Site icon

ফ্রান্সের আর্ন্তজাতিক প্রশিক্ষণ পেলেন ৯০ জন বাংলাদেশি প্রাণি চিকিৎসক

 বাংলাদেশি প্রাণি চিকিৎসক

কৃষি সংবাদ ডেস্কঃ

বাংলাদেশি প্রাণি চিকিৎসক ঃ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ খাতের অন্যতম উপখাত হিসাবে পোল্ট্রি শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান আমিষের চাহিদা পূরণে পোল্ট্রি শিল্পের ভূমিকা অনস্বীকার্য।  বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৭০ হাজার ছোট-বড় পোল্ট্রি খামার রয়েছে যার সাথে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।  দেশের মোট মাংসের চাহিদার ৪০-৪৫ শতাংশ আসে পোল্ট্রি শিল্প থেকে।  ডিম এবং মাংস সরবরাহের মাধ্যমে দেশের প্রোটিন ঘাটতি পূরণে পোল্ট্রিখাতের অবদান সর্বজনবিদিত। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই শিল্প  প্রায়শঃই সম্মুখীন হচ্ছে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির যার মধ্যে রোগ-বালাই অন্যতম।  পোল্ট্রির বিজ্ঞানসম্পন্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, সঠিকভাবে রোগবালাই নির্ণয়, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে ২০১৬ সাল থেকে তিন বছর মেয়াদে পোল্ট্রির রোগের উপর বাংলাদেশের ৯০ জন প্রাণিচিকিৎসককে আর্ন্তজাতিক উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিয়েছে ফান্স।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রাণী স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের সেভা সান্তে এনিমালি (সেভা) ও বিশ্বের সুপ্রাচীন প্রাণিচিকিৎসা বিষয়ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফ্রান্স ন্যাশনাল ভেটেরিনারি স্কুল (এনভা) এর সাথে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) এর এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের মেডিসিন এন্ড পাবলিক হেলথ বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়িত ৩য় বারের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম  এবছরের জুলাই মাসে শুরু হয়ে অক্টোবর মাসে সমাপ্ত হয়।  তিন বছরের জন্য স্বাক্ষরিত এ চুক্তির আওতায় রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের মেডিসিন এন্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের মাধ্যমে প্রতি বছর  সারা দেশের ভেটেরিনারিয়ানদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে চার মাসে চার সপ্তাহব্যাপী এ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তিন সেশনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে কর্মরত পোল্ট্রি রোগ সংশ্লিষ্ট ২৪ জন ভেটেরিনারিয়ান, বেসরকারি খাতে কর্মরত পোল্ট্রি রোগ সংশ্লিষ্ট ৪৮ জন ভেটেরিনারিয়ান এবং সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করা কিন্তু পোল্ট্রি রোগ বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও ক্যারিয়ার গঠনে আগ্রহী ১৮ জন নির্বাচিত ভেটেরিনারিয়ান প্রশিক্ষণ লাভ করেন। সেভা’র পক্ষ থেকে ভেটেরিনারি স্কুল অফ প্যারিসের আন্তর্জাতিকভাবে প্রসিদ্ধ প্রশিক্ষকগণ প্রশিক্ষণার্থীদেরকে সরাসরি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তিন বছর মেয়াদে বাস্তবায়িত এই প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে শেকৃবির এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন প্রফেসর ডঃ মোঃ মোফাজ্জল হোসাইন এবং প্রোগ্রাম ইন চার্জ হিসেবে মেডিসিন এন্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. কে, বি, এম, সাইফুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করেন।

গত ২৫ অক্টোবর ট্রেনিং লজিস্টিক সাপোর্ট প্রোভাইডার এসিআই এগ্রিবিজনেস কর্তৃক তেজগাওস্থ এসিআই সেন্টারে আয়োজিত এক জাকজমকপূর্ণ সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সফল্ভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাণিচিকিৎসকদের  মধ্যে উক্ত প্রশিক্ষণের সনদ বিতরণ করা হয়। এসিআই এগ্রিবিজনেস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফ, এইচ আনসারীর সভাপতিত্বে এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) এর মেডিসিন এন্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ট্রেনিং প্রোগ্রাম ইন চার্জ  ড. কে, বি, এম, সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব কাজি  ওয়াসিউদ্দিন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেকৃবির পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিন অধ্যাপক ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাস, এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মোঃ মোফাজ্জল হোসাইন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মোঃ রেজাউল করিম, ফরাসি ভেটেরিনারি স্কুল (এনভা) এর কন্টিনিউয়াল এডুকেশনের প্রধান প্রফেসর ড. কারিম আদযু, সেভা সান্তে এনিমালি ফ্রান্সের টেকনিক্যাল ম্যানেজার  প্রফেসর ড. মুন্সেফ বউযুইয়া, প্রজেক্ট ম্যানেজার ড. ম্যারি ডুক্রোটয়।  অনুষ্ঠানে গেস্ট অফ অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলে্ন ফ্রান্স এম্বাসি বাংলাদেশের ডেপুটি হেড অফ মিশন, পলিটিক্যাল এন্ড কালচারাল এফেয়ার মি. এফজি টেকো।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন বাংলাদেশের জলবায়ুসহ সার্বিক পরিবেশ পোল্ট্রি চাষে উপযোগী বিধায় এ সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে এই শিল্পকে অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে।  বর্তমানে এ শিল্পে বিনিয়োগ ৩০ হাজার কোটি টাকার উর্ধ্বে হলেও পোল্ট্রির রোগবালাই চিকিৎসা ও প্রতিরোধ এবং আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তির অভাবে বারবার হোচট খাচ্ছে দেশের গুরুত্বপুর্ণ এই শিল্প।  সুস্থ-সবল ও নীরোগ পোল্ট্রি শিল্প নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের গুরুত্বপুর্ণ এই শিল্প।রক্ষার্থে আয়োজিত এ ধরনের প্রশিক্ষণ নি:সন্দেহে পোল্ট্রি সেক্টরকে অনেক সমৃদ্ধ করবে।  দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়ার লক্ষ্যে এধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি ধারাবাহিকভাবে করা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

ট্রেনিং প্রোগ্রাম ইন চার্জ ড. কে, বি, এম, সাইফুল ইসলাম জানান ২০১৬ সালের ২২ জুন বাংলাদেশের প্রাণি চিকিৎসকদের পোল্ট্রির বিজ্ঞানসম্পন্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, সঠিকভাবে রোগবালাই নির্ণয়, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের উচ্চতর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ ও উন্নত জনশক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে ফ্রান্সের শীর্ষস্থানীয় প্রাণীস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সেভা সান্তে এনিমালি (সেভা) এবং ফ্রান্স ন্যাশনাল ভেটেরিনারি স্কুল (এনভা) এর সাথে তিন বৎসর মেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে শেকৃবি’র এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ।  স্বাক্ষরিত এ চুক্তির আওতায় শেকৃবি’র মেডিসিন এন্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের মাধ্যমে গত তিন বৎসর যাবত সারাদেশের ভেটেরিনারিয়ানদের মধ্য থেকে প্রতিবছর নির্বাচিত ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থীকে চার সপ্তাহব্যাপী এ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।  এ বছর তৃতীয়বারের মত এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হলো।  সফলভাবে প্রশিক্ষণ সমাপ্তকারী ভেটেরিনারিয়ানগণ দক্ষ জনশক্তি হিসেবে পোল্ট্রি শিল্পকে লাভজনক করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।  তিনি আরো জানান, এ ধরণের প্রোগ্রাম স্থানীয় একাডেমিক প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে ভেটেরিনারি শিক্ষাকে সামনে এগিয়ে নিবে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভেটেরিনারিয়ানদের পোল্ট্রির রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের জ্ঞান, দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

সনদ বিতরণী অনুষ্ঠানে সফলভাবে প্রশিক্ষণ সমাপ্তকারী  প্রাণিচিকিৎসদের সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন শেকৃবি’র বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, সেভা সান্তে এনিমালি ফ্রান্সের বাংলাদেশি বিজনেস পার্টনার ও ট্রেনিং লজিস্টিক সাপোর্ট প্রভাইডার এসিআই এগ্রিবিজনেস এর বিজনেস ম্যানেজার ডা. মোঃ মইনুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দসহ মিডিয়ায় কর্মরত ব্যাক্তিবর্গ।

Exit mobile version