Site icon

ঘৃণ্য পুরুষ

মাহমুদা সুলতানা কানন, সিভাসু প্রতিনিধিঃ

রোজ রোজ একটা মাঠ পার হয়েই কোচিং এ যাওয়া। আবার আসা।সময়গুলো অন্যরকম ছিলো।সবে দশম শ্রেণীতে উঠলাম।অরবিট কোচিং এ পড়তাম। ভাইয়া আর আমি একসাথে পড়তাম।তাই একসাথে আসা যাওয়া করতে হতো। দুজনের কেউই স্কুল জীবনে প্রেম করতে পারিনি। ও আমার জন্য। আর আমি??নাই বললাম। পড়ালেখা আর দুজনের খুনসুটি নিয়ে দিনকাল ভালোই চলছিল।অবসর বলতে তখন বই পড়া। আর কিছুই নেই।সকালে যখন পড়তে যেতাম তখন ঘুম চোখে নিয়ে চারপাশ দেখতাম।কতো মানুষ।কেউ সুন্দর জীবন যাপন করছে। আর কেউ তার কাছে টাকা চাইছে,চাল চাইছে।আবার কেউ বা পাগল হয়ে ঘুরছে ট্রেন স্টেশনে। এসব দেখতাম আর ভাবতাম,নামাজ পড়ে কাঁদতাম, বলতাম আমার আর যাই হোক,যত বড় অসুখই হোক না কেনো,কখনও যেনো পাগল না হয়।মানুষের অবহেলা সে তো আমি সহ্য করতে হয়তো পারবো না।

কদিন ধরেই একটা মহিলা দেখছি। তার চালচলন সবই বারবার দেখি। কেমন জানি লাগে। একটা লোক মাঝেমাঝে দেখি তার সাথে। খাবার দিয়ে যায়। ভাইয়াকে বলি। ও বলে হয়তো লোকটা অনেক ভালো মানুষ। তাই এরকম একটা পাগলি মহিলার ও খোজখবর নিতে আসে। তখন আমরা কেউ জানতাম না এই লোকটাই পৃথিবীর ঘৃনিত ব্যক্তিদের একজন।

আমি মহিলার দিকে এমনভাবে খেয়াল করতাম যে তার পরিবর্তন গুলো বুঝতাম সহজেই।আট-নয় মাস হয়ে গেলো ওনাকে দেখছি।এর আগে কোথায় ছিলো তা কেউই জানতাম না। প্রতিদিন এর মতো সেদিন ও আমরা পড়তে যাচ্ছি।তাকে কোথাও দেখছিনা। আমি ভাবছি কোথায় যেতে পারেন ওনি।পরে চারপাশে থাকিয়ে দেখছি।
একটু যেতেই চিৎকার শুনলাম।মাঠে শুয়ে আছেন।আর সে কি যন্ত্রনা। প্রসব যন্ত্রনা। আমি আর থাকাতে পারছিলাম না। একটু পর আমি আসলাম বাসায়।বাসায় আসার পর থেকে বমি হয়েছে অনেকবার। আর কাদছিলাম। সবাই জানতে চাই কি হয়েছে। পরে ভাইয়াকে সব বলি। এরপর থেকে টানা সাতদিন বিছানায়। ভয়ে আমি আর পড়তেও যায়নি। তখন আর কোচিংটাতে পড়িনি। চলে আসি। আর ভাবতেও পারিনি বিষয়টা। শারিরীক ভাবে সুস্থ হয়ে যায়। মানসিকভাবে না। এখনও ভাবলেই চোখ ভিজে যায়। আর ঘৃণা হয় সে সকল পুরুষদের প্রতি। যারা একটা পাগলী কে ও রেহায় দেয়না।(ঘৃণ্য পুরুষ)

 

Exit mobile version