মাদকের মরণ নেশায় ধ্বংস হচ্ছে পারিবারিক বন্ধন ও সমাজ

মাদকের মরণ নেশায়

 জয়তুন নেছা

একটি রাষ্ট্র,একটি সমাজের মূল হচ্ছে এক একটি পরিবার। আমরা জানি একজন মানুষ তার প্রথম শিক্ষা পরিবার থেকেই পেয়ে থাকে। আর এই একটি পরিবারের সদস্য যদি মাদকাসক্ত হয়,তাহলে কতটা প্রভাব পরে পরিবার,সমাজ,দেশের উপর এইটাই ভাবার বিষয়।। আজকাল দেশ যতোই ডিজিটাল হচ্ছে,সমস্যা গুলোও যেনো সে হারেই ডিজিটাল হচ্ছে। সবাই সবার সমাজের প্রতি দায়িত্ব গুলো ভুলে যাচ্ছে। সময় যেনো এসেছে আমি হ্যাপি তো সব হ্যাপি। আমরা খুব কান্না করি সিনেমায় নাটকের কিছু দৃশ্য দেখে,সেসময় খুব আফসোস করি ইস আমি যদি সাহায্য করতে পারতাম তাহলে অন্তত গরিব,দরিদ্র এসব মানুষদের কাঁদতে হতো না! কিন্তু আমাদের পাশে হাজারো এমন মানুষ আছে আমরা তাদের দেখতে পাইনা,তারা নিজ থেকে সাহায্য চাইতে আসলেও কেমন জানি বিরক্ত হয়ে যাই। কিন্তু মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান গুলো সব দিক দিয়েই আলাদা হয়। এরা এসব কষ্ট বুঝতে পারে। সমস্যা তো উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তানদের হয়,তারাই বেশি আসক্ত হয় নেশার জগতে হয়। বাবা মা অঢেল সম্পত্তির মালিক যখন যা চেয়েছে তাই পেয়েছে, আর এভাবেই সব কিছুতে এক্সপেরিয়েন্স নিতে নিতে একদিন সে এ জগতে পা দিয়েও ফেলে। আজ সে নিয়মিত মদ খায়,খাবেনা তো কি? সে বাবা মার একমাত্র ছেলে,কোনো কিছুরে অভাব নেই তার। কোনো বাবা মা চায়না তার সন্তান এমন হোক। যখন বুঝতে পারে তার সন্তান মাদকাসক্ত, তারা সব দিক দিয়েই এবার শাসন করতে শুরু করে কিন্তু শেষের দিকে। বাসায় টাকা না পেলে বন্ধ বান্ধব আত্নিয়দের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। তারা তো উচ্চবিত্ত মানুষ তাদের মান সম্মান টা বেশি হওয়ায় এবার টাকটা তাদের দিতে হচ্ছে। বাবা মা ভাবছে ছেলেকে তো আমরা ঠিক করতে পারলাম না,এবার তাহলে একটা বিয়ে দেই। এরা প্রচুর অর্থের মানুষ তাই বিয়ে দিতেও কোনো সমস্যা হয় না। ছেলের বিয়ে হইলো কিছু দিন সব কিছু ঠিক থাকলো। মেয়েটিও ভাবলো ঠিক এমন তো আমি চেয়েছিলাম। তার ভাবনায় ফাটল ধরলো!! দেখতে লাগলো তার স্বামী রাতে বেলা ড্রয়ার থেকে  কি যেনো বের করে নিয়ে যায়।

