খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন ব্যবহার ঃ সমস্যা ও দূর করার উপায়

কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ জিয়াদ

সমসাময়িক সময়ে পৃথিবিতে সব চেয়ে বড় দৈত্যের নাম ফরমালিন। ফরমালিনকে ভয় পায় না এ রকম লোক জগতে একটিও নাই। বাজারে গিয়ে বাহারি সব্জি আর ফলমূল দেখে আপনার নয়ন জুরিয়ে যাচ্ছে! কিন্তু উপায় নেই । যে জুজুর ভয় আপনার মাথায় চেপে বসেছে, তার চেয়ে বরং আপনি না খেয়ে মরবেন তবু জেনে শুনে কেন বিষপান করবেন!  তাহলে আসুন ফরমালিনের আসল গল্পটা জেনে নিই।

# ফরমালিন কি : কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন দ্বারা তৈরি একটি রাসায়নিক যৌগ ফরমালডিহাইড। এটা দেখতে সাদা পাউডারের মত। ৬০% পানি ও ৪০% ফরমালডিহাইড এর জলিয় দ্রবনকে ফরমালিন বলে।

# ফরমালিন কোথায় ব্যবহার হয় : ফরমালিন একটি বিষাক্ত তরল। পোশাক, প্লাস্টিক, পেপার, রঙ, কনস্ট্রাকশন ইত্যাদি শিল্পে এটি জীবাণূ নাশক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গবেষনা প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরিতে মৃতদেহ সংরক্ষনের কাজে এটি ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়।
আমাদের দেশে অসাধু ব্যবসায়িরা মাছের পচন রোধে ফরমালিন ব্যবহার করে থাকেন।

# ফরমালিন যুক্ত মাছ চেনার উপায় :
১) ফরমালিন যুক্ত মাছের ফুলকা লাল না হয়ে কালচে/ ধুসর হবে
২) মাছের চোখ ঘোলা হবে ও দেহে আঁশটে গন্ধ থাকবে না
৩) দেহ টাইট ও শক্ত হবে, দেহে পিচ্ছিল পদার্থ থাকবে না
৪) মাছের দেহে মাছি বসবে না।

# ফল ও সব্জিতে ফরমালিন : শাক- সব্জি ও দেশিয় ফল যেমন ; পেয়ারা,পেপে, কলা, আনারস, জাম, লটকন, জামরুল ইত্যাদিতে সচরাচর ফরমালিন ব্যবহার হয় না। তবে বিদেশি ফল যেমন ; আঙ্গুর, আপেল, নাসপাতি,লিচু, খেজুর, আম ইত্যাদিতে ফরমালিন -পানি ছিটিয়ে দীর্ঘ সময় টাটকা রাখা হয়। ফল পাকাতে ফরমালিনের কোন ভূমিকা নাই। ফল পাকাতে ব্যবহার হয় কার্বাইড ও ইথোফেন, যা একটি ভিন্ন আলোচনার বিষয়।

# ফরমালিনের ক্ষতিকর দিক: কৃত্রিম ফরমালিন নিয়মিত সেবনে
১) চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্থ হয় ও হার্ট কিডনি অকেজো হয়
২) ফুসফুস ও খাদ্যনালির ক্যানসারের ঝুকি বেড়ে যায়
৩) পেটের পীড়া, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদির প্রকোপ বেড়ে যায়
৪) স্মৃতিশক্তি লোপ পায় ও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

# খাদ্যদ্রব্য ফরমালিন মুক্ত করার উপায় :
১) ফরমালিন যুক্ত দ্রব্য ১ ঘন্টা লবন পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ৯০% ফরমালিন কমে যায়
২) শুধু পানিতে ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখলে ৬১% ফরমালিন কমে যায়
৩) ভিনেগার ( ১০% এসিটিক এসিড) ও পানির দ্রবনে ১৫ মিনিট খাদ্যদ্রব্য ভিজিয়ে রাখলে ১০০% ফরমালিন ফ্রি হয়।

* সুতরাং ভাই, বোন, বন্ধু, আর নয় ফরমালিন ভীতি। সন্দেহজনক খাদ্যদ্রব্য ফরমালিন মুক্ত করেই আপনি তা ভোগ করতে পারেন নিশ্চিন্তে!!

প্রস্তুতি : সিনিয়র প্রভাষক
গোমনাতি ডিগ্রি কলেজ
ডোমার, নীলফামারী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *