Site icon

পারিবারিক সমৃদ্ধি আনয়নের জন্য প্রতিটি বাড়ি হোক খামার

 প্রতিটি বাড়ি হোক খামার
# বকুল হাসান খান #

প্রতিটি বাড়ি হোক খামার
বাংলাদেশে প্রায় ১৬ কোটি লোকর বসবাস। প্রতিদিন জনসংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। জনসংখ্যার চাপে কমে যাচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ। ফলে জাতীয় সমস্যা দেখা দিচ্ছে, দিন দিন উৎপাদন কমে যাচ্ছে। মাঠের ফসল দিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরানো দূরের কথা সংসার চালানো কষ্টকর। অনেক কৃষক তার পৈতৃক কৃষি পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় দাবিত হচ্ছে। এ অবস্থায় মাঠের ফসলের পাশাপাশি অন্য আরো কিছু করার প্রয়োজন বলে মনে করেন সর্বমহল।

কৃষক যখন চারিদিকে ভাল বীজ, ন্যায্যমূল্যে রাসায়নিক সার, কার্যকর কীটনাশক, সঠিক দামে ডিজেল, প্রয়োজনমত বিদ্যুৎ আর কৃষি বিষয়ক পরামর্শ কোন কিছুই সঠিকভাবে পাচ্ছে না। ঠিক সেই মুহুর্তে এবং কৃষকের এ দূরদিনে দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সময়োপযোগী একটি ঘোষণা দিয়েছেন- একটি বাড়ি একটি খামার । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা সফল ও সার্থক হোক। কৃষক ভাই আর বসে থাকার সময় নেই। আসুন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনাকে বাস্তবে রুপ দেই । বিকল্প কিছু করি নিজের বাড়িকে ঘিরেই । পাহাড়ি একটি প্রবাদ,আছে ,ধান করলে ধান পায়, জুম করলে সব পায়।জীবন ধারনের মৌলিক চাহিদা মেটাতে যা যা প্রয়োজন তা উৎপাদন হবে নিজের বাড়িতেই। সর্বোচ্চ তেল -লবণ কেনা যেতে পারে। এটা বাস্তবায়ন করতে হলে নিজের বসতবাড়িকে বানাতে হবে আদর্শ খামারবাড়ি। যেখানে উৎপাদিত হবে-মাছ, মাংস, দুধ,ডিম, ফুল, বাহারি গাছ, ফলমুল, ঔষধি, মসলা, শাক-সবজি, জৈব সার কারখানা, ছোট আকারের নার্সারী এবং বাঁশ বাগান। কৃষকরে বাড়িতে তৈরি হবে বায়োগ্যাস জ্বলবে বাতি সাশ্যয় হবে বিদ্যুৎ। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা আর কৃষক ভাইদের পরিশ্রমী হাত। আমাদের দেশে রয়েছে বড়, মাঝারি, ছোট, প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষক। তাই তাদের বাড়ির আকার , আকৃতি, অবস্থান, আর্থিক সংগতি ও পছন্দ ভিন্ন হতে পারে। তারপরও সকলের জন্য একটি মডেল উপস্থাপণ করছি । যা সহযোগি হিসেবে কাজ করবে।

যা কিছু করতে পারেন আপনার খামার বাড়িতেঃ আগেই বলেছি তেল-লবণ ছাড়া বাকি সব উৎপাদন হবে আপনার খামার বাড়িতে। প্রথমে মাছ দিয়ে শুরু করতে পারি। বাড়ির সামনে দক্ষিণ–পূর্ব সীমানায় একটা পুকুর করতে পারেন। পুকুরের আকার ও গভীরতা আয়তনের উপর নির্ভর করবে। পুকুরের একপাড়ে হাঁস ও মুরগীর খামার করতে পারেন। পুকুরে রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, মিরের কার্প, মৃগেল ও রাজপুটির চাষ করা যেতে পারে। মনে রাখবেন হাসঁ-মুরগীর বিষ্ঠা মাছের খাদ্য ও উত্তম সার। তাহলে মাছের খাদ্য কম দিতে হবে। পুকুরের যে তিনপার খালি রয়েছে সেখানে আপনি টমেটো, পেঁপে, বেগুন, নারিকেল,লেবু, পেয়ারা লাগাতে পারেন। এছাড়া একেবারে কিনারা ঘেষে কুমড়া জাতীয় সবজি লাগাতে পারেন।
পুকুর পাড় ঘেষেই থাকতে পারে ভেষজ বাগান। ভেষজ বাগানে লাগাতে পারেন নিম, তুলসী,গাঁদা, পাথরকুচি, বাসক, আমলকি ইত্যাদি ঔষধি গাছ। ভেষজ বাগানের পরে থাকতে পারে আপনার বাড়ির মুল গেট। এর পাশেই করতে পারেন ছোট আকারের একটি ফুলের বাগান। তারপাশেই করুন ছোট্ট আকারের নার্সারী। নার্সারীতে আপনার বেশি প্রয়োজনীয় ও সহজে বীজ পাওয়া যায় এমন গাছের চারা উঠাতে পারেন। মনে রাখবেন ভাল জাতের চারা বিক্রি করা যায়।
এখন বলছি সবজি প্লটের কথা আপনার বড় সবজি প্লটকে পাচটি ছোট প্লটে ভাগ করে নিন। এসব প্লটে মৌসুম অনুযায়ী সবজি চাষ করতে পারেন। এবার মাচায় সবজি চাষের কথা বলছি- শিম, লাউ, বরবটি, চালকুমড়া, করলা, চিচিংগা, ধুন্দল ইত্যাদি সবজির চাষ করতে পারেন। আদা ও হলুদের চাষ করতে পারেন প্রতিটি সবজি মাচার নীচে।

মিশ্র ফল বাগানের লাগাতে পারেন- বাউকুল, আপেল কুল, বারোমাসি আম,উন্নত জাতের লিচু, পেয়ারা, পেঁপে, লেবু, বাতাবি লেবু, সফেদা, ডালিম, বেল, কৎবেল ইত্যাদি। কলা বাগান করতে পারেন মিশ্র ফল বাগানের পাশেই। ২/৩ জাতের কলা রাখলেই চলবে। মসলা বাগান করুন আপনার রান্নাঘরের পাশেই। নিত্য প্রয়োজনীয়- মরিচ, পেয়াজ, রসুন, ধনিয়া, বিলাতী ধনিয়া, তেজপাতাসহ বিভিন্ন মসলা উৎপাদন করা যায় মসলা বাগানে।ছোট আকারের প্লোট্রি ফার্ম করুন । তাছাড়া দেশি মুরগী পালন সারা বছর । এতে আপনার পরিবারের ডিম ও মাংসের চাহিদাসহ পুষ্টির চাহিদা পূরন হবে। কয়েকটি ছাগল ও দুধালো কয়েকটি গাভী থাকলে আপনার কথা কে ভুলে । প্রতিবেশির মেহমান আসলেই আপনার নিকট ছুটে আসতেই হবে।

টিওবয়েল, ছাগল-গরু পালনের গোয়ালঘর, টয়লেট, খড়ের পালার পাশেই করতে পারেন বায়োগ্যাস প্লান্ট। বায়োগ্যাস প্লান্ট দিয়ে তিতাস গ্যাসের মত রান্না করতে পারবেন। ম্যান্টেল জ্বেলে হ্যাজাক লাইটের মত আলো পাওয়া যায়। এছাড়াও আরো কিছু কাজ করতে পারেন বায়োগ্যাস প্লান্টের সাহায্যে। এর জন্য আপনাকে ৫-৭ টি গাভী এবং ৪০০-৫০০ মুরগীর বিষ্ঠার প্রয়োজন । বায়োগ্যাস প্লান্টের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা রয়েছে। আপনার বাড়ির পূর্ব ও পশ্চিম পাশে সুপারি গাছ লাগাতে ভুলে যাবেন না। উত্তর পাশে নারিকেল লাগিয়ে দিন। মনে রাখবেন আপনার চারিদিকের নিরাপত্তা বেষ্টনী হতে হবে খুব শক্তিশালী। এরসাথে পাতাবাহার জাতীয় বাহারী গাছ লাগাতে পারেন।

দেশের সেবক, সুপ্রিয় চাষী ভাই , আমি আমার সামান্য জ্ঞান দ্বারা কিছু অংশ তুলে ধরার চেষ্ঠা করেছি । সকল কিছু আপনার হাতে। আপনার মন, মেধা, শ্রম আর ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় সব করা সম্ভব । আপনার পাশেই হয়তো এর চেয়ে সুন্দর খামার বাড়ি আছে, তাহলে আপনি পারবেন না , সেটা কি করে হতে পারে। আজই শপথ নিন, সুন্দর কিছু করুন। এদেশ উন্নতি আপনারই হাতে।

Exit mobile version