ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
মো. মোশারফ হোসাইন, শেরপুর:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ঃদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বা গবেষণগন নিরলস গবেষণা করে প্রতিনিয়িত নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ আবিষ্কার করছেন বিভিন্ন রোগের ঔষুধ ও তথ্য-উপাত্ত। এর ধারাবাহিকতায় এবার কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. শেখ শাহিনুর রহমান গবেষণা করে নতুন এক তথ্য জানিয়েছেন। তিনি ওলকচু ও তালের বিভিন্ন অংশের ওপর গবেষণা করে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে বলেছেন- কচি তালের শাঁস, পাকা তালের রস, অঙ্কুরিত তালের আঁটির ভেতরের সাদা শাঁস এবং ওলকচু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
অধ্যাপক ড. শেখ শাহিনুর রহমান বরেন- ডায়াবেটিস রোগীদের ওলকচু ও তালের শাঁসসহ বিভিন্ন অংশ খাওয়ার ব্যাপারে মানুসের মাঝে যথেষ্ট ভীতি রয়েছে। কিন্তু তিনি তাঁর গবেষণা লব্ধ প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রমাণ করেছেন যে, এ খাদ্যগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোন ক্ষতিকর বস্তু নহে, বরং বেশ উপকারী। তিনি বলেন- কচি তালের শাঁস, পাকা তালের রস, অঙ্কুরিত তালের আঁটির ভেতরের সাদা শাঁস এবং ওলকচু খেলে রক্তে কোলেস্টরের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে, ফলে ডায়াবেটিক রোগ নিয়ন্ত্রণ থাকে।
২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে গবেষণা করে ওলকচু ও তাল সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শেখ শাহিনুর রহমান।
ড. শেখ শাহিনুর রহমান এই প্রকল্পের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ইঁদুরের ওপর এসব খাদ্যের গবেষণা চালিয়ে এ সফলতার প্রমাণ পেয়েছেন। এতে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, ওলকচু ও তালের শাঁসসহ বিভিন্ন অংশ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।
এই গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট তাকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করেন। গবেষণাটির সুপারভাইজার হিসেবে অধ্যাপক ড. শেখ আবদুর রউফ এবং কো-সুপারভাইজার হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম।
তাঁর দীর্ঘদিনের গবেষণায় উঠে এসেছে, পাকা তালের রস, কাঁচা তালের শাঁস, অঙ্কুরিত তালের আঁটির ভেতরের সাদা অংশ অথবা ওলকচুতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে। তিনি উল্লেখিত খাদ্য উপাদান গুলোর কোনোটিই ডায়াবেটিসের মাত্রা বাড়ায় না; বরং ডায়াবেটিসের মাত্রা কমিয়ে আনতে সক্ষম। তিনি বলেন, স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি এসব খাদ্য উপাদান পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
গবেষক ড. শেখ শাহিনুর রহমান বলেন, ওলকচু ও তালের বিভিন্ন অংশ নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে থাকে। ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি উদ্ভিদজাত উপাদানের সংমিশ্রণে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়ে সক্ষম এমন একটি কার্যকর খাদ্য উপাদান তৈরির জন্য গবেষণা চালিয়ে যাবেন বলে তিনি আশাব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, উপযুক্ত আর্থিক সহায়তার ফান্ড পেলে গবেষণার মান এবং পরিধি বাড়ানো সম্ভব। তাতে দেশ ও জাতির মঙ্গল হবে বলে তিনি দাবী করেন।
তালের বীজ রোপনের পরে গাছ বড় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত গবাদি পশু থেকে রক্ষা করা ছাড়া আর কোন বাড়তি খরচ বা সময় ব্যয় করতে হয়না এবং ওলকচুর পাতা বা গাছ গাবদী পশু-পাখি খায়না। তাল গাছ বর্জ্রপাতের ক্ষতি থেকে যানমাল রক্ষা করে। ফলে ওলকচু ও তাল একদিকে পরিবেশ রক্ষা করে, অন্যদিকে ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তাই দেশের প্রতিটি বাড়ির আঙ্গীনায় বা রাস্তার ধারে অন্যান্য গাছের পাশাপাশি তাল বীজ রোপন করা উচিত বলে মনে করেন পুষ্টি ও পরিবেশ বিজ্ঞানী এবং সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা।