Site icon

মাছ চাষে করোনার প্রভাবে কিছু পর্যবেক্ষন

নিরাপদ মৎস্য উৎপাদন

মাছ চাষে করোনা

বরুন চন্দ্র বিশ্বাস
মাছ চাষে করোনা ঃরংপুর জেলায় কয়েকজন মাছ চাষী, অাড়তদার, মাছ বিক্রেতা, খাদ্য বিক্রেতা ও হ্যাচারি মালিকদের সাথে কথা বলে নিম্নোক্ত তথ্য সমূহ পাওয়া যায় :
# মাছ চাষের উপকরণ প্রাপ্তিতে তেমন সমস্যা নেই। কারণ পোনা পরিবহন ও খাদ্য পরিবহন করার ক্ষেত্রে রাস্তায় কোন সমস্যার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে পরিস্থিতির কারনে খাদ্য বিক্রয়ের পরিমান তুলনামূলকভাবে কমেছে। পিলেট খাদ্যের পরিবর্তে হাতে তৈরি সম্পূরক খাদ্যের ব্যবহার ( খৈল, ভূষি, রাইচ ব্রান কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
# মাছের অাড়তে মাছের সরবরাহ কমেছে। অাড়তে দর ডাকা – ডাকি করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মাছের চূড়ান্ত দাম নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে তিন ফুট দুরে দুরে অবস্থান করে নিলামের মাছ পর্যবেক্ষন করে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ সম্ভব হয় না। উক্ত জটিলতায় মাছের সরবরাহ কম পরিলক্ষিত হয়। কম সরবরাহের ফলে দাম বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেনি বরং কম হয়েছে। জনৈক এক চাষী অামাকে জানান যে – বাজার দরের তুলনায় মাছের দাম পেয়েছে অর্ধকের বেশি। সে এখন তার এলাকায় অল্প করে মাছ বিক্রয় করছে এবং মোটামুটি দাম পাচ্ছে।
# যারা পুকুর প্রস্তুত করে মাছ চাষ শুরু করতে যাচ্ছেন তাদের পোনা প্রাপ্তি ও পরিবহনে সমস্যা পরিলক্ষিত হয়নি। এক্ষেত্রে পোনার দাম তুলনামূলক একটু বেশি।

# হ্যাচারির ক্ষেত্রে উপকরণ প্রাপ্তিতে সমস্যা নেই। তবে কোন কোন উপকরণের মূল্য প্রায় ৩০-৪০ % বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন – এক ভায়েল পিজি ( ১০০ টি) মূল্য ছিল ১০০০ টাকা সেটি এখন ১৩৫০ টাকা। একইভাবে এইচসিজি, ওভোপিন ইত্যাদির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এক হ্যাচারি মালিক জানান যে – উপকরণ প্রাপ্তিতে সমস্যা না থাকলেও বর্তমানে উপকরণ গ্রাম হতে রওনা দিয়ে উপজেলা পার হয়ে জেলা হতে অানতে সমস্যা হচ্ছে। জায়গায় জায়গায় জবাবদিহি করতে হচ্ছে। জনৈক হ্যাচারি মালিক এসব জটিলতায় না গিয়ে রেণুপোনা উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। তার মতে যেহেতু বিভিন্ন এলাকা হতে পোনা চাষীরা রেণু পোনা ক্রয় করতে অাসনে তাই বর্তমানে লকডাউন / সেমি লকডাউন ক্ষেত্রে অনেক চাষীই রিস্ক নিয়ে অার অাসতে চাই না।
এ ক্ষেত্রে পোনা উৎপাদন কমেছে বলে পরিলক্ষিত হয়।

# সরকারি হ্যাচারি ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানান যে, উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সত্য তবে উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক অাছে এবং কোয়ারান্টাইন বিধি মেনেই ক্রেতারা পোনা ক্রয় করছেন। কিন্তু চাষীর অাগমন বর্তমানে তুলনামূলকভাবে কম।

# যে সকল মৎস্য জীবিরা জলাশয় হতে মাছ অাহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তাদের অবস্থা খুব ভালো নেই।
এক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা প্রাপ্তি ক্ষেত্রে তাদের নাম সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য /ইউপি চেয়ারম্যান হতে তালিকাভূক্তকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা মৎস্য অফিসার সংশ্লিষ্ট উপজেলা চেয়ারম্যান /উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে যোগাযোগ অব্যহত রাখা হলে ফলপ্রসূ কাজ হবে বলে অাশা করা যায়।

# কুচিয়া মাছ অাহরণকারীদের অবস্থা মোটেই ভালো নেই। তারা অধিকাংশই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। যেহেতু কুচিয়া মাছ স্থানীয়ভাবে খাদ্য হিসেবে কেউ গ্রহণ করে না এবং এটি রপ্তানীযোগ্য পণ্য, তাই এটির বর্তমান চাহিদা না থাকায় বিক্রয় হয় না। পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী ইউনিয়নের ৪০-৫০টি পরিবার এ কাজের সঙ্গে যুক্ত, তথ্য নিয়ে জানা যায় তাদের দিন কাল কষ্টের মধ্যেই যাচ্ছে।

বিষয়টি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা মৎস্য অফিসার ও ক্ষেত্র সহকারীর মাধ্যমে উপজেলা পরিষদকে অবগত করা হয়েছে এবং অালোচনায় জানা যায় ফলপ্রসু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন, সর্বচ্চো সর্তকতা অবলম্বন করুন, মনোবল রাখুন। অাশা করি সকলের সহযোগিতায় অামরা সুদিনের সাক্ষাৎ পাবই।

লেখকঃ জেলা মৎস্য অফিসার,রংপুর।

Exit mobile version