মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) : শেরপুরের চরাঞ্চলের কৃষকদের নজর এখন বিনাধান-১১ এর দিকে। বন্যা সহিষ্ণু স্বল্প মেয়াদী বীনা-১১ জাতের আমন ধানের আবাদ দিন দিন বাড়ছে। এ আবাদে বন্যার ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকা এবং চাষের অল্প সময়ের মধ্যে কৃষকদের ঘরে ধান উঠাতে ওই ধান আবাদের দিকে ঝুঁকছে শেরপুরের ৫ টি উপজেলার কৃষকরা। বন্যা কবলিত হওয়া ইউনিয়ন গুলোর কৃষকরা ওই ধান চাষে দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে উঠছেন। জানাগেছে, জেলার সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী কামারের চর, চর মোচারিয়া, চর পক্ষীমারি, চর শেরপুর, বলাই চর, ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়নে প্রায় অর্ধ শত গ্রামে প্রতি বছর বন্যার কারণে হাজার হাজার একর জমির ধান ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে যায় এবং নকলার কমপক্ষে ১২-১৩ টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। ফলে প্রতি বছর ক্ষতি গ্রস্থ হয় হাজারো চরাঞ্চলের কৃষক। কৃষকের এ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড এর অর্থায়নে ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট (বিনা) আমন জাত বীনাধান-১১ উদ্ভাবন করেছে। তাদের উদ্ভাবিত আমন ধানের প্রতি কৃষকের আগ্রহ বাড়াতে এবং এর সুফল সম্পর্কে কৃষককে অবগত করতে গত ৩ বছর যাবত শেরপুর সদর উপজেলার উল্লেখিত ইউনিয়ন সহ নকলার বিভিন্ন গ্রামে প্রদর্শনী প্লট তৈরী করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সদর উপজেলা, নালিতাবাড়ি ও নকলায় বিনাধান-১১ কর্তন ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। নকলার কোর্শাবাদাগৈড় এলাকার কৃষক নবীউর রহমান ও লিয়াকত আলীর বাড়ীতে মাঠ দিবস হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট ( বিনা)র মহা পরিচালক কৃষিবিদ শমসের আলী, বাংলাদেশ পরমানু ধান গবেষনা কেন্দ্র নালিতাবাড়ির কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার, বীনা’র উপ-পরিচালক ডঃ মীর্জা মোফাজ্জল ইসলাম, শেরপুরের অতিরিকৃত উপ-পরিচালক আব্দুস সাত্তার, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সামিউল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান, পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন, নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ, সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আতিকুর রহমান ও মোফাজ্জল হোসেন, কৃষকনেতা আঃ মন্নাফসহ স্থানীয় ৪/৫শ’ কৃষক কৃষানি ও বিভিন্ন পেশা জীবিরা উপস্থিত ছিলেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বিনাএর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত ওই মাঠ দিবসে জানানো হয়, বিভিন্ন চরাঞ্চলের গ্রামে প্রতি বছর বন্যা সহিষ্ণু ও স্বল্প মেয়াদী এ বিনা-১১জাতের আমন আবাদে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। বিনা’র বৈজ্ঞানিক কর্মকতা মোঃ সামিউল হক বলেন, বন্যা সহিষ্ণু বিনাধান-১১ আবাদে এবছর প্রতি একরে প্রায় ৪৭ থেকে ৫২ মন ধানের ফলন হয়েছে। এ ধান বন্যা সহিষ্ণু, স্বল্প জীবন কালীন ও উচ্চফলনশীল জাত যা ২০ থেকে ২৫ দিন পানির নিচে থাকার পরও স্বাভাবিক ফলন হয় । তাছাড়াও এধান স্বল্প সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ১১২-১১৬ দিনের মধ্যে কর্তন করা হয়। ফলে শীত কালীন বিভিন্ন ফসল যেমন- ডাল, সরিষা ও বিভিন্ন সবজি’র আবাদ করা যায়। নকলা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর জানান, উপজেলায় এ বন্যা সহিষ্ণু ধান আবাদ গত বছর থেকে কেবলমাত্র প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে শুরু হয়। গত বছর এর আবাদ হয়েছিল মাত্র ২ থেকে ৩ হেক্টর জমিতে। কিন্তু চলতি বছর আবাদ করা হয়েছে প্রায় ৭/৮ হেক্টর জমিতে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ দৃঢ় আশা নিয়ে বলেন, চরাঞ্চলের কৃষকের মাঝে বিনাধান-১১ জাতের ধান চাষের উপর যে ভাবে আস্তা বাড়ছে তাতে আগামীতে কৃষকরা আরো বেশী করে এ আমন ধানের আবাদ করবেন। তিনি আরও বলেন আগে কৃষি জমিতে সর্বোচ্চ ৩ টি আবাদ করা যেতো, কিন্তু বিনাধান-১১ চাষ করলে ৪ টি আবাদ করা সম্ভব। তাতে কৃষক হবেন লাভবান, দেশ হবে কৃষি ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ।