Site icon

বেশি ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় গাজর চাষে কৃষকদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে

বেশি ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় গাজর চাষে কৃষকদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে

মো. মোশারফ হোসেন, শেরপুর প্রতিনিধি:

গাজর চাষে কৃষকদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে ঃউৎপাদন বেশি এবং ভালো দাম পাওয়ায় শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় গাজর চাষে কৃষকদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। গাজর আবাদে স্বল্প সময় লাগে এবং নামে মাত্র শ্রমে অন্যান্য ফসলের চেয়ে অধিক লাভবান হচ্ছেন গাজর চাষিরা। উৎপাদন খরচের চেয়ে তিনগুণ লাভ পাওয়া যায় গাজর চাষে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, নকলা উপজেলার প্রায় সব এলাকায় নিজেদের চাহিদা মিটাতে কৃষকরা গাজর চাষ করেছেন। তবে উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের রামপুর এলাকার শামীম আহমেদ ৫ বিঘা জমিতে বানিজ্যিক ভাবে গাজর চাষ করে লাভবান হয়েছেন।

উৎপাদন ভালো হওয়ায় আগামীতে গাজর চাষের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে জানান অনেক কৃষক। রামপুর গ্রামের কৃষক শামীম আহমেদ বলেন, এক কি দেড় যুগ আগেও এলাকার অনেকেই গাজর সম্পর্কে তেমন জানতেন না বা চিনতেন না। কিন্তু এখন গাজর সবার কাছে একটি অতি পরিচিত সবজি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছ। ২০১৬ সালে প্রথমে ৫শতাংশ জমিতে গাজরের আবাদ করে ভালো ফলন এবং দাম পান তিনি। পরের বছর থেকে তার দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরা গাজর চাষ শুরু করেন। নামে মাত্র শ্রমে উৎপাদন বেশি ও ভালো দাম পাওয়ায় উপজেলার কয়েকশ কৃষক ইতোমধ্যে গাজর চাষ করা শুরু করেছেন। বাছুর আলগা গ্রামের কৃষক মোকছেদ আলী মাস্টারসহ অনেকেই জানান, তারা কয়েক বছর ধরেই নিজেদের চাহিদা মিটাতে সামান্য পরিমাণে গাজরের আবাদ করে আসছেন।

শামীম বলেন, প্রতি বিঘা জমি ১০ হাজার টাকা করে বন্ধক নিয়ে গাজর চাষ করেছেন তিনি। পতিত জমিকে গাজর চাষের উপযোগী করাসহ গাজর উৎপাদন তথা বিক্রি করার পূর্ব পর্যন্ত প্রতি বিঘা জমিতে তার ৫০ হাজার টাকা করে ব্যয় হয়েছে। ফলে তার ৫ বিঘা জমিতে গাজর চাষে ২ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে তার। তিনি জানান, ওই ৫ বিঘা জমির গাজর থেকে তিনি ৫ লক্ষাধিক টাকা আয় করতে পারবেন। ফলে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা লাভ হবে বলে তিনি আশা করছেন।
গাজর গাছের পাতা গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ তথা গুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। তাই গাজর গাছের পাতা গবাদি পশুর খাবারের জন্য পশুর মালিকরা গাজর গাছ তুলে পাতা নিয়ে যান। এতে শ্রমিক খরচ কিছুটা হলেও কম লাগছে বলে জানান অনেক কৃষক।
শামীম আরও জানান, এবছর বীজ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা কেজি হিসেবে তার ৫ বিঘা জমিতে ১০ হাজার ৯৫০ টাকার ৮০০ গ্রাম গাজরের বীজ বপন করেছিলেন। বীজ ভালো হওয়ায় এবং অনুকূল পরিবেশ থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। আগামীতে তিনি ১০ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করবেন বলে মনস্থীর করেছেন। বর্তমানে প্রতি কেজি গাজর পাইকারি ২২ টাকা থেকে ২৫ টাকা করে এবং খুচরা হিসেবে ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা করে প্রতি কেজি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। প্রথম দিকে একহাজার ১০০ টাকা থেকে একহাজার ২০০ টাকা প্রতি মণ হিসেবে বিক্রি হতো। কিন্তু এখন গাজরের ভরা মৌসুম হওয়ায় প্রতি মণ গাজর বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা থেকে ৮৮০ টাকা করে।

উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানান, গাজর সাধারনত ভাদ্র মাসের শুরু থেকে মধ্য আশ্বিন পর্যন্ত বীজ বপন করা হয়। এটি ৯০ দিনের ফসল। ৯০ দিনের গাজর চাষ করে কৃষকরা যতটা লাভবান হন, তা অন্যকোন আবাদে কল্পনাও করা যায়না। তাই দিন দিন গাজর চাষের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা বাড়ছে।
কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ ও কৃষিবিদ শেখ ফজলুল হক মণি জানান, প্রয়োজনের তোলনায় উপজেলায় কম জমিতে গাজরের আবাদ হওয়ায় এবং দাম ভালো থাকায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আগামিতে গাজরের আবাদ বৃদ্ধি করতে পারলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য ফসলের মতো রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে তারা মনে করছেন।

নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, গাজর একটি বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন সবজি। উপজেলায় এবছর গত বছরের তোলনায় কয়েকগুণ বেশি জমিতে গাজরের আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। তিনি জানান, সাধারনত প্রতি হেক্টরে ১০ থেকে ১২ মেট্রিকটন গাজর উৎপাদন হয়ে থাকে। ইতোমধ্যে কৃষকরা গাজর উত্তোলণ শুরু করেছেন। ভালো ফলন পাওয়ায় বানিজ্যিক ভাবে গাজর চাষকরা চাষি শামীমসহ নিজের প্রয়োজন মিটাতে গাজর চাষ করা অন্যান্য কৃষকরাও খুব খুশি। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় গাজর চাষে লাভ বেশি, প্রায় তিন গুণ লাভ পাওয়া যায়। তাই যে কেউ গাজর চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

Exit mobile version