পবিপ্রবিতে বিলুপ্তপ্রায় বঁইচি ফলের নতুন জাত উদ্ভাবন

বিলুপ্তপ্রায় বঁইচি

বিলুপ্তপ্রায় বঁইচি
মোঃ ইমরুল কায়েস,পবিপ্রবি
বিলুপ্তপ্রায় বঁইচি : শহুরে জীবনে অপরিচিত হলেও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি জনপ্রিয় ফল কাঁটাবহরী বা বঁইচি। গ্রামগঞ্জে সাধারনত খেতের পাশে ঝোপঝাড়ে বঁইচি বেশি জন্মায়। অনেক সময় পাহাড়ের ঢালেও জন্মে। গাছ ঝোপালো এবং গাছের শাখা কাটাযুক্ত । এ কারনে বঁইচি কাটাবহরী নামেও পরিচিত। বর্তমানে বন উজাড় হওয়ায় গাছটি বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায়। সাধারনত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বঁইচি গাছে ফুল ধরে। পাঁচ পাপড়িযুক্ত ক্ষুদ্রাকৃতির ফুল। জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে ফল পাকতে শুরু করে। কাঁচা ফল গোলাকার সবুজ। পাকলে রক্ত বেগুনি রং ধারন করে। দেখতে অনেকটা কালো জাম ফলের মত দেখায়। গোলাকার আঙ্গুরের মতো বঁইচি খেতে অম্ল ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত। বৈজ্ঞানিক নাম Slacourtia indica , পরিবার Slacourtiaceae । ইংরেজি নাম governor’s plum । বঁইচি গাছের মূলের রস নিউমোনিয়া এবং পাতার নির্যাস জ¦র, কফ ও ডাইরিয়া নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। পাতা ও মূল অনেকে সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করে। বাকলের অংশ তিলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে বাতের ব্যথা নিরাময়ে মালিশ তৈরি করা হয়। কিন্তু জনপ্রিয় এই ফল এখনো বানিজ্যিকভাবে এর বাজারজাত শুরু হইনি। প্রচুর পুষ্টি ও ঔষধিগুন সমৃদ্ধ এই ফলগাছ রক্ষায়ও কোন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হইনি। এই গাছ রক্ষা ও এর জীববৈচিত্র রক্ষায় তেমন কোন গবেষনাও হইনি।


বঁইচি নিয়ে দেশে ব্যাপক-বিস্তৃত কোন গবেষনা না হলেও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব রব্বানী আট বছর ধরে বঁইচি ফল নিয়ে নানা ভাবে গবেষনা চালাচ্ছেন। সম্প্রতি এটাকে কৃষি মন্ত্রনালয় থেকে অনুমতি দিয়েছে। কৃষি মন্ত্রনালয়ের অধিনে জাতীয় বীজ বোর্ড পিএসটিইউ বঁইচি-১ নামে এই ফলের অনুমোদন দিয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় গুরুত্বপূর্ন ফল বঁইচি। বঁইচি ফল বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মে থাকে। অবহেলা, অযতœ এবং নির্বিচারে কর্তন ইত্যাদির কারনে বঁইচি ফলটি অনেকটা বিলুপ্তির পথে। গবেষনায় দেখা গেছে এ ফলের পুরুষ এবং স্ত্রী দুই ধরনের গাছ রয়েছে। জোড় কলম এবং শাখা কলমের মাধ্যমে স্ত্রী গাছের বংশবিস্তার করে দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ফল পাওয়া সম্ভব। বাজারে এই ফলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কারন এতে আছে ভিটামিন, মিনারেল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট। কৃষি মন্ত্রনালয় থেকে এই ফলের অনুমোদন দিয়েছে, আগামী বছর থেকে এটিকে আমরা কৃষকের মাঝে বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে দিতে পারবো।


বর্তমানে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে ১০ টি মাতৃগাছ, ৫০ টি জোড় কলম এবং ২০০ এর অধিক চারা আছে। এই বঁইচি গবেষনার সাথে জড়িত আছে পিএইচডি শিক্ষার্থী চিত্র রঞ্জন সরকার এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সুস্মিতা বড়াল । তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে বাহ্যিক বৈশিষ্ট, পুষ্পায়ন এবং ফল ধারনের বৈশিষ্ট্যাবলী শনাক্ত সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান নির্নয় করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে ডিএনএ পর্যায়ে শনাক্তকরন কাজ চলমান আছে।##
মোঃ ইমরুল কায়েস, পবিপ্রবি প্রতিনিধি
মোবাঃ-০১৭০৭৬৩২৮৫২

Advisory Editor

Advisory Editor of http://www.krishisongbad.com/

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *