কৃষিবিদ ড. এম এ মজিদ মন্ডলঃ
ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চলে জলপাইয়ের বা জয়তুনের আদি বাসস্থান। পরবর্তীতে এ ফল এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে জলপাই একটি অতি পরিচিত মুখরোচক ফল। কাঁচা ও পাকা সব অবস্থায় এ ফল খাওয়া যায়। তবে আচার, চাটনি, জ্যাম, জেলি প্রভৃতি তৈরিতে সর্বাধিক ব্যবহার হয়। পাকা ফলে প্রজাতি ভেদে ১৫-৪০ % তৈল থাকে এবং উহাতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ থাকে। জলপাইকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়; যথা- আরবীয় ঝলপাই বা জয়তুন(Olive) যা মরুভূমির দেশসমুহে ভাল জন্মে এবং তৈল তৈরীতে বেশী ব্যবহার হয়। দ্বিতীয় হলো ভারতীয় জাত (Indian Olive) যা ফল হিসাবে খাওয়া ও আচার, চাটনি তৈরিতে বেশী ব্যবহার হয়। জলপাইয়ের গুনাবলি এতবেশী যে, পবিএ ধর্মগ্রন্ত থেকে কবিরাজি বিদ্যায় লেখা আছে, তাই এখানে আলোকপাত করা হলো না।
উদ্ভিদ তত্ত্ব ঃ জলপাই একটি সুউচ্চ বৃক্ষ এর পাতা উপবৃত্তাকার, পত্রফলকের অগ্রভাগ সুচাঁলো, ফল উপবৃত্তাকার। ফল পাকার পরও সবুজ থাকে এবং তৈলাক্ত শাঁসযুক্ত। ভূমধ্য সাগরীয় আবহাওয়াতে এ ফল ভাল হয় কিন্তু উষ্ণ ও অবউষ্ণ আবহাওয়াতে বেশী ভাল হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়াতে ভারতীয় অঞ্চলের টক জলপাই (Indian Olive) ভাল জন্মে তাই একে দেশী জলপাই হিসাবে ধরা হয়।
বংশ বিস্তার ঃ বীজের মাধ্যমে সাধারনত বংশ বিস্তার করা হয়। বীজাবরণ খুব শক্ত তাই বীজ ২৪-৩০ ঘণ্টা পানিতে ভিজে রাখলে তাড়াতাড়ি গজায়। চোঁখ কলম, গুটি কলম, শাখা কলম প্রভৃতির দ্বারাও বংশ বিস্তার করা যায়। চারা রোপনের জন্য ৮-১০ মিটার দুরে দুরে গর্ত খুড়ে প্রতিটি গর্তে ১০-১৫ কেজি গোবর, ৪-৫ কেজি ছাই দিয়ে রোপন করলে গাছ ভাল হয়।
পরিচর্যা ঃ বানিজ্যিক ভাবে জলপাই চাষ করলে বা ভাল ফলন পেতে হলে প্রতি বছর একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছে ৩০ কেজি গোবর বা কম্পোষ্ট, ৫০০ গ্রাম ইরিয়া, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ৩০০ গ্রাম পটাস সার দিতে হবে। দুপুর বেলা গাছের ছায়া যতটুকু স্থানে পড়ে সে স্থানের মাটি কোদাল দিয়ে আলগা করে সারগুলি মিশে দিতে হবে।
ফলন ঃ বর্ষার প্রাম্ভে গাছে ফুল আসে এবং শীতের পূর্বেই ফল পাকে। পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছ থেকে বছরে ২০০-২৫০ কেজি ফল পাওয়া যায়।
জলপাই গাছে তেমন কোন পোকামাকড় ও রোগ বালাই আক্রমন করে না এবং বাংলাদেশের মাটিতে যে কোন স্থানে সহজে জম্মাতে পারে। তাই এ পুষ্টি সমৃদ্ধ ফলটি চাষ করে পরিবার ও দেশের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ফল বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে।
—————-
লেখক ঃ প্রভাষক কৃষিশিক্ষা বিভাগ, সিটি কলেজ, নাটোর।