মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) :
বাংলাদেশে বানিজ্যিক ভাবে তিতির পাখি পালনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালযের পোল্ট্রি বিভাগের উদ্যোগে ২০১০ সাল থেকে তিতিরকে সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করার কাজ চলছে। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালযের পোল্ট্রি বিভাগের গবেষকরা তিতির পাখি পালনকে সম্ভাবনাময় হিসেবে জানান দিচ্ছেন।
আর এই সম্ভাবনার অংশ হিসেবে শখের বশে তিতির পাখি পালন শুরু করেছিলেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলাধীন চন্দ্রকোণা ইউনিয়নের হুজুরীকান্দার জানকীপুর এলাকার শিক্ষার্থী তাওহীদুল হক ও পল্লী চিকিৎসক মোঃ খাইরুল হক খোকন। এতে তারা আর্থীক ভাবে লাভবান হয়েছেন, হয়েছেন আত্ম বিশ্বাসী। তাদের দেখা দেখি অনেকেই আগ্রহী হয়েছেন। বিনা ভ্যাকসিনে বা বিনা ঔষধে, স্বল্প বিনিয়োগে, অল্প জায়গায় খোকন লাভবান হওয়ায় উপজেলার অনেকেই এই পাখি পালনে ঝুঁকছেন। ডিম সংগ্রহ কালে তাওহীদুল হকের সাথে কথা হলে সে বলে, আগে সবাই তিতিরকে শখের বশে পালন করলেও বর্তমানে অনেকেই এটাকে বানিজ্যিক ভাবে খামারে পালন পালন করছেন। তিতিরকে দামী কোন খাবার ও সময় দিতে হয় না। শস্য বীজ, শস্যদানা, কচি শাক-সবজি, ফল-মূল, পোকামাকড়, কচি ঘাস ও লতা-পাতা খেয়েই তারা জীবন ধারণ করেতে পারে। তাই শিক্ষার্থীরাও তিতির পালন করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।
তিতির খামারে কর্মরত অবস্থায় খোকনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালের মাঝামাঝি বকশিগঞ্জের কোন এক তিতির খামার থেকে ১৫ দিন বয়সের ১০০ টি তিতিরের বাচ্চা প্রতিটি ৪২০ টাকা দরে কিনে আনেন। তাতে বাচ্চা কিনার দাম, ঘর নির্মাণ, খাবার পাত্র কিনা, খাবার কিনাসহ প্রথমিকভাবে পৌণে দুই লক্ষ টাকা খরচ হয়। ছয় মাসের মধ্যে প্রতিটি তিতির ১২০০ গ্রাম থেকে ১৫০০ গ্রাম ওজনের হয়। যার প্রতিটির বর্তমান বাজার মূল্য ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা। তিনি বলেন, আমি ডিম ও বাচ্চা উৎপাদনের লক্ষ্যেই এই তিতির খামার গড়ে তুলেছি। আর তাইতো ১০০ টি তিতিরের মধ্যে প্রজননের স্বার্থে ১৫ টি পুরুষ তিতির এনেছি। ইতিমধ্যে প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ টি ডিম পেতে শুরু করেছেন। প্রতি হালি ডিম ৩৬০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। তার দেওয়া হিসাব মতে, তার খামারের ৮৫টি স্ত্রী তিতির একসাথে ডিম দিলে প্রতিদিন ৭ হাজার ৬৫০ টাকা থেকে ৮ হাজার ৫০০ টাকার ডিম পাবেন। তাতে ডিম থেকেই তার মাসিক আয় হবে ২লক্ষাধিক টাকা। এই বছরের শেষদিকে তিনি খামার আরও বাড়াবেন বলে ওই খামারের পাশেই নতুন ঘর নির্মণের কাজ শুরু করেছেন। তিনি জানান, এই খামারেই তার সংসাররের সকল খরচ চলেও টাকা আরও সঞ্চয় থাকবে, তাই কৃষি জমিতে আর হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খাটবেন না। খোকনের দেখাদেখি ভূরদী খন্দকার পাড়া কৃষি পণ্য উৎপাদক কল্যান সংস্থার বেশ কয়েক জন সদস্য তিতির পালনের লক্ষ্যে খোকনের কাছে পরামর্শ নিয়েছেন। তাছাড়া মরাকান্দার মনির, হেলাল, গনপদ্দির ফজলুল হক, চিথলিয়ার আলমগীর, কায়দার আফরিন আন্না ও রাব্বি নূর, ধুকুরিয়ার শামীম ও রিয়াদ, জালালপুরের আলাল, নয়া পাড়ার মিনহাজসহ নকলা পৌরসভার কামাড় পট্টি এলাকার বেশ কয়েকজন শখের বশে পারিবারিক ভাবে তিতির পালন করছেন। তিতির পালনে লাভ দেখে তাদের মধ্য থেকে অনেকেই আগামীতে ছোট করে হলেও তিতিরের খামার করবেন বলে জানান।
নকলা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মোঃ শহিদুল আলমের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিতিরকে সংক্রমণ ও পরজীবী সহজে আক্রান্ত করতে পারেনা। ফলে বাড়তি ঔষধের বা ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হয়না। অনুকূল পরিবেশ পেলে প্রতিটি স্ত্রী তিতির বছরে ১২০ টি থেকে ১৫০ টি ডিম দিয়ে থাকে। উন্মুক্ত ভাবে তিতির পালন করতে হলে ৩৫০ টি তিতিরের জন্য এক একর জমির দরকার। আর রাতে ঘরে থাকার জন্য প্রতিটির সাড়েতিন বর্গফুট জায়গা উত্তম। এবিষয়ে কৃষকদের উৎসাহ ও পরামর্শ সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন তিনি। তিনি বলেন, সমান খাবার ও একইসময়ে হাঁস, মুরগির, কবুতরের চেয়ে তিতিরে দ্বিগুণ লাভ পাওয়া যায়। তাই গ্রামীণ কৃষকরা এই পাখি পালনে ক্রমান্বয়ে ঝুঁকছেন।