Site icon

চতুর্থ ইবিএস কৃষি দিবস উদযাপিত,সংবর্ধিত হলেন কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন ও আজিম

কৃষি সংবাদ ডেস্কঃ

চতুর্থ ইবিএস কৃষি দিবস উদযাপিত

ময়মনসিংহের ত্রিশালে উদযাপিত হলো চতুর্থ ইবিএস কৃষি দিবস ২০১৮। ত্রিশাল উপজেলার খাগাটী পাড়ায় ঈদগাহ উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঈদগাহ বন্ধু সমাজ-ইবিএস নামের একটি অলাভজনক স্থানীয় সংগঠন এই আয়োজন করে। গত ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ ইং তারিখ বৃহস্পতিবারে অনুষ্ঠিত উক্ত কৃষি দিবসটি “কৃষিই শক্তি…” প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে প্রায় দক্ষিণ ত্রিশালের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত চরশতাধিক কৃষাণ-কৃষণীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আহাম্মদ আলী আকন্দ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে শিক্ষিত তরুণদের কৃষি কাজের সাথেও সম্পৃক্ত হতে হবে। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক ১৪২২(ব্রোঞ্জ পদক)বিজয়ী ও কেআইবি কৃষি পদক ২০১৮তে ভূষিত হওয়ায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার(ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবির এবং বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক ১৪২১(রৌপ্য পদক) ভুষিত হওয়ায় ত্রিশালের আদর্শ মৎস হ্যাচারীর স্বত্বাধীকারী মো: আজিম উদ্দিনকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো: আসাদুল্লাহ বলেন, চর্তুথ ইবিএস কৃষি দিবস উদযাপনের প্রতিপাদ্য বিষয় কৃষিই শক্তি… আমরা বলে থাকি কৃষিই সমৃদ্ধি। কৃষিই শক্তি.. কথাটি যযার্থ কেননা এখন থেকে ৪০-৫০ বছর আগের সময় আর বর্তমান সময় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সরকার আমাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার, সেটি সম্ভব হয়েছে দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষি বিভাগ এমন সব পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন যে, এবার ব্যুরো মৌসুমে ৪৫ হাজার হেক্টর জমি অতিরিক্ত চাষাবাদ করা হয়েছে। যাতে উৎপাদনে কোন প্রকার ঘাটতি হবেনা। বরং যেকোন বড় ধরনে দুর্যোগ আমরা মোকাবেলা করতে পারব। তিনি কৃষকদের বিভিন্ন উপদেশ দিয়ে বলেন বঙবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন আপনাদের যে উদ্যোগ তারই বাস্তবায়ন। তিনি কৃষকদের সংগঠনের উপর গুরুত্বারোপ করে ঈদগাহ বন্ধু সমাজ-ইবিএস এর কৃষক বান্ধব কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানান।

অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত বঙবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক মো: আজিম উদ্দীন সংবর্ধনা পেয়ে উচ্চসিত হয়ে বলেন, আমি বিভিন্ন সময় পদক ও সংবর্ধনা পেলেও আজকে যেভাবে কৃষকদের সামনে সংবর্ধিত তাতে আমি আনন্দিত। জেলা পরিষদের ভবন থেকে সংবর্ধনা পেয়েও আমি এত আনন্দ পায়নি যা এই অজপাড়া গ্রাম থেকে পেয়েছি। আজকে অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ অঞ্চলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা উপস্থিত আছেন। বিভিন্ন সংগঠনও জাতীয় পদক পায়, সেক্ষেত্রে আয়োজক সংগঠনের নাম পাঠালে হয়ত তারা বঞ্চিত হবেনা।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক ও কেআইবি পদক প্রাপ্ত সংবর্ধিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় এর ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার কৃষিবিদ ড.হুমায়ুন কবির বলেন, আমি দেশের উন্নয়নের স্বার্থে কিভাবে কাজ করলে সফলতা আসবে, কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়ন জন্য আমার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখালিখি করি। এপর্যন্ত পত্রপত্রিকায় প্রায় ৭ শতটির মত প্রবন্ধ বা লেখা প্রকাশ করেছি। এগুলো জাতীয় পর্যায়ে কাজে লেগেছে বলেই আমাকে বিভিন্ন পদকে ভূষিত করেছেন। আমি যত বড় স্বীকৃতিই পাইনা কেন আজকের এই স্বীকৃতি আমার জন্য বড় অর্জন বা নতুন মাত্রা। কেননা ইহা আমি যাদের নিয়ে গবেষণা করি বা কাজ করছি তাদের নিকট থেকে সংবর্ধনা পাচ্ছি এতে আমি গর্বিত। আমি বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো: আব্দুল হামিদ মহোদয়ের নিকট থেকে এ মাসেই কেআইবি পদক গ্রহণ করেছি।

তিনি স্মৃতি চারণ করে বলেন, আমার বাবাও একজন কৃষক ছিলেন। কৃষকের সন্তান হিসেবে আপনাদের মধ্যে আমার বাবার প্রতিকৃতি দেখতে পাই। আমরা মনে করি কৃষির উন্নতি ছাড়া, কৃষকের উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। যে স্বপ্ন জাতির জনক বঙবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন তা এখন বাস্তবায়ন করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার গৃহীত সমন্নিত কৃষক বান্ধব, দেশ বান্ধব, উন্নয়ন বান্ধব কিছু নীতির কারণেই আজকে দেশ এগিয়ে যাচেছ। একসময় সারের জন্য ব্যপক হাহাকার ছিল, কৃষি অফিসসহ সমস্ত কিছু সারের পেঁছনে দৌঁড়াতো হতো। এখন সেটি সঠিক কৃষি নীতি ও সার ব্যবস্থাপনার কারণে কখন মৌসুম আসে যায় তা কেউ বলতে পারবেনা। অল্প জায়গায় কিভাবে বেশী উৎপাদন করা যায় সেজন্য কাজ করেন কৃষিবিদ ও কৃষি কর্মকর্তাগণ। আপনারা নির্ভয়ে তাদের নিকট যাবেন। প্রশিক্ষণগুলোকে আমরা মতবিনিময় বলে থাকি, কেননা পড়াশুনার বাইরেও যারা বাস্তব কৃষি কাজ করেন তাদের অভিজ্ঞতার মতবিনিময় করে থাকি। আপনার এখানে একটি ইবিএস-আইপিএম কৃষি ক্লাব করেছেন, আপনাদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে যা কিছু পাওয়া দরকার তা কৃষি অফিস থেকে প্রদান করবেন বলে জানিয়েছেন। আপনাদের এই সংগঠনের জন্য যদি পুরস্কার পাওয়ার জন্য আমার সহযোগীতা প্রয়োজন হয় তা হলে আমি তা করার চেষ্টা করব।

