কৃষি শিক্ষার অন্যতম বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বাকৃবিতে স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা

বাকৃবি
আবুল বাশার মিরাজ, বাকৃবি থেকে:

রাজধানী ঢাকা থেকে ১২০কিলোমিটার উত্তরে ও ময়মনসিংহ শহর থেকে ৪ কিলোমিটার অদূরে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম বিদ্যাপীঠ জাতীয় ও আন্ত-জার্তিকভাবে স্বীকৃত ও গৌরবমন্ডিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। ১৯৬১ সালের ১৮আগষ্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বাংলাদেশে কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির মাঝেই নিহিত রয়েছে গোটা জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হরতাল অবরোধের মধ্যে ও পুরোদমে ক্লাস-পরীক্ষা-অ্যাসাইনমেন্ট চলে। এখানকার শিক্ষার্থীদের চাকুরীর জন্য রয়েছে অবারিত সুযোগ এছাড়া এখান থেকে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী বিসিএস (টেকনিক্যাল) ক্যাডার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা স্কলারশীপ সহ অনেক সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। প্রকৃতিকন্যা খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পূনাঙ্গ আবাসন ব্যবস্থা ও করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২টি ইনস্টিউট, ৬টি অনুষদ ও ৪৩টি বিভাগ রয়েছে।স্নাতক,স্নাতকোত্তর  ও পিএইচডিসহ উত্তীর্ণ মোট গ্রাজুয়েট সংখ্যা ৪২,১৩৭ জন। বর্তমানে অধ্যায়নরত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬,০৭৫ জন।

ক্যাম্পাসঃ বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর ক্যাম্পাস এটি যা ১২০০একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। ক্যাম্পাসের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ।

ভৌত অবকাঠামোঃ ছয়টি অনুষদীয় ভবন, দুটি প্রশাসনিক ভবন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ছাত্রদের জন্য নয়টি ও ছাত্রীদের জন্য চারটি হল, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ভবন, কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, দুই হাজার আসন বিশিষ্ট আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তন, জিমনেসিয়াম, স্টেডিয়াম, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রকৌশল ভবন, অতিথি ভবন, ক্লাব ভবন, শিক্ষকদের আবাসিক ইউনিট, ১০টি ফার্ম, ফিল্ড ল্যাব, ক্লিনিক, ওর্য়াকশপ, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জার্মপ্লাজম সেন্টার, শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মরণে নির্মিত বধ্যভূমি, বিজয়’ ৭১, মরণসাগর, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চত্বর সহ দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিউট (বিনা) এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিউট (বিএফআরআই) এই ক্যাম্পাসে অবস্থিত।

গৌরবের বিষয়সমূহ ঃ

জার্মপ্লাজম সেন্টারঃ ফলের অন্যন্যা সংগ্রহশালা, এটি গবেষনায় বিশ্বের মধ্যে প্রথম এবং আয়তনে দ্বিতীয়। প্রায় ১১হাজার ফলের প্রজাতি নিয়ে গড়ে ওঠেছে জার্মপ্লাজম সেন্টারটি প্রায় শতাধিক ফলের নতুন জাত আবিষ্কার করেছে।

কৃষি জাদুঘরঃ প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত এই মিউজিয়ামটি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র কৃষি মিউজিয়াম।

মৎস্য জাদুঘর ঃ ‘বায়ো-ডাইভারসিটি সেন্টার’ বিচিত্র প্রজাতির মাছ, সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণের দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় ফিশ মিউজিয়াম এটি।

কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীঃ কৃষি বিষয়ক বই সংগ্রহের বিচারে এশিয়ার বৃহত্তম লাইব্রেরি। পুস্তক সংখ্যা প্রায় ২লক্ষ ১২ হাজার। তিন তলা বিশিষ্ট এই ভবনে একটি সাইবার কক্ষ রয়েছে।
বোটানিক্যাল গার্ডেনঃ বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ প্রজাতির সংরক্ষণের দিক থেকে বাংলাদেশের এক নম্বর এটি। দুষ্পাপ্য গাছ-গাছালির সংগ্রহ নিয়ে ২৫ একর জায়গা জুড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠেছে সমৃদ্ধ বোটানিক্যাল গার্ডেনটি।

