জলবায়ু ঝুঁকিতে বাংলাদেশের কৃষিঃ এখনই নিতে হবে ব্যবস্থা

জলবায়ু ঝুঁকিতে বাংলাদেশের কৃষি

weather changeকৃষি সংবাদ ডেস্কঃ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবস্থা খুবই ভয়াবহ। শিল্পোন্নত দেশগুলোর অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণ আর বিলাসী জীবনযাপনের কারণে পৃথিবীর জলবায়ুতে যে পরিবর্তন ঘটছে তাতে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ম্যাপলক্রফট বিশ্বের ১৭০টি দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে ১৬টি দেশকে ‘চরম ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। আর এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। কিন্তু বৈশ্বিক চুক্তির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশ ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না। এ জন্য গঠিত জলবায়ু তহবিলেও এখন পর্যন্ত তেমন টাকা আসছে না। ঢাকঢোল পিটিয়ে কোটি কোটি ডলারের অর্থসহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও শিল্পোন্নত দেশগুলো এ তহবিলে অর্থায়ন করছে না। জলবায়ু ঝুঁকির শীর্ষে থাকা বাংলাদেশ এ তহবিলের বড় দাবিদার হলেও গত পাঁচ বছরে কোনো অর্থ আসেনি।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশকে আগামী ১৫ বছরে অন্তত ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এ অর্থ চলতি অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের সাড়ে ৮ শতাংশ বেশি। এ পরিমাণ টাকা দিয়ে ১১টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের এক নথিতে প্রয়োজনীয় অর্থের এ তথ্য পাওয়া যায়। প্যারিসে গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে বলা হয়, ২০৩০ সাল পর্যন্ত কৃষি, স্বাস্থ্যসহ ১০টি খাতে প্রতি বছর প্রায় ২১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করতে হবে বাংলাদেশকে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এ বিপুল অর্থ বাংলাদেশের পক্ষে বিনিয়োগ করা কি সম্ভব। সুতরাং বৈশ্বিক চুক্তির দিকেই মনোযোগ দিতে হবে।

এ কথা সত্য, পৃথিবীর তাপমাত্রা দিন দিন বাড়ছে। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে গলে যাচ্ছে জমে থাকা বরফ। তাপমাত্রা যত বাড়তে থাকবে বরফ গলার মাত্রাও তত বাড়বে। ফলে অনিবার্যভাবে বেড়ে যাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। ডুবে যাবে পৃথিবীর নিম্নাঞ্চল। এতে পরিবেশ উদ্বাস্তু হতে হবে কোটি কোটি মানুষকে। পৃথিবীর তাপমাত্রা আর মাত্র ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ৪৫ সেন্টিমিটার। ফলে বাংলাদেশের ১৫ শতাংশ উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেলে বাংলাদেশের অনেক মানুষ ও জীবজন্তুর অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে। পরিবেশ উদ্বাস্তু হবে প্রায় ১ কোটি লোক। কমে যাবে খাদ্যের উৎপাদন। দেশের কৃষি পড়বে চরম হুমকির মুখে।

পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কাছে মানুষের অসহায়ত্ব ও জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে। প্রায় ২০টির মতো সংক্রামক ও অসংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলার প্রস্তুতি নেই দরিদ্র, অনগ্রসর ও পরনির্ভর দেশগুলোর। ভবিষ্যতে ঝুঁকির মাত্রা ও প্রকোপ যত বাড়বে তত বেশি মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যা, মৃত্যুঝুঁকি ও সংকট দেখা দেবে। দেশে দেশে সহিংসতা ও হানাহানিও বাড়বে। অতি উষ্ণায়নের ফলে তাপমাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠবে। তাতে জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হবে। ক্ষুদ্র প্রাণী এবং গরিব মানুষের স্বাস্থ্য সংকট ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়তে থাকবে। স্বাস্থ্যগত অনিরাপত্তা ও বিপর্যয় দেখা দেবে ভয়াবহভাবে। সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেবে। জ্বালানির ঘাটতি এবং তৎসংশ্লিষ্ট সমস্যা দেখা দেবে। ধনী-দরিদ্র, উন্নত-অনুন্নত, রাজনৈতিক, সামাজিক, সুশীলসমাজ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সংস্থাসহ সবাইকেই মানুষের ঝুঁকি ও ক্ষতির সম্ভাবনা রোধে, সহিংসতা ও হানাহানি এড়াতে কাজ করা প্রয়োজন। তবে বিশ্বের দিকে তাকিয়ে থেকে কোনো লাভ হবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। বাংলাদেশের জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হবে সরকারকেই এবং এর কোনো বিকল্প আপাতত নেই।

পরিশেষে, জলবায়ু পরিবর্তনের  হুমকি মোকাবেলায় বাংলাদেশের কৃষিকে বাঁচাতে হলে এখনই নিতে নানামুখি কার্যকর পদক্ষেপ। ফসলের নতুন নতুন জাত ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন এখন অতীব জরুরি হয়ে উঠেছে। সেই সাথে যারা কার্বন নিঃসরণ করছে এমন দেশের কাছ থেকে  অর্থ সংগ্রহ করার বাস্তবমুখি কৌশল খুঁজে বের করতে হবে।। যায়যায়দিন।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *