Site icon

বানিজ্যিক ভাবে বারোমাসি সজিনা চাষের সম্ভাবনা

বারোমাসি সজিনা

মো. মোশারফ হোসেন, শেরপুর প্রতিনিধি:

বারোমাসি সজিনা ঃ শেরপুরের নকলা উপজেলায় বারোমাসি সজিনা ডাটা চাষের গভীর সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসের মৌসুমী সবজি সজিনা ডাটা এখন নকলায় সারা বছরই পাওয়া যাচ্ছে। অসময়ে এ সুস্বাদু সজিনা হওয়ায় চাষীরা ভালো দাম পাচ্ছেন। ফলে এলাকার কৃষকরা সজিনা চাষে অধিক লাভবান হচ্ছেন। বাড়তি জায়গা নষ্ট না করে, বিনা পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় উপজেলার প্রায় সকল এলাকাতেই এ জাতের সজিনা ডাটা গাছ লাগানোর হিড়িক পড়েছে। মজাদার এই সবজি সারা বছর বাজারে পাওয়ায় খুশি ক্রেতারাও।
২০১৪ সালে তৎকালীন কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী পরীক্ষা মূলক ভাবে চাষের উপযোগিতা যাচাইয়ের জন্য নকলায় বারোমাসি এই সজিনার চারা উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকার কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেন। তারমধ্যে বানেশ্বরদী, চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, টালকী, গনপদ্দী, নকলা, উরফা, গৌড়দ্বার ও অষ্টধর ইউনিয়নের কৃষকরা বিনামূল্যের এই সজিনা ডাটার চারা পেয়ে বেশ উপকৃত হয়েছেন। বিশেষ করে পিকেএস-২ জাতের এই সজিনার চারা কৃষিক্লাবের সদস্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত এলাকার কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ থেকে জানা গেছে। এসকল কৃষকরা একটি করে চারা পেলেও পরবর্তী সময়ে রোপন করা ওইসব গাছের ডাল কেটে নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় রোপন করে সবাই এখন কয়েকটি করে বারোমাসি সজিনা গাছের মালিক।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র দীর্ঘ্য দিন গবেষণার পরে বারোমাসি সজিনার এ জাতটি উদ্ভাবনে সফল হয়েছিলেন। পরে প্রথমে যশোর হর্টিকালচার সেন্টারে এ জাতের সজিনার চারা উৎপাদন ও বিতরণের কাজ শুরু করে। অত:পর পর্যায়ক্রমে জামালপুর হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে নকলা উপজেলার কৃষকরা বিনামূল্যে এ সজিনার চারা পান।
চাষীরা জানান, এ সজিনা চাষে বাড়তি কোন জায়গার প্রয়োজন হয়না। ফলে কৃষি জমির উপর কোন প্রকার প্রভাব পড়েনা। এটি বসতবাড়ির আঙিনা ও অপেক্ষাকৃত অনুর্বর পতিত জমিতে এই বারোমাসি সজিনা ডাটা চাষ করা সম্ভব। তাচাড়া কেউ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করতে চাইলে ক্ষেত-খামারে এই সজিনা চাষ করতে পারেন।
নকলার বিভিন্ন এলাকায় সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার প্রায় প্রতিটি কৃষকের বাড়িতেই ২-১ টি করে বারোমাসি জাতের এ সজিনা গাছ রয়েছে। কৃষকরা অনুমান করে জানান যে, বর্তমানে উপজেলায় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার বারোমাসি সজিনা গাছ রয়েছে। এর চাহিদা ও বাড়তি দামসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বিবেচনায় এই জাতের সজিনা আবাদে আগ্রহী কৃষকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে; ফলে নকলা উপজেলায় কয়েক বছরে সজিনা ডাটার উৎপাদন বেড়েছে কয়েক গুণ।
বানেশ্বরদী এলাকার দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি প্রতিবছর তার কাছ থেকে এলাকার অনেকেই চারা নিয়ে রোপন করছেন। বানেশ্বদী ও চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের অপেক্ষাকৃত অনুর্বর এলাকায় এবং গ্রামীন রাস্তার পাশে সজিনার গাছ দেখে যেকেউ বারোমাসি সজিনা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। ফলে এসব ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই বারোমাসি সজিনা ডাটার গাছ রয়েছে। বানেশ্বরদী ইউপির আড়িকান্দা পশ্চিম পাড়া এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে আনোয়ার হোসেনের বারোমাসি ১০ টি বড় ও ১২ টি ছোট সজিনা গাছ থেকে মৌসুমে প্রায় অর্ধলক্ষ টাকার এবং মৌসুম ছাড়া ২০ হাজার টাকার সজিনা বিক্রি করতে পারেন। চন্দ্রকোনা ইউপির বাছুরআলগা গ্রামের ওয়াদুদ, ওবায়দুল, আইয়ুব আলী, হোসেন আলী, খোকা মিয়া, জান্নাতুল, ফয়েজুর ও হাকিম মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সবার সজিনা গাছে অসংখ্য সজিনা ডাটা ঝুলছে, পাশাপাশি ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে প্রতিটি সজিনা গাছের ডাল।
উদ্যানতত্ত্ববিদরা জানান, বারোমাসি এ সজিনা চারা লাগানোর ৬ মাসের মাথায় গাছে ফলন আসে। বছরে অন্তত দুই-তিনবার ফলন আসায় গাছে সারা বছরই ডাটা ঝুলে। বাজারেও সারা বছরই বারোমাসি সজিনা ডাটা পাওয়া যায়।
তারা আরো জানান, একটি পূর্ণ বয়ষ্ক গাছে বছরে ৫০০ টি থেকে এক হাজার ৫০০টি পর্যন্ত সজিনা ডাটার আসে। ১৬ টি থেকে ২০টি সজিনা ডাটায় এক কেজি হয়। এ হিসাবে একটি গাছে ৬৫ কেজি থেকে ৮০ কেজি সজিনা ডাটার ফলন পাওয়া সম্ভব। দামের হিসেবে একটি গাছ থেকে বছরে ৫ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার ৫শ টাকা আয় করা সম্ভব। যা বিনা পরিশ্রমে আবাদ করা অন্য কোন সবজিতে অসম্ভব।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস জানান, হৃদরোগ, রক্তের প্রবাহ, টাইফয়েড, প্যারালাইসিস, বাতজ্বর ও লিভারের জন্য সজিনার পাতা ও ডাটা বেশ উপকারী। এছাড়াও পোকামাকড়ের কামড়ে অ্যান্টিসেপটিকের কাজ করে সজিনা পাতার রস। সজিনার বাকল, শেকড়, ফুল, বীজ এবং এ গাছের আঠাতেও যথেষ্ট ওষুধি গুণ রয়েছে। তিনি বলেন, নকলার মাটি সজিনা চাষের জন্য উপযোগী। বিশেষ করে বারোমাসি সজিনা চাষের জন্য অধিক উপযোগী। এখানের যে কেউ চাইলে বাড়ির আঙ্গিনায় বা অপেক্ষাকৃত অনুর্বর উঁচু জমিতে বানিজ্যিক ভাবে সজিনা চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

Exit mobile version