ভেটেরিনারি ক্লিনিকঃ প্রশিক্ষণ, পশু চিকিৎসা সেবা প্রদানের দিক থেকে বাংলাদেশের অন্যতম পশু চিকিৎসালয়। প্লান্ট ডিজিজ ক্লিনিক, উদ্ভিদের রোগ নির্ণয়, গবেষণার কাজে ব্যবহৃত এই ক্লিনিক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম উদ্ভিদ চিকিৎসালয়।

গবেষণাঃ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) অধীনে বর্তমানে অগ্রসরমান গবেষণা প্রকল্পের সংখ্যা ২৬২।

শিক্ষাতিরক্ত কার্যক্রমঃ ছাত্র বিষয়ক বিভাগের তত্ত্বাবধানে ছাত্র শিক্ষক ক্রেন্দ্র ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। ক্রীড়া প্রশিক্ষণ বিভাগের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন ক্রীড়া কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন হল সংসদ এবং রোভার স্কাউটের প্রতিনিধিত্বমূলক নেতৃত্ব ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীল শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। প্রতিবছর ১৮ আগষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এ যাবত ৭টি সমাবর্তম অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রশিক্ষণঃ গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিউটের (জিটিআই) মাধ্যমে চাকরি পূবকালীন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ও শিক্ষর্থীদেও প্রশিক্ষণ ও সংক্ষিপ্ত কোর্স আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (বিমক) আর্থিক সহায়তায় দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অফিসারদের ফাউন্ডেশন ট্রেনিং প্রদান করা হচ্ছে। এ যাবত প্রশিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩,৮৫৫।

জনসংযোগ ও প্রকাশনা কার্যক্রম ঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূতি সমুজ্জলকল্পে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম ও অণুষ্ঠানের উপর ভিত্তি কওে আধুনিক গণযোগাযোগ, সাংবাদিকতা, আলোকচিত্র এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট সংক্রান্ত সার্বক্ষণিক প্রচার, যোগাযোগ, বিভিন্ন মুদ্রণ ও প্রকাশনা এবং প্রটোকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে।

