Site icon

দেশি মুরগি উৎপাদন, উন্নয়ন ও সংরক্ষণ প্রকল্পঃ ৫০ নারীর উদ্যোগে হাজারো স্বাবলম্বী

দেশি মুরগি উৎপাদন, উন্নয়ন ও সংরক্ষণ প্রকল্প
মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) :

উন্নত জাতের দেশিয় মুরগি পালন করে নিত্যদিনের অভাবকে বিদায় জানিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার হাজারো আত্মপ্রত্যয়ী গ্রামীন নারী। অল্প পুঁজি ও নামে মাত্র শ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় নারীদের পাশাপাশি বিভিন্ন কৃষি সংগঠনের সদস্যসহ বেকার যুবক-যুবতি ও শিক্ষার্থীরা পার্শ্ব পেশা হিসেবে দেশি মুরগি পালন বেছে নিয়েছেন। তাতেকরে বাড়ছে দেশিয় পদ্ধতিতে উন্নত জাতের দেশি মুরগি পালন।

সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান। আর এটি সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ প্রাণি সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট সাভারের ‘দেশি মুরগি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’র মাধ্যমে। এ প্রকল্পের আওতায় উন্নত জাতের দেশি মুরগি উৎপাদন অঞ্চল-১ এর একটি এলাকা হলো উপজেলার নকলা ইউনিয়নের মধ্য নকলা গ্রাম। ওই গ্রামের ৫০ মহিলা উদ্যোক্তাকে সুফলভোগী হিসেবে নির্বাচন করে তাদেরকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে মধ্য নকলা দেশি মুরগি পালন সমিতি। তাদেরকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাণি সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট হতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। ওই পঞ্চাশ নারীর সফলতা দেখে উপজেলার অন্যান্য এলাকার নারী, পুরুষ, বেকার এমনকি শিক্ষার্থীরাও উদ্বোদ্ধ হচ্ছেন। হাজার হাজার আত্ম প্রত্যয়ী আজ স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন। ইতি মধ্যে অনেকেই সফল হয়েছেন। সরেজমিনে মধ্য নকলা, নকলা, শিববাড়ী, বাড়ইকান্দি, ভূরদী, বানেশ্বরদী ও মোজারসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, উন্নত জাতের দেশি মুরগি পালন করে সবাই বেকারত্ব ও দারিদ্রতাকে বিদায় জানিয়ে আজ অনেকেই স্বাবলম্বী। মধ্য নকলার নারী উদ্যোক্তা শিক্ষার্থী হালিমা ও লাভনী জানায়, পড়া লেখার পাশাপাশি মুরগি পালন আয়ের ভালো একটি মাধ্যম। শিববাড়ীর বৃদ্ধ মহিলা কুলসুম ও সাহিদা বলেন, দেশি মুরগি পালন করতে আলাদা সময় ও খাদ্য সরবরাহ করতে হয়না। মুরগি পালন সমিতির সভাপতি রীনা বেগম জানান, দুই বছর আগে তারা ৫০ জন মিলে নকলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের ‘দেশি মুরগি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’র সহযোগিতায় তিন দিনের প্রশিক্ষণ শেষে নারী উদ্যোক্তাদের কাছে সরবরাহ করা উন্নত জাতের দেশিয় ৮টি মুরগি ও ১ টি মোরগ বাচ্চা দিয়েই তাদের মুরগি পালন শুরু হয়।

বিধবা নারী রোকেয়া, সাহিদা ও মনোয়ারাসহ অনেক উদ্যোক্তার দেওয়া তথ্য মতে, বাচ্চা গুলো ৩ থেকে ৪ মাস বয়সে প্রজনন ক্ষম হয় এবং ডিম দেওয়া শুরু করে। প্রতিটি মুরগি ২৮ থেকে ৩৫ দিন অন্তর বছরে ১১ থেকে ১৩ বার কমপক্ষে ১৮ থেকে ২৫ টি করে ডিম দেয়। তাতে করে প্রতি নারী উদ্যোক্তা বছরে ১হাজার ৫০০ টি থেকে ১ হাজার ৬০০টি ডিম দিয়ে থাকে। বাচ্চা না ফোটিয়ে ডিম বিক্রি করে দিলে ১হাজার ২০০ টাকা থেকে ১হাজার ৪০০ টাকা বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু বাচ্চা ফোটালে এক হাজার থেকে ১হাজার ২০০ টি বাচ্চা উৎপাদন করতে পারেন তারা। দুই মাস বয়সের একটি বাচ্চা ২০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা করে বিক্রি করা যায় বলে তারা জানান। তাদের দেওয়া হিসাব মতে ৯ টি মুরগি পালন করে প্রতি বছর বাচ্চা বিক্রি বাবদ দেড় লাখ টাকা থেকে ২ লাখ টাকা আয় করেন তারা। এখন তারা উপজেলায় মডেলে পরিণত হয়েছে। তাদের আগ্রহ ও সফলতা দেখে বাংলাদেশ প্রাণি সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট সাভারের ‘দেশি মুরগি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’ ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য একটি ইনকিউবেটর দেওয়া হয়। এখন তারা আরো লাভবান হবে বলে মনে করছেন প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ও সুধী জনরা।

তাদের দেখা দেখি ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদন কল্যাণ সংস্থা, অগ্নীবিণা ক্ষুদ্র কৃষক আইপিএম ক্লাবের সব সদস্যরা উন্নত জাতের দেশিয় মুরগি পালন করে সুফল পেতে শুরু করেছেন। ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদন কল্যাণ সংস্থার সদস্য হেলাল, বেলাল, ঈসমাইল, কমল, ছাইয়েদুল, জব্দুল, তাহমিনা বলেন, দেশিয় পদ্ধতিতে উন্নত জাতের দেশি মুরগি অন্যান্য মুরগির চেয়ে অধিক লাভ জনক। এজাতের মুরগি ডিম বেশি দেয়, মাংস বেশি হয় এবং মাংস অন্য মুরগির চেয়ে সুস্বাদু। এসব বিবেচনায় নকলার প্রতিটি গ্রাম গঞ্জে এখন দেশি মুরগি পালন হচ্ছে। প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা, প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে জীবন ধারন করে বলে সংক্রমণ ও পরজীবী সহজে আক্রান্ত করতে পারেনা। ফলে খুববেশি ঔষধ বা ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হয়না। শুধু বাচ্চার ভ্যাকসিন করলেই চলে। তিনি আরও বলেন, অল্প পুঁজি ও স্বল্প শ্রমে যে কেউ ঘড়–য়া পরিবেশে উন্নত জাতের দেশিয় মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। বেকারসহ গ্রামীন বিভিন্ন এলাকার নারী পুরুষকে দেশি মুরগি পালন করতে পরামর্শ সেবা দিচ্ছে প্রাণি সম্পদ অফিস।

 

Exit mobile version