Site icon

মহিষের ভ্রুণ উৎপাদনের জন্য বাকৃবির গবেষকের প্রধানমন্ত্রীর অনুদান লাভ

কৃত্রিমভাবে মহিষের ভ্রুণ

বাকৃবি প্রতিনিধিঃ

কৃষিবিদ ও কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে দেশ আজ খাদ্য শস্যে স্বয়ংসম্পন্ন হলেও প্রাণিজ আমিষ যেমন- দুধ, ডিম, মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি। এতে দেশের মানুষের মাথাপিছু প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি রয়ে গেছে। প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উপাদান হলো দুধ। একজন মানুষকে সুস্থ-স্বাভাবিক থাকার জন্যে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ মিলিলিটার দুধ খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে দুধের উৎপাদন মাথাপিছু ১২৫ মিলিলিটার। অর্থাৎ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী দুধের উৎপাদন শতকরা ৫০ ভাগ ঘাটতি রয়েছে। আমাদের দেশে গরু দুধ উৎপাদনে মূল ভূমিকা পালন করে। কিন্তু দুধ উৎপাদনে প্রথম দশটি দেশের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, দুধ উৎপাদনে গরুর পাশাপাশি মহিষের অবদানও অনেক বেশি। পুষ্টি মানের দিক থেকে মহিষের দুধ গরুর দুধের চেয়ে ভালো। মহিষের দুধে ফ্যাট বেশি থাকায় গরুর দুধের থেকে এটি বেশি সুস্বাদু। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দুধ উৎপাদনে ভারত বিশ্বে প্রথম। ভারতের মোট দুধের শতকরা ৬৫ ভাগ দুধ আসে মহিষ থেকে। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে মহিষের সংখ্যা খুবই কম। আমাদের দেশে যেখানে গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৩৭ লক্ষ ৮৫ হাজার সেখানে মহিষের সংখ্যা ১৪ লক্ষ ৭১ হাজার। আমাদের দেশের দেশী জাতীয় মহিষ যতেœর অভাবে কম উৎপাদনশীল হয়ে থাকে। কেননা অধিকাংশ মহিষ উর্বর না। দেশে মহিষের কৃত্রিম প্রজননের কোনো সুব্যবস্থা নেই। যদিও কিছু বেসরকারী সংস্থা মহিষের কৃত্রিম প্রজননের জন্যে কাজ করে যাচ্ছে।
মহিষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও কৃত্রিম ভাবে ভ্রƒণ উৎপাদনের জন্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন অনুষদের পশুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে যাচ্ছেন। এ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ গত ১৬ মার্চ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গবেষণা অনুদান চেক লাভ করেন তিনি।
গবেষণা সম্পর্কে গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, দেশী জাতীয় মহিষের ডিম্বাণু আকারে ছোট ও অনুর্বর। এতে ডিম্বাণু নিষিক্ত হয় না। ফলে মহিষের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। মহিষের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে কৃত্রিমভাবে এই ছোট ডিম্বাণু বড় করার উপায় বের করতে কাজ করে যাচ্ছি এবং সফলতাও পাচ্ছি। ডিম্বাণু বড় করা গেলে তা নিষিক্ত করা এবং কৃত্রিমভাবে ওই বড় ডিম্বাণু থেকে ভ্রুণ উৎপাদন করা সম্ভব। পরবর্তীতে সেই ভ্রূণ থেকে মহিষের বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব। তিনি আরো বলেন, উন্নত জাতের মহিষের জাত যেমন- নিলীরাভি, মুরাহ্ এর সিমেন (বীর্জ) দেশী জাতীয় মহিষের সাথে সঙ্করায়নের মাধ্যমে যে বাচ্চা উৎপাদন হবে সেই বাচ্চা থেকে অধিক পরিমাণে দুধ পাওয়া যাবে। তিনি মনে করেন এই গবেষণা পুরষ্কার তাঁর কর্মস্পৃহাকে আরো ত্বরান্বিত করবে এবং তাঁর গবেষণা কার্যক্রম বেগবান হবে। উল্লেখ্য, তিনি জাপান থেকে বংশবৃদ্ধি জীবপ্রযুক্তির (রিপ্রডাক্টিভ বায়োটেকনোলজি) ওপর পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন।

Exit mobile version