উল্লেখযোগ্য সাফল্য ঃ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক শস্যের জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এগুলোর মধ্যে বাউ-৬৩, বাউকুল, বাউধান-২, নামে উফশী ধান জাত- সম্পদ ও সম্বল, বাউ-এম/৩৯৫, বাউ-এম/৩৯৬ নামে ৪টি উফসি সরিষা জাত, ডেভিস, ব্র্যাগ, সোহাগ, জি-২ ও বিএস-৪ নামে ৫টি সয়াবিন জাত, কমলা সুন্দরী ও তৃপ্তি নামে আলুর জাত, লতিরাজ, বিলাসী ও দৌলতপুরী নামে তিনটি মুখীকচুর জাত, কলা ও আনারস উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি, রাইজোবিয়াম জৈব সার উৎপাদন প্রযুক্তি, সয়েল টেস্টিং কিট, পেয়ারা গাছের মড়ক নিবারণ পদ্ধতি, বীজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সহজ পদ্ধতি, অ্যারোবিক পদ্ধতিতে ধান চাষ প্রযুক্তি, শুকানো পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ, পশু খাদ্য হিসেবে ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধির কলাকৌশল। আফ্রিকান ধৈঞ্চার অঙ্গজ প্রজনন, এলামনডা ট্যাবলেট, আইপিএম ল্যাব বায়োপেস্টিসাইড, বিলুপ্তপ্রায় শাকসবজি ও ফলের জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ ও মলিকুলার বৈশিষ্ট সনাক্তকরণ কলাকৌশল, মোরগ-মুরগীর রাণীক্ষেত রোগ ও ফাউলপক্সের প্রতিষেধক টিকা উৎপাদন, হাঁসের প্লেগ ভ্যাকসিন ও হাঁস-মুরগির ফাউল কলেরার ভ্যাকসিন তৈরি, রাণীক্ষেত রোগ সহজেই সনাক্তকরণে মলিকুলার পদ্ধতির উদ্ভাবন, মুরগীর স্যালমোনোসিস রোগ নির্ণয় প্রযুক্তি, হাওর এলাকায় হাঁস পালনের কলাকৌশল, কমিউনিটি ভিত্তিক উৎপাদনমুখী ভেটেরিনারি সেবা, গবাদিপশুর ভ্রুণ প্রতিস্থাপন, ছাগল ও মহিষের কৃত্রিম প্রজনন, কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহৃত ষাঁড়ের আগাম ফার্টিলিটি নির্ণয়, গাভীর উলানফোলা রোগ প্রতিরোধ কৌশল, হরমোন পরীক্ষার মাধ্যমে গরু ও মহিষের গর্ভ নির্ণয়, সুষম পোল্ট্রি খাদ্য, গো-খাদ্য হিসেবে খড়ের সঙ্গে ইউরিয়া-মোলাসেস ব¬ক ব্যবহার, হাঁস-মুরগির উন্নত জাত উৎপাদন, কৃষি অর্থনীতি বিষয়ে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন অনুসন্ধানী গবেষণা তৎপরতার মাধ্যমে টেকসই শস্যবীমা কার্যক্রম, ক্ষুদ্র সেচ কার্যক্রমের উন্নয়ন, পশুসম্পদ উপখাত ও ডেয়রি উৎপাদনের উন্নয়ন, স্বল্প ব্যয়ে সেচনালা তৈরি, উন্নত ধরনের লাঙ্গল ও স্প্রে মেশিন, বাকৃবি জিয়া সার-বীজ ছিটানো যন্ত্র, সোলার ড্রায়ার, উন্নত ধরনের হস্তচালিত টিউবয়েল পাম্প, জ্বালানি সাশ্রয়ী উন্নতমানের দেশি চুলা, মাগুর ও শিং মাছের কৃত্রিম প্রজননের কলাকৌশল, ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি, খাচায় পাঙ্গাস চাষ, পেরিফাইটন বেজড মৎস্যচাষ, দেশি পাঙ্গাসের কৃত্রিম প্রজনন, ডাকউইড দিয়ে মিশ্র মৎস্যচাষ, মাছের জীবন্ত খাদ্য হিসেবে টিউবিফিসিড উৎপাদনের কলাকৌশল, পুকুরে মাগুর চাষের উপযোগী সহজলভ্য মৎস্যখাদ্য তৈরি, শুক্রাণু ক্রয়োপ্রিজারভেশন প্রযুক্তি, স্বল্প ব্যয়-মিডিয়ামে ক্লোরেলার চাষ, মাছের পোনা পালনের জন্য রটিফারের চাষ, মাছের রোগ প্রতিরোধকল্পে ঔষধি গাছের ব্যবহার এবং মলিকুলার পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছের বংশ পরিক্রম নির্ণয়, তারাবাইম, গুচিবাইম ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজনন, ধানক্ষেতে মাছ ও চিংড়ি চাষ, পুকুরে মাছ চাষ, সহজলভ্য মাছের খাদ্য তৈরি, একোয়াপনিক্সের মাধ্যমে মাছ এবং সবজি উৎপাদন, মাছের বিকল্প খাদ্যের জন্য ব্লাক সোলজার ফ্লাই চাষ এবং কচি গমের পাউডার উৎপাদন, শুকনো পদ্ধতিতে বোরো ধানের প্রযুক্তিসহ নানা উদ্ভাবন ও আবিষ্কার।

লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *