Site icon

পেঁপে চাষে ভাগ্য বদল হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষকেদের

পেঁপে চাষে ভাগ্য বদল
এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট থেকে :

পেঁপে চাষে ভাগ্য বদল : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাগেরহাট সহ ১০ জেলার পেঁপে চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এ কারণে কৃষকরা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আমাদের বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবিরের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় এ সংবাদ।

সরেজমিনে কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল খালেক শেখ জানান, লাভজনক হওয়ায় তিনি পেঁপে চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। তিনি এ বছর ১০ বিঘা জমিতে পেঁপে গাছ লাগিয়েছেন। প্রথম বার পেঁপের চারা লাগানোসহ বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যায় প্রতি বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।

ইতোমধ্যে নতুন লাগানো ক্ষেত থেকে পেঁপে বিক্রি করতে শুরু করেছেন তিনি। বর্তমানে প্রতিমণ পেঁপে ৩শ’ টাকা দরে বিক্রি করছেন। প্রতি ২০ দিন পরপর প্রায় ৪শ’ মণ পেঁপে বিক্রি হচ্ছে। চলতি মৌসুমে নতুন লাগানো ক্ষেত থেকে ৬ থেকে ৮ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি।

তিনি আরো জানান, একবার চারা লাগালে ক্ষেত থেকে প্রায় ৩ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী দ্ইু বছর গাছের পরিচর্যায় খরচ খুবই কম লাগবে। এছাড়া ঝড় বৃষ্টিতে গাছের ক্ষতি না হলে চাষকৃত পেঁপে ক্ষেত থেকে আগামী তিন বছরে গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি হবে বলে তিনি ধারণা করছেন।

একই গ্রামের কৃষক মো. কাদের শেখ জানান, পেঁপে একটি লাভজনক ফসল। তিনি এ বছর ৩ বিঘা জমিতে পেঁপে গাছ লাগিয়েছেন। চলতি বছরে এ ক্ষেত থেকে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষেত নষ্ট না হলে আগামীতে আরো বেশি লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাগেরহাট সহ ১০ জেলার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ২ হাজার৮৮৩ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলায় মোড়েলগঞ্জ ৪৯৮ হেক্টর, বাগেরহাটে সদর উপজেলায় ২১৫ হেক্টর, শরনখোলা ৩৭৫ রামপাল২৭৫ হেক্টর মংলার ১৯৫ হেক্টর ফকিরহাট ৩৭৫ হেক্টর চিতলমারীতে ৪৭৫ হেক্টর এবং মোল্লাহাট ৪৭৫ হেক্টর জমিতে পেপে চাষ হয়েছে। যা থেকে (সবজি হিসেবে) প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন পেঁপে উৎপাদিত হবে।

কৃষি বিভাগ থেকে জানা গেছে, পেঁপে গাছের বিভিন্ন রোগ যেমন-গাছের গোড়া পঁচা, পোঁকা বাহিত বিভিন্ন রোগ, ক্ষতিকারক ভাইরাস থেকে গাছকে মুক্ত রাখতে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পেঁপে গাছের খাদ্যের অভাব মেটাতে বোরোন নামক অনুখাদ্য প্রয়োগ করতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া পেঁপের পরাগায়নসহ ভালো ফলন পাওয়ার জন্য কৃষকদের বিঘাপ্রতি ২টি পুরুষ গাছ রাখার কথা বলা হয়েছে।

চলতি মৌসুমে জেলায় স্থানীয় জাতের পেঁপের পাশাপাশি বারি জাতের শাহিরাচি, কাশিমপুরি, হানিডিউ, পুশাজাজেন্টসহ বিভিন্ন জাতের পেঁপের চাষ করেছে কৃষকরা। এসব জাতের পেঁপে ক্ষেত থেকে কৃষকরা যাতে ভালো ফলন পেতে পারে এর জন্য সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

পেঁপে মানুষের পেটের রোগসহ শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এ কারণে কারো বাড়িতে জায়গা থাকলে অন্তত ৪টি পেঁপে গাছ লাগানো উচিত। এর ফলে বাড়ির মালিক সারা বছর পেঁপে খেতে পারবে। বাড়িতে পেঁপে চারা লাগালে বিশেষ যতœ নেয়ার দরকার হয় না। গাছের গোড়ায় মাঝেমধ্যে বোরোন নামক অনুখাদ্য প্রয়োগ করলেই চলে।
গ্রামের একটি ক্ষেত থেকে পেঁপে কিনতে আসা ব্যাপারী মো. আল আমীন ও মোক্তার হোসেন বলেন, আমরা কৃষকদের ক্ষেত থেকে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা প্রতিমণ পেঁপে কিনেছি। যা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে বিক্রয়ের জন্য পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া তাদের মত জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপরীরা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পেঁপে কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রয়ের জন্য পাঠাচ্ছেন।

বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন জানান,কৃষকরা যাতে পেঁপের ভালো ফলন পায় এর জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পেঁপে চাষের সুবিধা হচ্ছে জমিতে একবার চারা লাগালে ৩ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে প্রথম বছরের পর পরবর্তী দুই বছর ক্ষেত পরিচর্যার খরচ খুবই কম লাগে। এতে কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারও কৃষকরা পেঁপে চাষে ব্যাপকভাবে লাভবান হবে।

Exit mobile version