Site icon

সুস্বাস্থ্যের জন্য পেঁপে খান বাড়ির বাইরে ডাক্তার তাড়ান

ড. সালমা papayaলাইজু 

সুস্বাস্থ্যের জন্য পেঁপে

পেপে উষ্ণ মন্ডলীয় ফসল। মধ্য আমেরিকাতে উৎপত্তি মেক্সিকো থেকে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের সর্বত্রই এর চাষ হয়। বর্নে, স্বাদে, পুষ্টিতে ভরপুর অতুলনীয়। আয়ুবেদীয় শ্রাস্ত্রমতে একটি করে পেপে খাও বাড়ী থেকে বদ্যি তাড়াও। ফল, সবজি, স্যুপ, তরকারি, সালাদ, হালুয়া, সরবত, সাবান, ট্রফি প্রসাধনী সামগ্রীতে পেপে ব্যবহৃত হয়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটিতে পেপে সহজেই চাষ করা যায়। তেমন জায়গার প্রয়োজন হয় না। দেশী উন্নত জাতের পেপে সবচেয়ে ভাল। লাগানোর এক বছরের মধ্যে পেপে ফল দিতে আরম্ভ করে, সারা বছর ফল ধরে, পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে প্রত্যেক বাড়ীতে ২/৩ টি পেপে গাছ থাকা খুবই প্রয়োজনীয়।

পেপেতে পেপসিন সদৃশ্য পেপাইন নামক এনজাইম থাকে যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। মাংস ও ডালকে তারাতারি সিদ্ধ করার জন্য পেপে ব্যবহৃত হয়। যকৃতের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য পেপের জুড়ী নেই। যারা বদহজমে ভোগেন তাদের জন্য পেপে মহোঔষধ, পেপেতে আরো রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন- সি, পেপে দৈনন্দিন চাহিদার ২৪% পুরন করে।

১০০ গ্রাম ভক্ষনযোগ্য পেপেতে পুষ্টি উপাদানের পরিমানঃ

পানি ৮৯% ভিটামিন বি-১ ০.০৩ মিঃগ্রাঃ
আমিষ ০.৬% ভিটামিন বি-২ ০.০৩ মিঃগ্রাঃ
শ্বেতসার ১.১% ভিটামিন সি ৫৫ মিঃগ্রাঃ
কর্মশক্তি ৩৫ কেজি/কেলোরি ক্যালশিয়াম ১৮ মিঃগ্রাঃ
এমাইনো ৭৫ গ্রাম রেটিনল সমতুল্য লৌহ ০.৪ মিঃগ্রাঃ

এছাড়া ফাইবার, চিনি, ভিটামিন, পটাশিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে।
আধুনিক বিজ্ঞানে গবেষনায় পেপের আরো চমৎকার পুষ্টিগুন সম্পর্কে জানা গেছে।
১) পেপে ফলিয়েটের একটি ভাল উৎস, এই ফলিয়েটই মানুষের ভ্রুনের ব্রেন গঠনে বিশেষ ভুমিকা রাখে। গর্ভবতী প্রসুতি মা নিয়মিত পেপে খেলে শিশুর ব্রেনের গঠন উন্নত হবে।
২) পেপের মধ্যে ম্যাগনেশিয়াম, কপার, প্যানথোয়েটিক এসিড, ভিটামিন বিকমপ্লেক্স, আলফা এবং বিটা ক্যারোটিন,জিঅ্যান্থান, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং লাইকোপেন আছে।
৩) পেপের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্বাস্থ্য ঝুকি কমায়ঃ স্থুলতা হ্রাস করে এবং মৃত্যুর হার কমায়। দীর্ঘ জীবনের জন্য নিয়মিত পেপে খাওয়া প্রয়োজন।
৪) হাঁপানী দুর করে- গবেষনায় দেখা গেছে শ্বাসকষ্টের জটিলতার সঙ্গে অপুষ্টির সম্পর্ক রয়েছে, নিয়মিত পেপে খেলে হাঁপানী রোগের উপশোম হয়, পেপের বিটা-ক্যারোটিন একটি শক্তি শালী এন্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরকে শক্তিশালী করে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে। ব্রোকলী, ফুটি, কুমড়া এবং গাজরে পেপের মত গুনাবলী রয়েছে।
৫) কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ পেপেতে রয়েছে পর্যাপ্ত ফাইবার যা উচ্চ মাত্রার কোষ্টকাঠিন্যকের তাড়ায়। পরিপাক তন্ত্র পরিস্কার রাখে এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুকি কমায়।
৬) হাড়ের স্বাস্থ্যঃ পেপের ভিটামিন-কে হাড়ের ম্যাটিক্সের প্রোটিনের পরিবর্তন হিসাবে কাজ করে। হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম শোষন করে এবং প্রশ্রাবে ক্যালসিয়াম এ নিঃসরণ কমিয়ে দেয়।
৭) ডায়াবেটিসঃ পেপেতে খুব কম চিনি থাকে যে কারণে এটি ডায়াবেটিসের জন্য ভাল। আধাপাকা পেপে ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়াতে এটি ডায়াবেটিসের জন্য খুবই ভাল।
পেপে ভিটামিন এ একটি চমৎকার উৎস। ১০৯৪ আইইউ/১০০গ্রাম এবং ফ্লেভিনয়েডস যেমন ক্যারোটিন লুটেইন,জিঅ্যান্থানিন এবং ক্রিপটো জান্থানিন, ভিটামিন-এস্বাস্থ্যবান মিউকাস মেমত্রেন এবং চামড়া এবং দৃষ্টি শক্তি ঠিক করে। ফুসফস এবং মুখের গহবরের ক্যান্সার রোধ করে। পেপেতে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স আছে যেমন ফলিক এসিড, পাইরিডক্সিন ভিটামিন-বি-৬, রিফেফ্লোভিন এবং থায়ামিন যা মেটাবলিজমে সাহয্য করে।
পেপের ফ্লেশ ২৫ গ্রাম/১০০ গ্রাম এবং ক্যালসিয়াম থাকে। ভিটামিন-কে শরীরের হার্টরেট, প্রেসার নিয়ন্ত্রন করে
পেপের বীজ দেশী ঔষধ হিসাবে কাজ করে। এই বীজে ক্ষত বিরুদ্ধে কাজ করার উপাদান রয়েছে।
রিউমেটিক রোগ এবং আর্থাইটিস রোগের জন্য পেপে খুব উপকারী। পেপের এন্টি অক্সিডেন্ট রিউমেটিক এবং আর্থাইটিম রোগ প্রতিহত করে।
বয়স কমায়ঃ ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে, পাকা পেপের ক্যারোটিন চামড়া সুরক্ষা এবং বয়সকে ধরে রাখতে সাহায্য করে।
নিয়মিত পেপে খেলে টাক মাথায় চুল গজায়, ভিটামিন-এ চুলের যতেœ অতুলীয়। পেপের ভিটামিন-এ চুল গজাতে সাহয্য করে।
ইনস্যুলের কাজ করেঃ পেপের ফুল পরিষ্কার করে ধুয়ে হালকা ভেজে খেলে শরীরের প্রাকৃতিক ইনস্যুলিন হিসাবে কাজ করে। নিয়মিত খেলে বাড়তি ইনস্যুলিনের প্রয়োজনীয় হয় না।

কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম

Exit mobile version