নার্সারি দিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন সিতাব উদ্দিন। মাত্র ৬ শতক জমিতে ফলজ উদ্ভিদ চাষের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল তার স্বপ্নযাত্রা। আজ তার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। মাত্র দেড় যুগের ব্যবধানে তার নার্সারির জমির পরিমাণ এখন ১৫০ বিঘা। তিনি সেই জমিতে ফলজ উদ্ভিদ ছাড়াও ভেষজ, বনজ, মশলাজাতীয় উদ্ভিদের চাষ করছেন। শূন্য থেকেই পরিশ্রম আর প্রচেষ্টায় তিনি এখন সফল নার্সারি ব্যবসায়ী। পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি গোল্ড মেডেল।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ বাজারসংলগ্ন তার প্রতিষ্ঠিত অঙ্কুর নার্সারিতে বসে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। গাড়াগঞ্জের হাজী শমসের আলীর ছেলে সিতাব উদ্দিনের পুরো নাম সিতাব উদ্দিন আল আজাদ। চার ভাই এক বোনের মধ্যে সে মেজো। ৪৫ বছরের সিতাব জানান, ঝিনাইদহ কেসি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাসের পর এলাকায় কোচিং সেন্টার খোলেন। সেখানে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেন। এরপর কালীগঞ্জ সুগার মিলে চাকরি পাওয়ায় সেখানে যান। মিলে ইক্ষুর চারা পলিথিনের বেডে রাখার পর যে পলিথিন বেঁচে যেত যা ফেলে দেয়া হতো। সেই বেঁচে যাওয়া পলিথিন কাজে লাগানোর কথা চিন্তা করেই নার্সারির কথা ভাবেন তিনি। বাড়ির পাশে মাত্র ৬ শতক জমির ওপর তিনি পেয়ারাসহ কয়েক জাতের ফলজ গাছ রোপণ করেন সেসব পলিথিন ব্যাগে। দেড় বছরের মাথায় ১ বিঘা জমিতে ফলজ বাগান করেন তিনি। ভালো লাভ হওয়ায় পর্যায়ক্রমে তিনি নার্সারির জমি বাড়াতে থাকেন। এলাকায় সিতাব উদ্দিনের অঙ্কুর নার্সারির সুনাম ছড়াতে থাকে। তার নার্সারিতে ভালো মানের চারা পাওয়ায় ক্রেতার সংখ্যাও দিন দিন বাড়তে থাকে। ১৯৯১ সালে যে নার্সারির ব্যবসা তিনি শুরু করেন মাত্র ৬ বছরের মাথায় সেই নার্সারি পায় জাতীয় স্বীকৃতি। ১৯৯৭ সালে সফল নার্সারি ব্যবসায়ী ও বৃক্ষরোপণে অবদানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত জাতীয় স্বর্ণপদক পুরস্কার পেয়ে যান। এরপর মাদার তেরেসাসহ বেশ কয়েকটা সংগঠনের দেয়া স্বর্ণপদক পান সফল নার্সারি ব্যবসায়ী হিসেবে সিতাব।
তিনি নার্সারি ধীরে ধীরে পাশের চন্ডিপুর, বেণীপুর, কাচেরকোল, বিত্তিপাড়া, কুষ্টিয়া জেলার পান্টিনগর কেয়া, যশোরের চৌগাছা চাকলাতে সম্প্রসারণ করেন। বর্তমানে তার ৯০ বিঘা জমিতে নার্সারি আর ৬০ বিঘা জমিতে বাউকুলের চারা রয়েছে। শতাধিক শ্রমিক এখন তার নার্সারিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সিতাবের নার্সারিতে ফলজ, বনজ, ভেষজ গাছ ছাড়াও শৌখিন মূল্যবান গাছগাছালি পাওয়া যায়। এসবের মধ্যে সাইকাস, এরিকা পাম, ক্রিস্টমাস ট্রি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ফলজ গাছের মধ্যে বাউকুল, আপেলকুল, বেদানা লিচু, মিষ্টি জলপাই, কামরাঙা, লটকন, স্ট্রবেরি, আম্রপলি উল্লেখযোগ্য। রয়েছে সুগন্ধি আগর গাছ ও যাবতীয় মশলা গাছ। বনজ বৃক্ষের মধ্যে মেহগনি, সেগুন, আকাশমনিসহ কয়েক প্রজাতির গাছ রয়েছে। তিনি প্রতি বছরই সরকারি-বেসরকারি সংগঠন প্রতিষ্ঠানকে ফ্রি চারা দেন। সংসার জীবনে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। ছেলে সাদ আহমেদ অনার্সে আর মেয়ে সোনিয়া আফরিন দশম শ্রেণীতে লেখাপড়া করছেন। সুত্রঃ আলোকিত বাংলাদেশ