পার্ট ২

আস্তে আস্তে দিন যেতে লাগলো।মেয়েটি বুঝতে পারলো তার স্বামীরর পরিবর্তনের কারন। এবার যেন কাহিনি পাল্টায়,পাল্টায় জীবনের গল্প। মেয়েটির রাত কাটে তার স্বামীর অত্যাচারে, এমন একটি রাত যেখানে সে ভালোবাসা না পেয়ে অত্যাচার, আঘাত পেতে শুরু করে। আর সাথে সাথে তার স্বপ্ন গুলোর উপরেও অত্যাচার বেড়ে যায়। রাত কাটে অত্যাচারে আর দিন কাটে কাজ কর্মে। এখন থেকে তার শাশুড়ির স্বভাব যেনো পাল্টাতে থাকে, প্রতিটি কথায় খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। তার কথায় যে মেয়ে তার স্বামীকেকে পরিবর্তন করতে পারেনা সে আবার কেমন মেয়ে? আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না মেয়েটির কাটানো দিন গুলো কেমন যাচ্ছে, সেতো ভয়ে থাকে কখন রাত হয় আবার কখন তার উপর অত্যাচার শুরু হয়। এদিকে যখন তার পুরো শরীর জুড়ে ব্যাথা তার পেটে আসে প্রথম সন্তান। সিনেমায় হলে কাহিনী পাল্টাতো কিন্তু এটাতো জীবন তাই কাহিনী পালটায় না। আর তাই মাদকাসক্ত ছেলেটির অত্যাচারও কমেনা। আমরা বাঙ্গালি মেয়েরা যাকে একবার স্বামী হিসেবে মেনে নেই তারপরে অন্য কাউকে আর মেনে নিতে পারিনা, যা আর অন্য কোথাও খুঁজে পাবেন না। সময় গড়িয়ে যায় মেয়েটি এতদিনে সব কিছু সহ্য করা শিখে গেছে। এখন তার আর কান্না পায়না,এখন সে আল্লাহ্‌ এর কাছে একটাই প্রার্থনা করে তার সন্তান যেনো ভালো থাকে।

*

একদিন সন্তানটিও পৃথিবীতে আসে সময় বদলায়, কিন্তু বদলায় না সেই লোকটি। শিশুটি বড় হতে থাকে।খুব ছোট থাকতেই মেয়ে সন্তান টি বুঝতে পেরে যায় তার বাবা তাকে ভালোবাসে না,আদর করেনা,কোলে নেয়না। অনেকটা সময় দেখে আম্মু কান্না করে আর আব্বু আম্মুকে মারে। এই শিশু মেয়েটি বুঝতে পারে তার পরিবারে রাত মানে ভয়ংকর। অন্য বাচ্চারা যখন বাবার কোলে চড়ে চকলেট খেতে খেতে পার্কে ঘুরে, ঘোড়ায় চড়ে তখন সে কল্পনা করে আজকেও কি আব্বু আম্মুকে মারবে?? আর ভাবে আমি বড় হবো আর আব্বুকে মারবো! সব শিশুরা যখন রাতে বেলা আব্বুকে কাছে পেয়ে অভিমান নিয়ে বলে আজ আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসোনি তো? এখন কান ধরে উঠবস করো, তখন সেই বাচ্চাটা ঘরের কোনে ভয়ে চুপটি মেরে বসে থাকে আর তার মায়ের উপরে অত্যাচার দেখে কান্না করে। আপনি কি ভাবতে পারছেন কত বেশি কস্ট নিয়ে এই সন্তান টি বড় হচ্ছে। না তার কস্ট কমে, না তার মায়ের অত্যাচার। সে বড় হবে কিন্তু তার ছোট বেলার দাগ টি দাগে থেকে যাবে।আর পরবর্তিতে আমরা পাই এমন একটি মেয়ে,যার বিষয়ে শুনা যায় মেয়েটি মানুষের সাথে মিশতে জানে না, মেয়েটি ব্যবহার শিখেনি আরো কত কথা। এই একটি নেশা একটি সমাজ কে ধ্বংস করছে কিভাবে তার একটি নমুনা দেওয়া হলো। আর কতোদিন আর কত ছেলে এভাবে ধ্বংস হবে আর কত মেয়ে কত সন্তান নিজেদেরকে সমাজের বোঝা হিসেবে আবিষ্কার করবে!! এই প্রশ্নটি আমার থেকে গেলো সরকার দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে। আরো কতগুলো জীবন ধ্বংস হওয়ার পর আপনাদের মনে হবে যে, নাহ এর প্রতিকার চাই। সময় এখনি, নিজে ইসলাম বিষয়ে শিক্ষিত হোন,সন্তানদের এ বিষয়ে শিক্ষিত করুন। আর এসব মানুষদের জন্য সমাজে আবার একঘর প্রথাটি চালু হোক এটাই দাবি হোক।

লেখক পরিচিতি: বিবিএ ছাত্রী, ২য় বছর। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *