পর্ব-১
গাভীর গর্ভ ধারণের সমস্যা একটি ব্যাপক পরিচিত বিষয়। বারবার ষাঁড় দেখানোর পরেও কেন তা বাচ্চা গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয় না। গুরুত্ব পূর্ণ একটা বাস্তবিক বিষয়। কিছুদিন আগে একটা অভিযোগ এসেছিল এক খামারীর কাছ থেকে বেশ কয়েকবার পাল দেখানোর পরেও বাচ্চা ধারণ করছেনা। সেক্ষেত্রে তার করনীয় কী। বিষয়টা শুনতে যতটা না সহজ, তার আসল কারণ সনাক্ত করা ততটা সহজ নয়।
ইংরেজিতে এটাকে বলে (failure to conceive ) এটা অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। তার কারণ যেকোন একটা বা অনেকগুলো হতে পারে।
বয়সের বিষয়ঃ এক্ষেত্রে প্রথমে লক্ষনীয় হচ্ছে গাভী বা বকনার বয়স। ছোট বকনা অল্প বয়সের হলে, সে কেমন প্রজনন এর জন্য হিট প্রদর্শণ করেছে কিন্তু বাচ্চা গ্রহণের জন্য উপযুক্ত শারীরবৃত্ত¦ীয় কাজ সম্পর্ণ হয়না। অথবা খুব বেশি বয়স হলেও এমন সমস্যা হতে পারে। সাধারনত গবাদীপ্রাণির বিভিন্ন জাতের বিভিন্ন বয়সে গর্ভধারণ করার যোগ্যতা অর্জন করে। এক্ষেত্রে বয়সগুলো নিম্নরূপ;
গাভী- ১০-১৮ মাস
ছাগল- ৬-১০ মাস
ঘোড়া- ১৫-২৪ মাস
কুকুর- ৬-১২ মাস
এবং ভেড়ার ক্ষেত্রে ৭-১০ মাস। বয়সে প্রজনন বৈশিষ্ট প্রকাশ পায়। তবে এই সময়ের পরেও কিছু সময় লাগতে পারে তা প্রাণীর দেহের গঠনের উপর এবং সরবরাহ কৃত পুষ্টির উপর। সঠিক সময়ে সঠিক পুষ্টি পেলে দ্রুত প্রজনন ক্ষম হয়ে উঠে। এই স্ময়ের পুর্বে যদি গাভী হীটে আসে তাহলে তাকে ষাড় দেখানো উচিত না। এতে করে পরবর্তী সমস্যা দেখা দিতে পারে।
দক্ষ টেকনেশিয়ান এর অভাবঃ বাংলাদেশে গাভীর প্রজনন মুলত আগে ষাড় দেখানোর উপর নির্ভর ছিল। তবে বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্সিমেনেশন (Artificial insemination) কৃত্রিম প্রজনন এর মাধ্যমে প্রসেসিং করা সিমেন (বাংলার সাধারণ মানুষ তা বীয নামে চেনে)। এটাকে গাভীর প্রজনন তন্ত্রের ইউটেরাস এ স্থাপন করা হয়, এক্ষেত্রে দক্ষতার প্রয়োজন। বাংলাদেশে সাধারনত বিভিন্ন কোম্পানি তাদের টেকনেশিয়ান দ্বারা এই কাজ করায়ে থাকে। সরকারী ভাবে উপজেলা প্রাণির সম্পদ অফিসে একজন করে কৃত্রিম প্রজনন টেকনেশিয়ান কর্মী নিয়োগপ্রাপ্ত থাকেন যারা এ আই(Artificial insemination) করে থাকেন। এক্ষেত্রে কিছু অদক্ষ টেকনেশিয়ান ইউটেরাসের বডিতে সিমেন স্থাপন করতে ব্যর্থ হলে সেই গাভীর গর্ভ ধারণ নিশ্চিত হয়না। সাইভিক্স(পবৎারী) এর মুখে যদি সিমেন স্থাপন করা হয় তাহলে প্রজননে সক্ষম হতে পারেনা। এক্ষেত্রে আনাডীর মত প্রয়োগ করার ফলে প্রজনন তন্ত্রের নরম ট্যিস্যু ক্ষতগ্রস্থ হয় ,ফলে অনেক সময় গাভীকে হিট দেখানোর পর রক্ত বের হতে দেখা যায়।
