গরীব কৃষকের পাশে
মো. মোশারফ হোসাইন, শেরপুর প্রতিনিধি:
গরীব কৃষকের পাশে : শেরপুরের নকলায় ছোট কৃষক ও বর্গা চাষীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তরুণ ছাত্রলীগ কর্মী আবু হামযা কনক ও তাঁর অনুসারী বিভিন্ন স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী। নভেল করোনা ভাইরাস (কভিট-১৯) এর সংক্রমণ রোধে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ন্যায় শেরপুর জেলাকে অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে সরকারের নির্দেশ মতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন হাজারো কৃষক, দিনমজুর ও অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষ। এদিকে কৃষকের রোপনকৃত বোরো ধান এরইমধ্যে পাকতে শুরু করছে। অপরদিকে দেশের অনেক জেলা উপজেলায় কালবৈশাখীর ছোবলে ক্ষতির সমূখীন হয়ে পড়েছেন কৃষক। উৎপাদিত সোনালী ফসল ঘরে তুলতে দু:চিন্তায় আছেন অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি এ কৃষক সমাজ। বিশেষ করে ছোট-মাঝারী শ্রেণীর কৃষক ও বর্গা চাষীদের চিন্তার কোন অন্ত নেই।
এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জায়গায় দরিদ্র কৃষকের ক্ষেতের ধান কেটে ঘরে তুলে দিতে মাঠে নেমেছে ছাত্রলীগ। এর ধারাবাহিকতায় শেরপুরের নকলায় তরুণ ছাত্রলীগ কর্মী আবু হামযা কনকের নেতৃত্বে একদল ছাত্র অসহায় কৃষকের ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। এ কাজের প্রথম দিন মঙ্গলবার পৌরসভার ধুকুড়িয়া এলাকার মোহাম্মদ আলী নামে ঠেলা চালক বর্গাচাষীর ৫৫ শতাংশ জমির ধান এবং বুধবার গনপদ্দী ইউনিয়নের বিহারীপাড় গ্রামের অসহায় প্রান্তিক কৃষক মোস্তফা মিয়ার ৪০ শতাংশ ও দরিদ্র বর্গাচাষী ফযল মিয়ার ৩৫ শতাংশ জমির ধান কেটে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন। ছোট-মাঝারী শ্রেণীর কৃষক ও বর্গা চাষীদের ধান কাটা, আটি বান্দা ও বাড়িতে পৌঁছে দিতে কনকের সাথে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থী যারা শারীরিক শ্রম দিয়ে অসহায় কৃষকদের সহায়তা করছেন তাদের মধ্যে আল আমীন আহমেদ, সাকিব মিয়া, মেহেদী হাসান, মোশারফ হোসেন, ইউসুফ নবী স্বর্ন, নাঈম ইসলাম, ইয়ামিন, রানা আহমেদ, মারুফ হাসান, জিসান, অর্ণব, তাঈফ হাসান, শাহীন আলম, হৃদয় হাসান, আল আমীন, শাওন, নাজমুল ইসলাম নাঈম, রাজু আহমেদের নাম উল্লেখ করার মতো। ছাত্রলীগ কর্মী আবু হামযা কনক জানান, কৃষক বান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশ ব্যাপী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অসহায় কৃষকদের বোরো ধান কাটা ও বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। শেরপুর জেলা ছাত্রলীগের পরামর্শে আমরা সরকারের এমন উন্নয়ন মূলক নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র কৃষকদের ধান কেটে দিতে মাঠে নেমেছি।
তিনি বলেন, দরিদ্র কৃষক মোহাম্মদ আলী, মোস্তফা মিয়া ও ফযল মিয়ার ধান কাটার মাধ্যমে আমরা এই মিশন শুরু করেছি। এদের মতো অন্য কোন এলাকার দরিদ্র কৃষক যদি শ্রমিক সংকট ও দারিদ্রতার কারনে তাদের জমির ধান কাটতে সমস্যায় পড়েন, তাহলে আমরা ওই সকল কৃষকের জমির ধান কেটে তাদের বাড়ি পৌঁছে দিতে সদা প্রস্তুত আছি। তাদের এ ধানকাটা কর্মসুচি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। দরিদ্র কৃষক মোহাম্মদ আলী আবেগ জড়িত কণ্ঠে জানান, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সহায়তায় জমির পাকা ধান ঘরে তুলতে পেরে তারা খুব খুশি ও স্বস্থি ফিরে পেয়েছেন। তারা জানান, আজ যদি কনকের নেতৃত্বে একদল ছাত্র তাদের ধান কেটে না দিতেন তাহলে হয়তোবা ধান মাঠেই থেকে যেতো। তিনি বলেন, আমি ক্ষেতের পাকা ধান কাটা নিয়ে খুব দু:চিন্তায় ছিলাম। হঠাৎ একদল ছেলে আমার ক্ষেতের ধান কেটে দেয়ার কথা বললে আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি। পরে তাদের কথায় রাজি হওয়ায় তার জমির পাকা ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছেদেন ছাত্ররা। কৃষক মোস্তফা মিয়া ও ফযল মিয়া জানান, সকাল থেকে শেষ বিকেল পর্যন্ত ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন এসব ছাত্ররা। তবে এর বিনিময়ে তাদেরকে কিছু খাওয়াতেও পারিনি।
এবছর একদিকে করোনা ভাইরাস এবং অন্যদিকে আগাম কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ার আশংকায় খুব দু:চিন্তাগ্রস্থ থাকা এসব কৃষকরা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সহায়তায় ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে পেরে খুবই খুশি হয়েছেন। দূর্যোগকালীন সময়ে এমন সহায়তার হাত বাড়ানোর জন্য ছাত্রলীগ নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা ও দোয়া জানান অসহায় সুবিধাভোগী এ সকল কৃষক। “কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ” এ শ্লোগানকে মনে প্রাণে ধারন করে নকলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ছাত্ররা চলতি মৌসুম ব্যাপী ধান কাটা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে জানান ছাত্র সংগঠক আবু হামযা কনক। কনক আরও জানান, তার নিজস্ব অর্থায়নে উপজেলার তিন শতাধিক কর্মহীন দরিদ্র পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। ছাত্রলীগের এমন মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নকলার তরুণ ছাত্রলীগ কর্মী আবু হামযা কনক ও তাঁর অনুসারী ছাত্রদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাসসহ কৃষি ও কৃষক বান্ধব অনেকে।