Site icon

টার্কি পালন করে আপনিও আয় করতে পারেন লক্ষ লক্ষ টাকা (শেষ পর্ব)

টার্কি পালন করে আপনিও আয় করতে পারেন

টার্কি পালন করে আপনিও আয় করতে পারেন

টার্কির প্রজনন ব্যবস্থাপনাঃ পূর্ণ বয়স্ক টার্কির জন্য ৩-৪ বর্গফুট বাসস্থান প্রয়োজন। ঘরে পর্যাপ্ত আলো এবং বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঘরকে জীবাণুমুক্ত রাখতে নিয়মিত লিটার পরিষ্কার করতে হবে। প্রতিদিন সতেজ ডিম সংগ্রহ করে দ্রুত পরিষ্কার করে নিতে হবে। প্রজনন ঋতুতে তালিকা অনুযায়ী খাবার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সরবরাহ করতে হবে।

ডিম ফোটানোঃ টার্কির ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ২৮ দিন সময় লাগে। সাধারণত ২ টি পদ্বতিতে টার্কির ডিম ফোটানো হয়। যেমন-
ক) কুচেঁ টার্কি দ্বারা প্রাকৃতিকভাবে ডিম ফোটানোঃ একটি কুচেঁ টার্কি একসাথে প্রায় ১০-১৫ টি ডিমে তা দিতে পারে। এ সময় এদের পর্যাপ্ত আলো-বাতাস এবং খাবার সরবরাহ করতে হয়।

খ) কৃত্রিমভাবে ডিম ফোটানোঃ কৃত্রিমভাবে ডিম ফোটানোর জন্য ইনকিউবেটর ব্যবহার করা হয়। এক্ষেএে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিচে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার একটি আর্দশ তালিকা দেয়া হল:

সময়                         তাপমাত্রা (ফারেনহাইট)                        আ: আর্দ্রতা (%)
সেটার                                ৯৯.৫                                                           ৬১-৬৩
হ্যাচার                                ৯৯.৫                                                           ৮৫-৯০
রোগবালাই: টার্কির প্রচলিত রোগকে সংক্রামক ও অসংক্রামক দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। সংক্রামক রোগের কারণ হিসাবে রয়েছে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া। অসংক্রামক রোগের কারণ হল বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক বিষাক্ত পদার্থ,টক্সিন, নিম্নমানের খাদ্য, আবহাওয়া এবং পরিবেশ। টার্কির সাধারণ রোগগুলো হচ্ছে-
রাণীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমা, এভিয়ান রাইনোট্রাকিয়াইটিস, রক্ত আমাশয়, হিমোরেজিক এন্টারাইটিস ভাইরাস, ফিতা কৃমি, গোল কৃমি, ব্লাক হেড, ফাউল পক্স, নেক্রোটিক এন্টারাইটিস, ফাউল কলেরা ইত্যাদি।

ভ্যাকসিন শিডিউল: নিচে ছকের মাধ্যমে টার্কিতে ভ্যাকসিন প্রদানের সময় এবং ভ্যাকসিনের নাম দেওয়া হল:

টার্কির বয়স                                                           ভ্যাকসিনের নাম
১ম দিন                                                                  এন.ডি (বি১ স্ট্রেইন)
৪র্থ ও ৫ম সপ্তাহে                                                           ফাউল পক্স
৬ষ্ঠ সপ্তাহে                                                           এন.ডি (লাসোটা স্ট্রেইন)
৮ম-১০ম সপ্তাহে                                                         ফাউল কলেরা

বাজার সম্ভাবনা: ক) টার্কির মাংস পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হওয়ায় এটি খাদ্য তালিকার একটি আদর্শ মাংস হতে পারে। পাশাপাশি দেশের বৃহক্তর জনগোষ্ঠীর মাংসের চাহিদা মেটাতে গুরুক্তপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যাদের অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত মাংস খাওয়া নিষেধ অথবা যারা নিজেরাই এড়িয়ে চলেন, কিংবা যারা গরু বা খাসীর মাংস খায় না, টার্কি তাদের জন্য হতে পারে বিকল্প। তাছাড়া বিয়ে, বৌ-ভাত, জন্মদিন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাসীর বা গরুর মাংসের বিকল্প হিসেবে টার্কির মাংস হতে পারে অতি উৎকৃষ্ট একটি খাবার এবং গরু বা খাসীর তুলনায় খরচ ও হবে কম।

খ) বাণিজ্যিক খামার করলে এবং মাংস হিসেবে উৎপাদন করতে চাইলে ১৪-১৫ সপ্তাহে একটি টার্কির গড় ওজন হবে ৫ থেকে ৬ কেজি এবং ২৪ সপ্তাহ বয়সে টার্কির ওজন প্রায় ১০ থেকে ১৫ কেজি। ৪০০ টাকা কেজি দর হিসেব করলে একটি টার্কির বিক্রয় মূল্য দাঁড়াবে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা। ১৪ থেকে ১৫ সপ্তাহ পালন করতে সর্ব্বোচ খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। তাহলে কমপক্ষে একটি টার্কি থেকে ৩০০-৫০০ টাকা আয় করা সম্ভব।

গ) তবে মাংস হিসেবে বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠতে আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। বর্তমানে ছোট আকারের খামার করার যে চাহিদা দেশ ব্যাপী তৈরি হয়েছে,তাতে আগামী ৩/৪ বৎসরে কয়েক লাখ টার্কির প্রয়োজন হবে এবং সে ক্ষেএে দাম ও বেশী পাওয়া যাবে। ৩০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত বয়স ও রং ভেদে টার্কির জোড়া কেনা বেচা চলছে।

উপসংহার: বাংলাদেশে মুরগি পালনের পাশাপাশি আমিষের উৎস হিসাবে টার্কি পালনে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। টার্কি যেহেতু ব্রয়লার মুরগির চেয়ে দ্রুত বাড়ে তাই পরীক্ষামুলকভাবে প্রাণিসম্পদ বিভাগের উদ্যোগে কিছু কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই টার্কি পালন শুরু করেছেন। উদাহরণ স্বরুপ নওগাঁ জেলার ঝিল্লুর রহমান, ঢাকার উক্তর বাড্ডার মিরাজ হোসেনের নাম উল্লেখ করা যায়। গ্রাম্য এলাকায় মুক্ত অথবা অর্ধমুক্ত অবস্থায় টার্কি পালন অত্যন্ত লাভজনক। মুক্ত অবস্থায় টার্কি পালনে অল্প পুজিঁতে সহজেই লাভজনকভাবে খামার গড়া যায়। তাছাড়া আমাদের দেশের আবহাওয়া টার্কি পালনের জন্য খুবই উপযুক্ত।

Exit mobile version