চতুর্থ ইবিএস কৃষি দিবস উদযাপন ২০১৮ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ দীপক কুমার পাল, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, কৃষিবিদ মো: শাহাদুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, ত্রিশাল উপজেলা এবং কৃষিবিদ মো: আব্দুল মাজেদ, উপপরিচালক(ডিডি) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ খামারবাড়ীসহ আরো কয়েকজন সরকারী কর্মকর্তা  এবং সংবাদমাধ্যমের কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি কৃষিবিদ মো: আব্দুল মাজেদ বলেন, যেহেতু এখানে একটি কৃষি ক্লাব রয়েছে এবং ইবিএস এর মত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে, সেহেতু কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের সকল সুবিধা প্রদান করে কৃষক সংগঠনটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কর্মকর্তাদের আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, যে কোন সমস্যায় বা উৎপাদনের জন্য কৃষি অফিসে পরামর্শ চাইবেন। কৃষিকে ভালবাসুন, ভালবেসে কৃষি কাজ করতে হবে। তরুণদের কৃষি কাজে এগিয়ে আসতে হবে।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধক বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আহাম্মদ আলী আকন্দ দ্বিতীয় পর্যায়ে বক্তব্য প্রদান করার সময় মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস স্মরণ করে বলেন, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্বাধীনতা লাভের পর বলেছিলেন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি আনতে হবে। মুক্তি আনতে হলে দেশকে সোনার বাংলা গড়তে হবে। আর সোনার বাংলা গড়তে হলে এদেশ কৃষি নির্ভর দেশ, কৃষিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কৃষিতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করতে হবে। তিনি বাকশাল গঠন করেছিলেন তাতে কৃষিখাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় পূর্ববর্তী সরকার দেশে ৪০ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতি রেখে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর এদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন, দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে বিদেশে রপ্তানী করেছেন। একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের উন্নয়নের ব্যবস্থা করেছেন।এখন কৃষকরা সহজলভ্যে সার পাচ্ছেন অথচ বিগত সরকারের আমলে সারের জন্য কৃষকরা জীবন দিয়েছেন। আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ। এই লক্ষ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঈদগাহ বন্ধু সমাজ-ইবিএস এর চীফ কোঅডিনেটর ও ইবিএস-আইপিএম কৃষি ক্লাবের সভাপতি মো: খাইরুল ইসলাম। তিনি তার প্রবন্ধে বলেন, এবারের ৪র্থ ইবিএস কৃষি দিবসের যে প্রতিপাদ্য বিষয় তথা “কৃষিই শক্তি…” আমরা নির্ধারণ করেছি তা আমাদের স্বার্থক করে তোলার সুযোগ রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি প্রান্তিক কৃষি ব্যবস্থা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কেননা, দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী কোন না কোন ভাবে কৃষি কাজের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বজায় রাখতে হলে প্রান্তিক কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, আমরা চাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কৃষকদের উন্নয়নের জন্য যে সব কর্মসূচী হাতে নেবে তার প্রত্যেকটি আমাদের এই ইবিএস অঞ্চলের কৃষকদের নিকট পৌঁছবে এবং আমরা তা বাস্তবায়ন করতে সহযোগীতা করব। আমরা বাংলাদেশ সরকারের কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচীর সহযোগী অংশীদার বা সহযোগীতাকারী হিসেবে অর্থাৎ প্রান্তিক কৃষক ও সরকার উভয়ের মধ্যস্থতাকারী রূপে ঈদগাহ বন্ধু সমাজ-ইবিএস কাজ করতে অঙ্গিকারাবদ্ধ। তিনি ময়মনসিংহ ত্রিশালের কতিপয় গ্রামকে ইন্ডাষ্ট্রিতে পরিণত করে আদর্শগ্রামে উন্নীত করার ঘোষণা দেন।

উল্লেখ্য ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী থেকে ঈদগাহ বন্ধু সমাজ-ইবিএস দক্ষিণ ত্রিশালের ১০ নং মঠবাড়ী, ১১ নং মোক্ষপুর ও ১২ নং আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। সম্পূর্ণ অলাভজনক ও অরাজনৈতিক এই সংগঠনটি প্রতিবছর ২২ ফেব্রুয়ারীতে ইবিএস কৃষি উদযাপন করে আসছে। ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন সময় কৃষক ও সবজি মাঠ স্কুল বাস্তবায়ন এবং আইএফডিসি/এএপি‘র প্রশিক্ষণ আয়োজন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাজে ব্যাপকভাবে সহযোগীতা করে আসছে। ইতিমধ্যে ঈদগাহ বন্ধু সমাজ-ইবিএস কৃষকদের নিয়ে ইবিএস-আইপিএম কৃষি ক্লাব নামে পৃথক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে। তাতে কৃষকগণ সঞ্চয়মুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে তাদের অর্থনৈতিক মু্িক্তর জন্য কাজ করছে।

Exit mobile version