কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন চত্বরে মৌ পালন মেলা অনুষ্ঠিত

মৌ পালন মেলা

কৃষিবিদ এম. আব্দুল মোমিন

Still life with honey honeycomb pollen and propolis

 

মিলবে পুষ্টি বাড়বে ফলন, আয় বাড়াবে মৌ পালন এই শ্লোগান নিয়ে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন চত্বরে শেষ হয়েছে ৩ দিনব্যাপী মৌ মেলা-২০১৬। ৩৪টি স্টল নিয়ে প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত এই মেলা শেষ হয়  ১ মার্চ ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আয়োজিত এ মেলার উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী বলেন, মৌ চাষে উন্নত প্রযুক্তি ও চাষীর সংখ্যা বাড়াতে পারলে দেশে বছরে ১ লাখ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন সম্ভব। তিনি জানান, বর্তমানে দেশে বছরে মাত্র ৪হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদিত হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত প্রযুক্তি ও মৌ চাষীর সংখ্যা বাড়ালে মধুর উৎপাদন বছরে ১লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা সম্ভব। এতে করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও মধু রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, মৌমাছি ফুলের প্রাকৃতিক পরাগায়নে সাহায্য করে। ফলে কৃষিখাতে ১০ থেকে ১২ শতাংশ উৎপাদন বেড়ে যায়। অথচ বিষয়টি সম্পর্কে প্রান্তিক কৃষকদের অনেকেরই সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাই এ বিষয়ে কৃষকদের আরো সচেতন করে তুলতে হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের আবহাওয়া মৌ চাষের জন্য উপযোগী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, আগে দেশের চাহিদার কথাও বিবেচনা করতে হবে। তারপর রপ্তানির কথা ভাবতে হবে। তবে মৌ চাষ বাড়াতে পারলে আমাদের মধুর চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে। তাছাড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রথম চালানে ভালো মধু দিয়ে পরে ভেজাল মেশানো মধু রপ্তানির প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। উপস্থিত মৌ গবেষকদের উদ্দেশ্যে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এমন কোনো প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা দরকার হবে যেন খুব সহজেই ভোক্তারা ভেজাল মধু নির্ধারণ করতে পারেন। কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, শুধু ওষুধ হিসেবে নয়, মানুষের খাদ্যভাসেও মধুকে যুক্ত করতে হবে।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, মধু এমন একটা জিনিস যেটাতে মানুষ ভেজাল না দিলে মৌমাছি কোনো ভেজাল দিবে না। মৌমাছির ভেজাল দেওয়ার অভ্যাস নাই এরা কোন টেকনোলজিও জানেনা। তারা আমাদের যে জিনিসটা দেবে সেটা একদম খাঁটি। মৌ চাষের সম্ভাবনাকে আরও গতিশীল করতে ‘মৌ মেলা’ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া চাষি ও বাজারজাতকারীদের মধ্য একটি বন্ধনও তৈরি করবে এ মেলা। মিলবে মৌ চাষের নানা তথ্যও।

অনুষ্ঠানে মৌ চাষিরা সঠিক দাম নিশ্চিত, গবেষণা বৃদ্ধি, মৌ চাষের সুফলের তথ্য সরবরাহসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) উদ্যোগে অনুষ্ঠানে মৌ চাষের ওপর ভিডিওচিত্র উপস্থাপন করা হয় ।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আনোয়ার ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস এসোসিয়েশনের সভাপতি এ এফ এম ফকরুল ইসলাম মুন্সী, কৃষি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান, জাতীয় মৌ চাষ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. এবাদুল্লাহ আফজাল প্রমুখ।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আনোয়ার ফারুক মধু চাষের সম্ভাবনা ও গুণাগুণ তুলে ধরে বলেন, মধু প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত বিশুদ্ধ বহুগুণে গুণান্বিত একটি উপাদান। বাংলাদেশে সাধারণত সুন্দরবনে প্রাকৃতিকভাবে মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ ও বাজারজাত করে থাকেন। পাশাপাশি পেশাদার মৌচাষিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৌসুমে মৌসুমে সরিষা, ধনিয়া, তিল, কালিজিরা, লিচু এসব ফসলের জমিতে বা বাগানে মৌবাক্স বসিয়ে মধু আহরণ করেন।

তিনি জানান, বাংলাদেশে ৬ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়, ২০ হাজার হেক্টর জমিতে কালিজিরা, ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে ধনিয়া, ২০ হাজার হেক্টর জমিতে তিল এবং বিপুল পরিমাণ জমিতে লিচু উৎপাদিত হয়। যেখান থেকে মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে মৌমাছি দারুণভাবে ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ মধু আহরণে সহায়তা করে।

গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে মধু রফতানির পরিমাণ ছিল ৫৫০ মেট্রিক টন বলেও জানান এ ঊর্ধতন কর্মকর্তা। যে পরিমাণ সরিষা ফুল ফোটে তা থেকে মাত্র ১০ থেকে ১২ শতাংশ মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সংস্থা বিসিকের আওতায় মৌচাষ সংক্রান্ত মধু উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বিষয়ক একটি প্রকল্প চালু রয়েছে।

এ প্রকল্পের পক্ষ থেকে মৌচাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গুণগত মানসম্পন্ন মৌ বাক্স সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ডিএই ও বিসিকের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে যৌথ কর্মকান্ড শুরু হয়েছে।

কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *