কৃষিবিদ জাহেদুল আলম রুবেল
ফলন বাড়াতে কৃষি জমিতে তিন ধরনের সার আলাদা করে ব্যবহার করতেন কৃষকরা। ধান আবাদে অত্যবশকীয় ১৬ খাদ্য উপাদানের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে নাইট্রোজেন, ফসফরাস আর পটাশ সার প্রধান সার হিসেবে বিবেচিত। এ তিনটি রাসায়নিক কৃষক আলাদা করে কৃষিজমিতে ব্যবহার করে থাকেন। যা আবাদী জমির উর্বরতা বাড়াতে মাটির উপরিভাগে প্রয়োগ করতে হয়। তিনটি প্রয়োজনীয় সার আলাদা করে গুড়া সার ব্যবহারের ফলে সারের ঘাটতি দেখা দেয়। গুড়া সার মাটির উপরিভাগে প্রয়োগের ফলে ২০/৩০ ভাগ সার অপচয় হয়। এতে কৃষকের আর্থিক ক্ষতি ও কৃষি জমির উর্বরতা বাড়াতে গুড়া সার শতভাগ কার্যকরী হয়না।
কৃষি বিভাগের গবেষণায় নাইট্রোজেন, ফসফরাস আর পটাশ সার সম্বয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবিত গুটি সার (মিশ্র সার এনপিকে) আবাদী জমির মাটিতে পুঁতে দিলে তা সরাসরি মাটির উর্বরতার জন্য বিশেষ সহায়ক। এতে মাটিতে পুঁতে দেওয়া গুটি সারের ঘাটতি কমিয়ে কার্যকরভাবে মাটির উর্বরা শক্তি বাড়ায়। ফলে গাছের চারা সহজেই শিকড় দিয়ে সুষম খাদ্য আহরণ করতে পারে। এ ছাড়া কৃষি জমির আগাছা বিস্তারে গুটি সার প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে। ফলে ধান ও সবজি আবাদে ফলন বাড়ছে।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়াসহ উপকূলীয় এলাকায় ধান আবাদ ও সবজি আবাদে ১৫ থেকে ২০ ভাগ ফলন বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন মিশ্র সারের গুটি ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে উপকূলীয় মঠবাড়িয়া উপজেলার ১১ ইউনিয়নে কৃষকরা গুড়া সারের পরিবর্তে তিনটি সারের মিশ্র গুটি ব্যবহার করে সফলতা পাচ্ছে। কৃষকরা ফলনে সুফল পাওয়ায় গুটি সার ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। প্রতি বছর সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকা সারে ভর্তুকি দিচ্ছে। এতে প্রতিকেজি সারে সরকারকারকে ৪০/৫০টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। সারের অপচয়, ঘাটতি ও কৃষি জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধির সাশ্রয়ী সার উতপাদন ও তার ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষে ইউএসএআইডির অর্থায়নে আপি প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০১০ সালের অক্টোবর থেকে গুটি সার উতপাদন ও তা ব্যবহার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে।
এ প্রকল্পের মনিটরিং অফিসার মো. শাহীদুর রহমান জানান, এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিনিটি স্বংক্রিয় মেশিন স্থাপন করে গুটি সার উৎপাদন পরবর্তী মঠবাড়িয়া উপজেলার ২৮টি সেলস পয়েন্ট থেকে সরাসরি কৃষকের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ বছর ২০০ টন গুটি মিশ্র সার কৃষকরা সংগ্রহ করে তা আবাদী জমিতে ব্যবহার করছেন। দুই আকারের গুটি সারের মধ্যে মিশ্র গুটি সার প্রতি কেজি ২৫ টাকা ও সাদা ইউরিয়া সারের গুটি ১৮ থেকে ১৯ টাকা কেজি দরে কৃষক কিনছেন। এই সার কার্যকরভাবে প্রয়োগে এ যাবত মঠবাড়িয়ার ১১ ইউনিয়নের ১৬ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ সহায়তাও দেওয়া হয়েছে।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মঠবাড়িয়া উপজেলার মঠবাড়িয়া সদর, টিকিকাটা, গুলিসাখালী,তুষখালী, বড়মাছুয়া, বেতমোর ও সাপলেজা ইউনিয়নের ৮০ থেকে ৯০ ভাগ কৃষক এনপিকে গুটি সার ব্যবহার করে আসছেন। উপজেলার টিকিকটা ইউনিয়নের বয়াতিরহাট গ্রামের শতভাগ কৃষকই এ মিশ্র গুটি সার ব্যবহার করে আসছেন।
স্থানীয় কৃষক মো. জলিল ঘরামী বলেন, মিশ্র গুটি সার সহজেই আবাদী জমিতে পুতে দেওয়ায় সারের কোন ঘাটতি হযনা। ফলে জমির উর্বরা শক্তিও বৃদ্ধি ঘটে সহজে। ধান আবাদের পাশাপাশি নানা জাতের সবজি,সুপারী ও নারিকেল আবাদে গুটি সার যথেস্ট কার্যকরী । এ সার ব্যবহারে আগের তুলনায় ফল বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কৃষকদের কাছে গুটি সার গুরত্ব পাওয়ায় এর ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ বিষয়ে মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, সারের ঘাটতি মোকাবেলার পাশপাশি মিশ্র গুটি সার জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি সহায়ক। এ সার মাটির তলদেশে পুঁতে দেওয়ায় মাটির উপরিভাগের আগাছা বিস্তার রোধ করে থাকে। সংগত কারনে গুটি সার ব্যবহারের ফলনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সারটি ধান আবাদের পাশাপাশি সবজি আবাদেও বিশেষ কার্যকর। মিশ্র গুটি সার উপকূলের কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম