মহাশোল মাছের পোনা উৎপাদন ও লাভজনক চাষ ব্যবস্থাপনা (শেষ পর্ব)

মহাশোল মাছের পোনা উৎপাদন

মো. মশিউর রহমান ও ড. এএইচএম কোহিনুর

মহাশোল মাছের মিশ্রচাষ ব্যবস্থাপনা

মহাশোল মাছের পোনা উৎপাদন  : আধুনিক মৎস্য চাষে রুই জাতীয় মাছের সাথে মহাশোল মাছের মিশ্রচাষ করা যায়। ফলে পুকুরের সকল স্তরের পানির উৎপাদনশীলতাকে সম্পূর্ণ কাজে লাগিয়ে কাঙ্খিত পরিমানে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। পুকুরের বিভিন্ন স্তরে বিদ্যমান সব ধরণের প্রাকৃতিক খাদ্যের পুরোপুরি ব্যবহার নিশ্চিত করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি হলো মিশ্রচাষের প্রধান উদ্দেশ্য। মিশ্রচাষের ধাপসমূহ সংক্ষেপে নিম্মে বর্ণনা করা হলোঃ

পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি
মহাশোল মাছের চাষ পদ্ধতি অনেকটা অন্যান্য কার্প জাতীয় মাছের চাষ পদ্ধতির মতই। নিম্মে সংক্ষেপে পুকুর নির্বাচন ও চাষ পদ্ধতির ধাপগুলো বর্ণনা করা হলোঃ

ক্স মিশ্রচাষের জন্য পুকুরের আয়তন ৪০-১০০ শতাংশ এবং বছরে ৮-১২ মাস ১.০-১.৫ মিটার পানি থাকে এরকম পুকুর নির্বাচন করা যেতে পারে।
ক্স জলজ আগাছা যেমন- কচুরিপানা, কলমীলতা, হেলেঞ্চা ইত্যাদি শেকড়সহ দমন করা প্রয়োজন।
ক্স পুকুর শুকিয়ে অথবা রোটেনন পাউডার প্রয়োগ করে রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দমন করতে হবে।
ক্স স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি হেক্টরে ২৫০ কেজি হারে চুন ছিটিয়ে দিতে হবে।
ক্স চুন প্রয়োগের ৩-৪ দিন পর প্রতি হেক্টরে ১২.৫ কেজি ইউরিয়া এবং ২৫ কেজি টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
ক্স সার প্রয়োগের ৬-৭ দিন পর পুকুরের পানি সবুজাভ হলে মাছের পোনা মজুদের উপযোগী হয়।

পোনা মজুদ
ক্স কাঙ্খিত উৎপাদন পেতে হলে ৫-৬ ইঞ্চি আকারের সুস্থ ও সবল পোনা প্রতি হেক্টরে ৬২৫০ টি মজুদ করতে হবে।
ক্স বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা মজুদের জন্য নিম্মের সারণি অনুসরণ করা যেতে পারেঃ

মাছের প্রজাতি                  মজুদ হার (%)                         মজুদ ঘনত্ব (সংখ্যা/হেক্টর)
কাতলা                                      ৪০                                                      ৩,০০০
রুই                                            ৩০                                                      ২,২৫০
মৃগেল                                       ১৫                                                       ১,১২৫
মহাশোল                                  ১৫                                                        ১,১২৫

সম্পূরক খাদ্য ও সার প্রয়োগ ব্যবস্থাপনা কৌশল
ক্স মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি পুকুরে সম্পুরক খাবার সরবরাহ করতে হবে।
ক্স মাছ ছাড়ার পরের দিন থেকে মজুদকৃত পোনার দৈহিক ওজনের শতকরা ২-৪ ভাগ হারে চালের কুড়া (৫০%), গমের ভূসি (২০%), সরিষার খৈল (২৫%) এবং ফিসমিল (৫%) একত্রে মিশিয়ে বল আকারে পুকুরে কতিপয় নির্দিষ্ট জায়গায় সরবরাহ করতে হবে।
ক্স প্রতিমাসে নমুনায়ন করে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ মাছের দৈহিক ওজনের সহিত সংগতি রেখে সম্পূরক খাদ্যের সমন্বয় করতে হবে।
ক্স পোনা ছাড়ার পর ২০ দিন অন্তর প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাপ্যতা সাপেক্ষে প্রতি হেক্টরে ১২.৫ কেজি ইউরিয়া ও ২৫ কেজি টিএসপি পর্যায়ক্রমে প্রয়োগ করতে হবে।
ক্স প্রতি সপ্তাহে পানির গুনাগুন যেমন- তাপমাত্রা, অক্সিজেন, পিএইচ, মোট খারত্ব ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

মাছ আহরণ ও উৎপাদন
ক্স পোনা মজুদের ৮-১০ মাস পর জাল টেনে বা পুকুর শুকিয়ে মাছ আহরণ করতে হবে।
ক্স জীবিত বা তাজা মাছ বাজারে বিক্রি করে অধিক মুনাফা পাওয়ার লক্ষ্যে সময়মত মাছ আহরণ নিশ্চিত করতে হবে।
ক্স বাৎসরিক পুকুরে ৮-১০ মাস মিশ্রচাষে মহাশোল মাছ ৬০০-৮০০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে।
ক্স হেক্টর প্রতি কাতলা ২২০০-২৪০০ কেজি, রুই ১৫০০-১৭০০ কেজি, মৃগেল ৭০০-৭৫০ কেজি এবং মহাশোল ৬৫০-৭০০ কেজি উৎপাদন পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *