সাদিকুর রহমান, হাবিপ্রবি থেকেঃ
বাগানবাড়ীতে কে থাকতে না চায়; যেখানে থাকে সবুজের ছড়াছড়ি, নির্মল বায়ু প্রাকৃতিক দৃশ্য । সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে সবাই চায় একটু মানসিক প্রশান্তি; এই প্রশান্তি নয় কোন কৃত্রিম প্রশান্তি, এই প্রশান্তি প্রাকৃতিক প্রশান্তি, এই প্রশান্তি স্রষ্টা প্রদত্ত প্রশান্তি । যে পরিবেশে থাকবে গাছ-পালা, ফুল-ফল, নির্মল বায়ু, নিরবতা; থাকবে না কোন যানবাহনের শব্দ, কলকারখানার ধোয়া, শহরের ধূলিময় পরিবেশ । যে পরিবেশে বসে মানুষ আপন মনে চলে যাবে কল্পনার জগতে । এমনই একটি জায়গা, যার নাম হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)।
এ বিশ্ববিদ্যালয়টি দিনাজপুর সদর উপজেলায় অবস্থিত। দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার উত্তরে এর অবস্থান । ১৩৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সৌন্দর্যে ভরপুর । যেখানে আছে ফলজ,বনজ, শোভাবর্ধনকারি ও ঔষধি গাছ, আরও আছে সৌন্দর্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পাখি । সব মিলিয়ে এ যেন স্রষ্টার এক অপুর্ব দান। শুরু থেকে সৌন্দর্যমন্ডিত হয়ে আসছে এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ইংরেজি রোমান্টিক সাহিত্যের কবি বলেছেন, “সৌন্দর্যই সত্য, সত্য সুন্দর”সৌন্দর্যের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে লিচু বাগান । এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে প্রায় একশত লিচু গাছবিশিষ্ট লিচু বাগান। যে কেউ লিচু বাগানে প্রবেশ করলে আর বের হতে চায় না। পর্যটকগণ এসে লিচুতলায় বসে পড়েন, লিচু গাছের গন্ধে আর উঠতে চান না । এ বছর ঢাকা থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শফিকুল ইসলাম জানান “লিচু বাগান দেখে আমি আশ্চার্যান্বিত হয়েছি, ক্যাম্পাসে এতবড় লিচু বাগান!” শুধু বাগান নয় , পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে আছে লিচু গাছ । শুধু লিচু নয় আরও আছে বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল । কাঁঠালের ঋতু মধুমাসে যেদিকে চোখ যায় কাঁঠাল চোখে পড়বেই । গাছে কাঁঠালের আধিক্য দেখে মনে হয়, কাঁঠালের ভারে কাঁঠাল গাছ নুয়ে পড়ছে । আরও একটি সুস্বাদু ফল যা ছাড়া আমাদের অনুষ্ঠানগুলো অপূর্ণ থেকে যায়, নারিকেল। নারিকেল গাছগুলো দেখে মনে হয় সেই শিশুকালের ধাঁধা, ” খালে নেই পানি, বিলে নেই পানি, গাছের মাথায় পানি ; বলুন তো কি?” শুধু লিচু আর কাঁঠাল নয়, এ ক্যাম্পাসে প্রায় সব ধরনের দেশীয় ফল পাওয়া যায়। দেশীয় ফলের মাঝে রয়েছে আম জাম, পেয়ারা, বেল, কামরাঙা, জাম্বুরা, সফেদা, আতাফল, লেবু ইত্যাদি । মনে পড়ে যায় সেই কবিতার চরণ” পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করে মুখ। ” প্রাচীন চিকিৎসা বিজ্ঞানের অপরিহার্য উপাদান ওষধি গাছ । কথায় আছে “জানলে ওষধি, না জানলে ভাত রান্নার খড়ি ” । বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রয়েছে অসংখ্য ওষধি গাছ। ওষধি গাছের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল, নিম, আমলকি, হরিতকি, বহেরা, অর্জুন ইত্যাদি। গাছ মানুষকে খাদ্যের পাশাপাশি দেয় কাঠ ও অক্সিজেন । অক্সিজেন প্রাণীকূলের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য উপাদান। আর আসবাবপত্রের জন্য প্রয়োজন কাঠ। এ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ বৃক্ষ আছে যথা, মেহগনি, ইউক্যালিপটাস, শিশু ইত্যাদি । শিশু আজীবন অহংকার করে কারণ সে আজীবন শিশু থেকে যায়; কখনও চুল পাকে না, কখনও বৃদ্ধ হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রয়েছে শোভা বর্ধনকারী উদ্ভিদ; এর মাঝে রয়েছে পাতা বাহারি ও ফুল। পৃরো ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য পাতা বাহারি ও বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ লাগানো হয়েছে । ফুলের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল সূর্যমুখী, শিমুল, গাদা, গোলাপ, মাদারফুল,কৃষ্ণচূড়া ইত্যাদি । যখন কৃষ্ণফুল ফোটে তখন ক্যাম্পাসে দেখে মনে হয় ” কোন শিল্পী যেন তার অপার মহিমা দিয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছে এ ক্যাম্পাসে।
শুধু তাই নয় পুরো ক্যাম্পাসের রাস্তার দুই পার্শ্বে লাগানো হয়েছে পাতা বাহারি গাছ। ক্যাম্পাসের দিকে তাকালে দেখা যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। কোথাও সবুজ ঘাস, কোথাও ফুল বাগান, কোথাও গুল্ম, কোথাও বা সবুজ বৃক্ষ; এ যেন সবুজের আবাসভুমি, এ যেন সবুজেরই ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য আছে বৃহত্তর উটপাখি । এর মাঝে পাখির সকল বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও উড়তে পারে না; এজন্য উটপাখির অাফসোসের সীমা নেই । দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে নির্মল বায়ু গ্রহণের জন্য কেউ বসতে পারে পুকুরপাড়ে; প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায় পুকুরপাড়ে। এ ক্যাম্পাসে আছে বড় দুইটি পুকুর। সূর্যাস্তের সাথে সাথেই নেমে আসে নিস্তব্ধতা, নেই কোন কোলাহল, যানবাহনের হর্ণ বা বাজারের হৈচৈ । এখানে বসে যে কেউ চলে যেতে পারে কল্পনার রাজ্যে, যেভাবে কল্পনার রাজ্যে চলে যেতেন ইংরেজি রোমান্টিক সাহিত্যের কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কোলরীজ; রচনা করেন কালজয়ী কবিতা “টিনটার্ন অ্যাবে”, “দি রাইম অব দি এনসেন্ট মেরিনার”। এ ক্যাম্পাস যেন প্রকৃতির এক অপার করুণা, যে প্রকৃতি জানে না কোন প্রতারণা, কোন ছলনা; শুধু জানে নিজেকে উজাড় করে দান করতে । প্রকৃতির সেই আচরণ দেখে মনে পড়ে যায়,” মোমবাতির মত নিজেকে নিঃশেষ করে অন্যকে আলো দিতে”।