Site icon

গাভী ডাকে আসা বা গরম হওয়ার ১০ টি লক্ষন

গাভী ডাকে

গাভী ডাকে আসা : লাভজনক দুগ্ধ খামারে জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল গাভির ডাকে আসা বা গরম হওয়া সঠিক ভাবে নির্ধারন। ডাকে আসা বা গরম হওয়া সঠিকভাবে নির্ধারন করতে না পারলে সময় মত প্রজনন করানো যাবে না,আর সময় মত প্রজনন করানো না গেলে গাভীর গর্ভ ধারন হবে না।তাই আপনাকে সঠিক ভাবে জানতে হবে আপনার গাভীটি গরম হয়েছে কিনা। এজন্য গাভীর ডাকে আসার লক্ষনগুলো জানা থাকা খুব প্রয়োজন।

১।লাফালাফিঃগারু সাধারন লাফালাফি খুব একটা পছন্দ করে না। কিন্তু যখন সে ডাকে আসে তখন সে এই কাজটি শূরু করে।একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন,গরুটি যদি ডাকে আসে তাহলে সে অন্য গরুর উপর লাফানোর চেষ্ট করে।আবার অনেক সময় দেখা যায় তার উপর অন্য গরু লাফিয়ে উঠলেও খুব একটা বিরক্ত হয় না।তখন মোটামুটি ভাবে ধরে নিতে পারেন গাভীটি ডাকে এসেছে।ডাকে আসলে গাভীটি অন্য গাভীকে লাফিয়ে উঠার সুযোগ দেয় এবং নিজেও লাফাই(Heat detection by riding of cow)

২।এলোমেলো কেশঃ স্বাভাবিক ভাবে গাভীর পেছনের দিকে লেজের চার পাশের পশমগুলো সুশৃংখল হওয়ার কথা।কিন্তু যদি অন্য গরু পছনে উঠে থাকে তাহলে তা এলোমেলো হয়ে যাবে।তাহলে বিষয় কি দাড়াঁল? যদি লেজের চারপাশের পশম এলোমেলো থাকে তাহলে ধারনা করতে পারেন গরুটি ডাকে এসেছে।তবে এটা দিয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না যে গরুটু ডাকে এসেছে।এই লক্ষনের সাথে অন্যান্য লক্ষনও মিলিয়ে দেখতে হবে।

৩।অন্তরঙ্গতাঃগাভী ডাকে আসলে অন্য গাভীর সাথে তার অন্তরঙ্গতা বেড়ে যায়।অনেক সময় দেখা যায় অন্য গাভীর গা চাটে,মুখে মুখ ঘসে এমনি অন্য গরুর যোনিতে মুখ ঘসতেও দেখা যায় এবং অন্য গরুও ডাকে আসে গরুটি যোনিমুখ ঘসতে দেখা যায়।যদি একাধিক গরু এক সাথে ডাকে আসে তাহলে তাদের নিজেরদের মধ্যে দল পাকানোর প্রবনতা দেখা যায়।ডাকে আসার গাভীর যোনি মুখ অন্য গরু শুকে

৪।অস্থিরতাঃএই লক্ষনটি খামারীর খুব সহজেই চোখে পড়ে।যেই খামারী গাভীকে নিয়মিত দেখা শুনা করে তিনি সহজে এই পরিবর্তনট বুঝতে পারে।এই ক্ষেত্রে আপনি খেয়াক করবেন গাভীটি এদিক ওদিক হাঁটা হাটি করবে।ঘন ঘন ডাকা ডাকি করবে।খাবার দাবার কমিয়ে দিবে।

৫।প্রস্রাবঃডাকে আসা গাভীটি ঘন ঘন অল্প অল্প প্রস্রাব করে। এই লক্ষনটিও অন্য লক্ষনের সাথে মিলিয়ে নিতে পারেন।গাভী ডাকে আসলে ঘন ঘন প্রস্রাব করে

৬।অঙ্গ-ভঙ্গিঃডাকে আসা গরুটি অনু গরুর যোনীর ঘ্রান নেয় এবং মাথা উচুঁ করে জিহ্বা বের করে দেয়।লেজ উচিয়ে রাখে অর্থাৎ যোনীর মুখ থেকে লেজটি বারবার সরিয়ে রাখে।

৭।শ্লেষ্মা বের হওয়াঃপ্রিয় খামারী,গরু ডাকে আসার একটি স্পষ্ট লক্ষন হল যোনী পথা দিয়ে স্বচ্ছ, আঠালো ডিমের সাদা অংশের মত শ্লেষ্মা জাতীয় পদার্থ বের হওয়া।এই পদার্থ যোণীমুখ,নিতম্ব,পা,পিঠ এবং তলপেটে লেগে থাকতে দেখা যায়।সাধারনত ডাকে আসা গাভীর শরীরে ইষ্টোজেন হরমোন বেড়ে যাওয়ার কারনে এ ঘটনা ঘটে।তবে গরু গরম হওয়ার আগে থেকে শুরু করে,গরম হওয়া এবং গরম চলে যাওয়ার পরও এই শ্লেষ্কা দেখা যেতে পারে।মজার বিষয় হল,কিছু কিছু গরু ডাকে আসলে কোন ধরনের শ্লেষ্মাই দেখা যাই না।কেবল মাত্র কৃত্রিম প্রজননের সময় জরায়ুতে চাপ দিলে এই শ্লেষ্মা দেখা যায় না।এই জন্য অনেক গরু ডাকে আসলেও বুঝতে পারে না।এক্ষেত্রে বুঝার সহজ উপায় হল,অন্যান লক্ষঙ্গুলো ভালভাবে খেয়াল করা।

৮।যোনী মুখ ফুলে যাওয়াঃযে খামারী নিয়মিত গাভীটি দেখা শোনা করেন উনি একটু খেয়াল করেই দেখতে পারেন প্রস্রাবের রাস্তা ( যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় যোনীমুখ বলে (vulvar lips)) একটু ফুলে গেছে।এই জায়গাটি স্বাভাবিক অবস্থায় একটু কুঁচকানো থাকে।যোনী মুখের ভিতরের দিকে লাচলে হয়ে যায়।সাধারনত ডাকে আসার একটু আগে এ ঘটনা ঘটে যা বেশিক্ষন স্থায়ী হয় না।পরবর্তীতে তা গাড় গোলাপী বর্ন ধারন করে।যোনী মুখে থাকে কেশগুলো কিছুটা ভেজা ভেজা হয়ে যায়।

৯।রক্তপাতঃএই ঘটনাটি ডাক চলে যাওয়ার পরপরই ঘটে।অর্থা ডাক চলে যাওয়া দুই-তিন দিন পর ঘটে।এটি দ্বারা বুঝা যাই গাভীটি ডাকে এসেছিল এবং ১৫-২০ দিন পর পুনরায় ডাকে আসবে।এই ক্ষেত্রে যোনি পথ দিয়ে সামান্য রক্ত পাত হতে দেখা যায়। যা সামান্য কালচেও হতে পারে।

১০। দুধ উৎপাদনঃগাভী যখন ডাকে আসে তখন অন্যান্য দিনের তুলনায় দুধ উৎপাদন কমে যায়।শুধু মাত্র এই একটি লক্ষন দিয়েও গরু গরম হয়েছে কিনা সেটা বুঝে নিতে হয়। তবে এক্ষেত্রে অনেক দক্ষতার প্রয়োজন।গাভী গরম হলে সাধারনত এই লক্ষনগুলো প্রকাশ পায়।

তবে সবগুল লক্ষন একই গরুতে প্রকাশ নাও পেতে পারে।সেক্ষেত্রে দু’একটা লক্ষন দেখেই বুঝে নিতে হবে গরুটি ডাকে এসেছে কিনা।আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই কোন লক্ষনই প্রকাশ নাও পেতে পারে।এই সব ক্ষেত্রে গাভী ডাকে এসেছে কিনা সেটা বুঝা মুশকিল হয়ে পড়ে।কিন্তু ঘটনা খুব কম।তাই এই দশটি লক্ষন জানলেই আপনি মোটামুটিভাবে বুঝে যাবেন আপনার গরূটি ডাকে এসেছে কিনা।আর কখন প্রজনন করাবেন।

Exit mobile version