মোঃ মোশারফ হোসেন (বিশেষ প্রতিনিধি) শেরপুর :
শেরপুরের নকলায় চাষকরা ড্রাগনফল গাছে ফুল আসায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। প্রতিটি শাখায় ফুল আসায় ব্যাকুল হয়ে উঠেছে চাষির মন। গাছে ফুল দেখে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন ওইফল চাষি পরিবারের সদস্যরা। স্বপ্নপূরণের আশায় ড্রাগনগাছ ও ফুলে নিয়মিত ঔষধ স্প্রে করাসহ বিভিন্ন পরিচর্চা বাড়িয়েছেন। ড্রাগন চাষে দুই বছর আগে থেকেই সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন বানেশ্বরদীর অনেক চাষি। গভীর সম্ভাবনা দেখে স্বাবলম্বী হতে বাণিজ্যিক ভাবে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রান্তিক চাষিরা।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখাগেছে- বানেশ্বর্দী, মোজারকান্দা, ছোটমোজার ও পুলাদেশী, গ্রামের অর্ধশতাধিক চাষির ড্রাগন গাছে সাদা-হলুদাব বর্ণের দৃষ্টিনন্দন অসংখ্য ফুল ঝুলছে। আর পরিচর্চায় নিয়োজিত আছেন চাষিরা। আর তাদের চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি মুখে ফুটে উঠেছে। তারা বলেন, ড্রাগনফুল রাতে ফোটে, তাই একে নাইট কুইন বলা হয়।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ক্যাকটাস গোত্রের এই ফলের চাষ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরাধীন জামালপুর হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে এবং নকলা কৃষি অফিসের আয়োজনে উপজেলার বানেশ্বরদী ও চন্দ্রকোণা ইউনিয়নের ৩২০ জন কৃষকের মাঝে ড্রাগনের কাটিং করা চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। ওই চাষিদের মধ্যে ছোট মোজারের মোসা শেখ, আবু বাক্কার; বানেশ্বরদীর চুন্নু মিয়া, মিরাজ আলী ও আজিজুল হকসহ অনেকের গাছে তিনবছর যাবৎ নিয়মিত ফুল-ফল আসায় তারা লাভবান হয়েছেন। তাদের দেখা দেখি অনেকেই ড্রাগনফল চাষে আগ্রহী হয়েছেন। বর্তমানে উপজেলায় আট শতাধিক ড্রাগন গাছ রয়েছে।
চলতি মৌসুমে প্রথম বারের মতো মোজার বাজারের কিতাবালি হাজী, পোলাদেশীর আব্দুল হালিম, সাজু ও আকাব্বর আলীসহ অনেকের গাছে ফুল আসায় তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে, পাশাপাশি গাছে ফুল দেখে স্বপ্ন বুনছেন তারা। তারা বলেন, এখন নিজেরাই কাটিং করে ড্রাগনফল চাষের সম্প্রসারণ করবেন। নিজে লাগানোর পরে প্রতিটি কাটিং করা চারা ৩০০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা করে বিক্রি করা যাবে বলে তারা জানান।
চাষি কিতাবালি হাজী ও আব্দুল হালিম জানান, সল্প জায়গায় নামে মাত্র শ্রমে প্রতিটি গাছ হতে বছরে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। তারা বলেন, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ালে ড্রাগনফলেই কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তন কার সম্ভব। অন্যচাষী আবু বাক্কার, চুন্নু মিয়া ও মিরাজ আলী বলেন, এই ফলটি অহরহ না পাওয়ায় প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনদের বিনামূল্যে দেওয়ার পরেও ২০১৬ সালে প্রতি গাছ থেকে ১০০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে আয় হয়েছে। তাদের মতো সবাই বাড়ীর আঙ্গীনা ও পতিত জমিতে ড্রাগন চাষ করলে কোন এক সময় বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে ড্রাগন ফল উৎপাদন কারী দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে বলে তাদের বিশ্বাস।
বানেশ্বরদী ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইসমাতুন জাহান পলাশী নিজেও ড্রাগনফল চাষী। এফল চাষের সফলতা বিবেচনা করে তার পূর্বের কর্মস্থল ভুরদী এলাকায় ড্রাগন ফল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছেন। ইতিমধ্যে ভূরদী খন্দকার পাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার ২৫ জন সদস্য কৃষক ড্রাগন গাছের কাটিং চারা পেতে পুরাতন চাষি হালিম ও কিতাবালী কে বলে রেখেছেন। ওই সংস্থার হেলাল, বেলাল, ঈসমাইল ও কামালসহ আরও দুই চারজন চাষি দুই-একটি করে চারা ইতিমধ্যে সংগ্রহ করে লাগিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, পুষ্টিমান ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বিবেচনায় এফল চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিনদিনই বাড়ছে। তিনি জানান, প্রায় সব ধরনের মাটিতে চাষ করা গেলেও, বেলে দোঁ-আশ মাটি ড্রাগনফল চাষের জন্য উত্তম। চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় জুন-জুলাই মাস। ফুল আসে এপ্রিলে আর ফল পাকে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। বানিজ্যিক ভাবে চাষের জন্য বাউ ড্রাগন-১ ও বাউ ড্রাগন-২ উত্তম। তবে হলুদ ও কালচে লাল ড্রাগন ফলও এদেশে চাষ করা সম্ভব। এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, নকলার মাটি ড্রাগন ফল চাষের জন্য উপযোগী। তিনি কৃষকদের ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহী করতে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন বাড়ীর আঙ্গীনা ও অনাবাদি জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করে যেকেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন। শেরপুর খামার বাড়ির উপপরিচালক আশরাফ উদ্দিন বলেন, কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী মহোদয়ের প্রচেষ্ঠাতেই ড্রাগন ও ভিয়েতনামী নারিকেলের মতো অসংখ্য উচ্চ ফলনশীল উন্নত জাতের ফল ও ধান এদেশে উদ্ভাবন কার বা বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানী করা আনা সম্ভব হয়েছে।