লাভবান ডেইরী ব্যবসা কি করে লোকসানে পরিনত হয়- একটি কেস স্টাডি

গরুর খামার

 

ক্ষতিগ্রস্থ গরুর খামারশাহ এমরান ঃ

স্বপ্ন ডেইরী এন্ড ফিশারিজ

চেয়ারে বসে বসে নতুন বাছুরটার দৌড়ঝাপ দেখছিলাম, দুরে দেখি নজরুল ভাই হোন্ডা নিয়ে যাচ্ছে। আমাকে দেখেই দাড়িয়ে পড়ল…. আমি হাত নেড়ে তাকে বোঝালাম এসে এক কাপ চা খেয়ে যান। মুখে দাড়ি…কেমন যেন অচেনা লাগছিল। অনেকদিন পর ওনার সাথে দেখা হল। চেয়ারে বসে কথা বলতে বলতে এক সময় বললেন, ভাই এই ব্যবসা আর ভাল লাগতেছেনা। আমি কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে ভাই? ওনার ব্যবসা ভাল যাচ্ছেনা। গরুগুলো বিক্রি করে দিতে চায়, কিন্তু যে দামে কিনেছিল সেই মুলধন ই আসছেনা দামে। মন খারাপ…. এরপর সব শুনলাম কিভাবে কিভাবে ওনি ব্যবসা শুরু করেছিলেন।

২০১৫ সম্ভবত জুলাই মাসে ব্যংক থেকে ২৫ লক্ষ টাকা লোন/ঋন নিয়ে ১৩ টি দুধের গরু কেনে সিরাজগঞ্জ থেকে। ৩ লাখ টাকা খরচ করে সেড করে। অভিজ্ঞ কর্মচারী প্রয়োজন বলে সিরাজগঞ্জ থেকেই ২ জনকে মাসিক ২৪০০০/- টাকা বেতনে ফার্মে নিযুক্ত করেন। ১৩ টা গরু থেকে প্রতিদিন ১৪০ কেজি দুধ পেতেন এবং ৪৭ টাকা কেজি দরে প্রতিদিন ৬৫৮০ টাকার দুধ বিক্রি করতেন। মাসে পেতেন ১৯৭,৪০০/-।

ব্যায় ছিল মাসিক: ব্যংকের কিস্তি ৫৫,০০০/-+ বেতন-২৪,০০০+ দানাদার খাবার-৭০,৯৮০/ + খড়- ১২,০০০/- + বিদ্যুত বিল- ৫০০০ টাকা+ অন্যান্য ৩০০০/-…. মোট: ১৬৯,৯৮০/-

মাসিক আয়: ১৯৭,৪০০-১৬৯,৯৮০= ২৭,৪২০/-

ওনি ফার্ম বন্ধ করে দিতে চায়। চালাতে পারছে না। বলতে পারেন ওনার সমস্যাটা কি হয়েছিল? বর্তমানে ওনি ১৩ টা গাভী থেকে প্রতিদিন দুধ পাচ্ছেন ৬৫ লিটার যা থেকে মাসিক আয় আসছে ৯১,৬৫০/- টাকা। কিন্তু ওনার তো মাসিক ব্যায়ই আছে ১৬৯,৯৮০/- টাকা। এখন কি হবে তাহলে অবস্থা? ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর উপায় কি!!! গরু যা আছে তা বিক্রি করেও মুলধন আসবেনা।

এই কেস স্টাডিটা আমাদের জন্য খুবই গুরত্তপুর্ন। আমরা সবাই ব্যবসা না বুঝেই শুরুতেই অন্যের ব্যবসার লাভ দেখে ব্যংক লোন নিয়ে শুরু করে ফেলি ঝুকিগুলো বিবেচনা না করেই। আমরা যারা মধ্যবিত্ত—- ভাই প্লিজ কোনদিন ব্যবসা থেকে লাভ বের না করে ব্যংক থেকে লোন নেবেন না। নিজের যদি অল্প টাকা থাকে সেই অল্প টাকা দিয়েই শুরু করেন ব্যবসা।
কর্মচারী রেখে ব্যবসা করতে হলে মিনিমাম ১ জন কর্মচারীর জন্য ৬ টা দুধের গরু অথবা ফ্যাটেনিং হলে ১০ টা গরু নির্ধারন করে দিতে হবে। ওনি শুরুতেই কিছু না বুঝে ১৩ টা গরু কিনে ২৪,০০০/- টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারী রাখেন সিরাজগঞ্জ থেকে এনে। ওনার উচিত ছিল একজন অভিজ্ঞ আর অন্যজন কম বেতনে অনভিজ্ঞ নেওয়া। সর্বচ্চ ১৫,০০০ /- টাকা মাসিক বেতন।

ওনি বাজার থেকে প্যাকেটজাত দানাদার ফিড কিনে খাইয়েছে। এটা না করে যদি নিজে খাবার বানিয়ে নিত তাহলে প্রতিমাসে ওনার ২০,০০০ টাকা শুধু খাবার খরচ বেচে যেত। এই কথাটা কাল দুক্ষ করে ওনি বারবার বলছিলেন। কোন ঘাস করার ব্যবস্থা নেই। যদি ঘাস করতেন তাহলে খরচ কিছুটা কমিয়ে আনতে পারতেন।

গরু কেনার সময় ব্রোকারদের ক্ষপ্পরে পড়ে গরু প্রতি ২০,০০০/- টাকা বেশী দিয়েছেন। ওনি প্রথমে বুঝতেই পারেনি। সব গরুগুলো একাসাথে কিনে আনার বেশ কিছুদিন পরে বুঝেছেন। প্রতি মাসে ২৭,৪২০ টাকা যে আয় হয়েছিল তা ওনি খরচ করে ফেলেছেন। ওনি একবার ও চিন্তা করেন নি যে ৮ মাস পর গরুর দুধ দেয়া বন্ধ হয়ে গেলে কোথা থেকে টাকার যোগান দেবেন। সব মিলিয়ে এখন খুব খারাপ দিনই কাটাচ্ছেন নজরুল ভাই। অনেক সময় নিয়ে আলোচনা করলাম গতকাল, দেখা যাক কোনভাবে টেকানো যায় কিনা ফার্মটা।

তাই বন্ধুদের আবারো অনুরোধ করছি নতুন ব্যবসা ভালমত না বুঝে কোনভাবেই ব্যংাক লোন নিয়ে শুরু করবেন না। নিজের অল্প টাকা দিয়ে শুরু করেন। যখন বুঝে যাবেন লাভ বের করা যাবে ধীরে ধীরে সময় সুযোগ বুঝে গরু বাড়াবেন……টাকা হাতে থাকলেও একসাথে সব টাকা ইনভেস্ট করবেন না। বিপদের জন্য কিছু সঞ্চয় অবশ্যই রাখতে হবে হাতে। শুধু দুধের গরু কিনলেই হবেনা, পুরো ফার্মের ব্যবস্থাপনা কৌশল—স্থান, শ্রমিক নিয়োগ, বাজার জাত কৌশল অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *