঁচা বসাতে খাঁচার মাপে উপরে একটা বাঁশের ফ্রেম তৈরি করতে হবে এবং চার কোণায় খাঁচা তুলে উপরে করে দেবেন, পানি কমলে খাঁচা নিচু করে দেবেন। খাঁচার ওপর খোলা এবং ৫ দিকে জাল এবং পানির উপরে ১ ফুট উঁচু রাখতে হবে। সংবাদ।।