ইফতেখার আহমেদ ফাগুন
সিলেটে টেকসই মৎস্যখাত শীর্ষক ৩ দিনব্যপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন উদ্বোধন হয়েছে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মত আয়োজিত এই সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মৎস্যখাত’। শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টায় সিলেটের সুবিদবাজারস্থ খান প্যালেস সম্মেলন কেন্দ্রে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুন্ড’র সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সম্মেলনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ মতিয়ার রহমান হাওলাদার। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার বলেন, মৎস্যখাত আমাদের জাতীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার এই খাতে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। মৎস্য খাত শীর্ষক এই সম্মেলন পরবর্তীতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদের পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার মন্ডল। তার বক্তব্যে বলেন, পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে সুলভ মূল্যে যেটি পাওয়া যায় তা মাছ। এ সময় তিনি একটি বিষয়কে গুরুত্ব সহকারে আলোকপাত করেন তা হলো কৃষক পর্যায়ে উৎপাদন বৃদ্ধি। তিনি দাবি করেন কৃষক পর্যায়ে উৎপাদন বাড়াতে আমরা সক্ষম হয়েছি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মলা মাছ ও জলজ খাদ্যের মাধ্যমে অপুষ্টি দূরীকরণে অসামান্য অবদান রেখে বিশ্ব খাদ্য পুরষ্কার পাওয়া বিজ্ঞানী ওয়ার্ল্ডফিশের পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গ্লোবাল লিড ড.শকুন্তলা হরাকসিংহ থিলস্টেডকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। দেশীয় ছোট মাছের গুণাগুনের কথা ব্যক্ত করে ড.শকুন্তলা হরাকসিংহ থিলস্টেড বলেন, দেশীয় মাছের মধ্যে মলা মাছ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। বাংলাদেশ পুষ্টি ঘাটতি পূরণে দেশীয় মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে জানান তিনি। এছাড়াও এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মলা মছ বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও কম্বোডিয়া এবং মায়ানমারের পাওয়া যায়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খঃ মাহবুবুল হক, ওয়ার্ল্ডফিশের আঞ্চলিক পরিচালক ক্রিস্টফার রোজ প্রাইস, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহম্মদ ও সম্মেলন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. এম এম মাহবুব আলম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মৎস্য চাষ ও পুষ্টি, জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ, মৎস্যখাত ও জলবায়ু পরিবর্তন, মৎস্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ৪ টি বিষয়ভিত্তিক অধিবেশন ও মৎস্য সংক্রান্ত গবেষণার সাথে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংযোগ নিয়ে একটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার মোট ৫৩ টি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপিত হয়। একইসাথে গবেষকরা তাদের গবেষণা কার্যক্রমের উপর ২২ টি পোস্টার প্রদর্শন করেন।
এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত, ডেনমার্ক, মালেয়শিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কোরিয়া সহ প্রায় দশটি দেশ থেকে তিনশোর বেশি গবেষক অংশ নিয়েছেন। তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে মৎস্যখাত সংক্রান্ত ১৯৩ টি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করবেন তারা।
আগামীকাল শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫ টায় সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুন্ড’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। প্রধান পৃষ্টপোষক হিসেবে বক্তব্য দিবেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ মতিয়ার রহমান হাওলাদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাফিজ আহমেদ মজুমদার, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন সিলেটের সহকারী হাই কমিশনার নিরাজ কুমার জয়সওয়াল, বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাইদ মাহমুদ বেলাল হায়দার, ডিপ সি ফিশার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনাম চৌধুরী ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহম্মদ। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সম্মেলন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. এম এম মাহবুব আলম।
রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশী ও বিদেশ থেকে আগত গবেষক ও অতিথিবৃন্দ সুনামগঞ্জের মাদার ফিশারিজ খ্যাত প্রাকৃতিক জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ করবেন।
মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও সম্মেলনের আয়োজক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুন্ড জানান, ‘২০১৯ সালে প্রথমবারের মত টেকসই মৎস্যখাত শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন শুরু করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এবার দ্বিতীয়বারের মত সিলেটে এই সম্মেলনের আয়োজন করছি আমরা। এই সম্মেলনের মাধ্যমে সারাবিশ্বে মৎস্যখাত নিয়ে চলমান গবেষণা গুলো উপস্থাপিত হবে এবং পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আগত গবেষকদের পারষ্পরিক মতবিনিময়েরর সুযোগ ঘটবে। আগামীতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মৎস্যখাতের ভূমিকা কি হবে তা নিয়ে আলোচনা হবে এই সম্মেলনে’।