সঠিক ভাবে হীটে আসা বুঝতে না পারা এবং সঠিক সময়ে প্রজনের ব্যবস্থা না করাঃ
গাভীর ক্ষেত্রে প্রজনন সফলতা নির্ভর করে থাকে মানুষের তথা মালিকের সচেতনতার উপর। কারণ গৃহপালিত প্রাণী তার নিজের প্রয়োজন পুরা করতে পারেনা, যেমন পারে বন্য প্রাণিরা। এক্ষেত্রে গাভীর ডাকে আসা বা হীটে আসা নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপুর্ন। শুধু তাই ই নয় সঠিক সময়ে তাকে ষাড় দেখাতে হবে নতুনা তা কার্যকরী হবেনা। গাভীর ডিম্ব সে সময় পর্যন্ত বেচে থাকে তার মধ্যে যদি স্পার্ম এসে মিলিত হতে না পারে তাহলে তা ব্যর্থ হয়ে যায়। সাধারনত স্পার্ম কৃত্রিম ভাবে সিমেন দেয়া হলে বাচে এবং ষাড় দেখানোর ফলে প্রায় ৩০ ঘন্ঠা পর্যন্ত গাভীর প্রজনন তন্ত্রের মধ্যে বেচে থাকতে পারে।
এজন্য উপযুক্ত সম অয় হল, গাভীর হিট দেখার পরে ১২ ঘন্ঠার পর থেকে ১৮ ঘন্ঠার মধ্যে বীজ দিতে হবে। এটার ফলে বীজ দেখার পর ইনফান্ডিবুলেমে যেতে প্রায় ৪-৮ ঘন্ঠা সময় লাগবে অন্যদিকে ডিম্বকে আসতে প্রায় ৪-৫ ঘন্ঠা সময় লাগে ।
তার ফলশ্রুতিতে স্পার্ম ও ওভামের মিলনের ফলে গাভী বাচ্চা ধারণ করতে সমস্যা হবেনা।
সিমেনের সমস্যাঃ ত্রুটি পূর্ণ ষাড় দিয়ে যদি গাভীকে প্রজনন করার চেষ্টা করা হয় তাহলেও গাভীর প্রজনন ব্যবহত হয়। ষাড় দেয়ার পরেও আবার সে হীটে আসে বা গরম হয় । এর কয়েকটি কারণ হতে পারে-
অস্বাভাবিক স্পার্মঃ প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করতে হলে স্পার্কে অবশ্যই হতে হবে মোটাইল (গাতিশীল), সঠিক আকৃতি ও গঠনের। কিছু সমস্যা দেখা যায় কিছু ষাড়ের স্পার্মের সেক্ষেত্রে হতে পারে তা, দুইটা মাথা, দুইটা লেজ, বাকানো লেজ, মোটা ঘাড় ইত্যাদি। স্পার্মের প্রতিটি অংশই নিজ নিজে কাজে সফল হওয়ায় মাধ্যমে জাইগোটে পরিনত হয়।
শুক্রানুর সংখ্যা যদি কম থাকে। প্রতি মিলি সিমেনে ৮০০-২০০০ মিলিয়ন হতে হবে যার মধ্যে কেবল মাত্র একটি শুক্রানূ ডিম্বানুকে নিষিক্ত করতে পারবে।
ষাড় যদি কোন রোগে আক্রান্ত থাকে বিশেষ করে ব্রুসেলোলিস(Brucellosis), ট্রাইকোমোনাস ফিটাস(Trichomonas fetus), ক্যামফাইলোব্যকটেরিয়া ফিটাস( camphylobacter fetus) রোগে। তাহলে বীজের মাধ্যমে তা গাভীতে এবং বাচ্চাতে সংক্রামিত হয়ে থাকে। যার ফলে গাভীর প্রজনন সমস্যা সহ গর্ভপাত হতে পারে।
লক্ষণঃ
সাধারণত একবার বীজ দেখানোর পরে এক মাস পরে আবার গাভী গরম হয়। পাশপাশি সিমেন প্রয়োগ করার পরে গাভীর যোনি থেকে রক্ত পড়তেও দেখা যেতে পারে।
গাভী দেখতে সুস্থ্য তার পরেও বীজ দেয়ার পরে গর্ভ ধারণের কোন বৈশিষ্ট প্রকাশ পায়না।
সিমেন দেয়ার পরেও আবার হীতে আসে গাভী পরের ইস্ট্রাস(Estrous cycle) চক্রে। তখন তাকে আবার সিমেন দেয়ার প্রয়োজন পড়ে।
রোগ নির্নয়ঃ
ক্স খামারীর কাছে সঠিক ভাবে তার পুর্বের ইতিহাস জানলে বোঝা যায় সহজে।
ক্স সঠিকভাবে রেক্টাল পালপেশন করে জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের অবস্থা পর্যাবেক্ষণ করা।
সমাধানঃ
প্রথম একবার দেখার পর আসল কারণ জানা কঠিন হয়ে পরে। তাই তখন এক মাস অপেক্ষা করার পর অভিজ্ঞ ভেটেরিনারি ডাক্তারকে দেখাতে হবে। তিনি রেকটাল palpation মাধ্যমে ভিতরে কোন সমস্যা আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করবেন। আবার গরম হওয়ার পরে ডাক্তারের পরামর্শ ক্রমে দ্বিতীয় বার সিমেন প্রয়োগ করবেন।
বেশি গাভী থাকলে একজন গাভীর হিটে আসা না আসা লক্ষ করলে ভাল হয়। প্রত্যেহ সকালে গরুর অবস্থা দেখে তা নির্ণয় করা যাবে। সেক্ষেত্রে প্রধান বৈশিষ্ট হল-
ক্স যোনিপথ দ্বারা মিউকাস পড়তে দেখা যাবে, একটা গাভী অন্য গাভীর উপর লাফ দিয়ে উঠবে। গাভী খাওয়া বন্ধ করে চিৎকার করতে থাকবে। আর গরম দেখার প্রায় ১২ ঘন্ঠা পরে ষাড় বা সিমেন প্রয়োগ করতে হবে।
ক্স সিমেন প্রয়োগের সময় ১ ডোজ জি এন আর এইচ ইঞ্জেকশন করা যেতে পারে। তাহলে কন্সেপশান রেট ভাল থাকে।
ক্স যদি গাভীর হিটে আসার পর অভিক্ষ ভেটেরিনারিয়ানের সাথে সাক্ষাত করে পরামর্শ গ্রহণ করা।
ক্স গাভীর ক্ষেত্রে সাধারণত হীটে আসে খুব সকালে সেক্ষেত্রে তাকে সিমেন প্রয়োগ করাতে হবে শেষ বিকাল বেলা না হলে সন্ধ্যাব্যালা। আর যদি সন্ধার সময় গরম হয় তাহলে পরদিন সকালে বীজ দিতে হবে। প্রয়োজনে দুইবার এ আই(Articifial INsemination) করলে কনসেপসন (conception) হার বেশি থাকে।
ক্স অভিজ্ঞ টেকনেশিয়ান দ্বারা বীজ দিয়ে নিতে হবে।
—-
লেখক পরিচিতি
শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক
ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্স অনুষদ।
হাবিপ্রবি ,দিনাজপুর ।
মোবাইলঃ ০১৭২৩৭৮৬৮৭৭
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম