মধুপুরের কৃষি জমির মাটি বিক্রি হচ্ছে সিরামিক কারখানায়

কৃষি জমির মাটি বিক্রি

কৃষি জমির মাটি খনন
***এ কিউ রাসেল***
টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের কৃষি জমি নষ্ট করে মাছ চাষের জন্য পুকুর খননের কথা বলে পিরোজপুর এলাকার বলাইবাইদ থেকে মূল্যবান মাটি দেশের বিভিন্ন সিরামিক কারখানায় অবাধে বিক্রি করছে একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র। যে মাটি দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিখ্যাত সিরামিক, টাইলস ও ইটসহ নানা দ্রব্য। নির্বিঘেœ পাচার হওয়ায় কৃষি জমির সঙ্গে এলাকার জীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে।
সরেজমিনে জানা যায়, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের বলাইবাইদ (খালের মতো নিচু ভূমি) নিচু ও উর্বর আবাদি জমি থেকে প্রতিনিনি ১৫-২০ ট্রাক সাদা-কালচে এঁটেল মাটি উঠিয়ে নির্বিঘেœ পাচার করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মূল্যবান এ মাটি সিরামিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরির জন্য রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন এলাকার কারখানগুলোতে যাচ্ছে। তাৎক্ষণিক লোভ দেখিয়ে স্থানীয় এক শ্রেণির দালাল-ব্যবসায়ী জমির মালিকদের মাছ চাষের জন্য পুকুর কেটে দেয়ার কথা বলে মাটি কেটে নিচ্ছে। এজন্য জমির ভোগদখলদারদের হাতে কিছু টাকাও ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে না বুঝেই অনেকে সহজে স্থানীয় মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পা দিয়ে আবাদি ও উচ্চফলনের জমি হারাচ্ছে। স্থানীয় ফড়িয়ারা শতাধিক শ্রমিক দিয়ে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মুধুপুর গড়াঞ্চলের এই বাইদ থেকে দেদার মাটি কেটে নিচ্ছে।
জানা গেছে, শেরপুর, সিলেট, নেত্রকোনার দূর্গাপুরে এ জাতীয় মাটি কাটা শুরু হলে স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় সরে আসতে বাধ্য হন। অনুরূপ গুণ-মানে বলাইবাইদের মাটির সন্ধান পেয়ে স্থানীয় দালাল-ব্যবসায়ীদের হাত করে তারা বলাইবাইদের এ মাটি কাটা শুরু করে। প্রথম ধাপে আমজাদ আলির ছেলে আনছার আলি তার দখলে থাকা বাইদের পুরো জমি থেকে মাটি কেটে বেঁচে দিয়েছেন।
রুস্তম আলির ছেলে একই নামের তার ভায়রা আনছার আলির ছেলে একাই এবার শুরু করেছেন মাটি পাচারের কাজ। অথচ ভোগদখলকারি অন্যদের মতো তারাও এ বাইদের জমির প্রকৃত মালিক নন। আদিবাসী গারোদের কাছ থেকে কিছু অর্থের বিনিময়ে নন-রেজিষ্ট্রি দলিলে তারা মালিক বনে গেছেন। আনছার আলি বিষয়টি স্বীকারও করেছেন।
এই কথিত জমির মালিকরা আবাদি জমির অবস্থা নষ্ট করে মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে। প্রশাসনের অগোচরে স্থানীয়দের লোভ ও মাছ চাষের সুবিধা দেখিয়ে দেদার মাটি কিনে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্রটি। মহোৎসব চলছে মাটি কাটা ও সংগ্রহের।
ইতোমধ্যে এলাকার আজমত, মিজানুর, শাহজাহান, আনছার, হাকিমসহ ২০ জনের মতো ব্যক্তি জমির মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। আর এ সিন্ডিকেট চক্রের নেতৃত্বে আছেন এলাকারই দানেজ নামের এক দালাল।
তিনি প্রতি ট্রাকে সাড়ে সাত থেকে আট হাজার টাকা দিলেও কোম্পানিতে বিক্রি করছেন টনপ্রতি সাড়ে তিন হাজার টাকা। তিনি মাটি কেটে চাষের অযোগ্য এ জমিকে মাছ চাষের ক্ষেত্র তৈরিতে ক্ষতির কিছু দেখছেন না বলে মন্তব্য করেছেন।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, এভাবে মাটি কেটে নিলে উর্বর ও বাইদে আর কৃষি জমি অবশিষ্ট থাকবে না। ছোট ছোট জমির মালিকদের জমি বিলীন হচ্ছে ওই সব কাটা গর্তে। তাদের চাষের জমি আর থাকছে না। এমনকি পিরোজপুর পূর্ব ও পশ্চিম বিভক্তকারী এই বাইদের ওপর নব স্থাপিত সংযোগ ব্রিজের কাছাকাছি মাটি কাটায় হুমকির মুখে পড়েছে ব্রিজটি।
এ বিষয়ে মুধুপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল মালেক জানান, বিষয়টি সম্পর্কে কোন লিখিত অভিযোগ তার দপ্তরে নেই। তবে তিনি শুনেছেন জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করছেন। প্রকৃত বিষয়টি জেনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন।

কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *