শাহ এমরান শাহ
সেলসম্যানের চাকরী ছেড়ে এখন নিজেই ব্যবসা করছে
কিছু দিনপর পরই ফোন আসে মাঝে মাঝে রিসিভ করি, মাঝে মাঝে করিনা। একদিন ফোন ধরে বললাম তুই কি আমাকে ওই ৫০০/- টাকার জন্য এখনও ফোন দিস। ছেলেটা বলল, না স্যার। আপনেরা কেমন আছেন তা জানার জন্য ফোন দেই। উত্তরে বললাম, চাকরী করবি? আমার এক বন্ধুর দোকানে সেলস কর্মচারী লাগবে। ছেলেটা বললো, স্যার আমার নিজেরই এখন ২ জন কর্মচারী। যে সেলসম্যানের চাকরীটা করতাম তা ছেড়ে দিয়ে নিজেই ব্যবসা করতেছি।
আমিতো শুনে রীতিমত শোয়া থেকে উঠে বসলাম। জিজ্ঞেস করলাম, কিরে কিভাবে কি করলি। ছেলেটা বললো, স্যার আমি যার পন্যগুলো বিক্রি করতাম তার থেকে ডিলারশীপ নিয়ে নিছি এবং পাশাপাশি আরো এমন ২ টা কোম্পানীর পন্যের ডিলারশীপ। আমি ওদের পন্য বিক্রি করে কমিশন পাই।
ছেলেটার নাম শামীম, ছবির বাম দিকের ছেলেটা, বয়স ১৫ হবে। নিজের নাম লিখতে পারে আর এক-দুই গুনে মোটামুটি হিসাব করতে শিখেছে। দেড় বছর আগে আমার খামারের কর্মচারী ছিল। ওকে পেয়েছিলাম আমার এক আত্বীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে। ছেলেটা আমাকে এসে বলেছিল স্যার আমি আপনার খামারে কাজ করে চাই। জিজ্ঞেস করেছিলাম এত কাজ থাকতে তুমি কেন খামারে চাকরী চাও, আর এখানেতো কাজ করছো। শামীম। উত্তরে বললো, স্যার আমি গ্রামে একটা খামার করতে চাই গরু, ছাগল, মাছ আর মুরগীর এজন্য।
শামীম প্রায় ৪ মাস কাজ করেছিল আমার খামারে এরপর একদিন না বলেই উধাও। শুনলাম সে ঢাকায় কোন এক ছোট কোম্পানীতে সেলসম্যানের চাকরী নিয়েছে, বেতন ৬০০০/- টাকা। বাড়িতে পাঠায় ৪০০০/- টাকা বাবা-মাকে আর নিজের জন্য রাখে ২০০০/- টাকা। বেশীদিন আগের কথা না একবছরের মধ্যে এই ১৫ বছরের ছেলেটা ডিলারশীপ নিয়ে নিজেই ব্যবসাশুরু করেছে এবং আজ তার নিজের ২ জন কর্মচারী। ছেলেটা ভাল করবে আমি ভেবেছিলাম, কিন্তু শূন্য হাতে এত দ্রুত ভাল করবে আমার ধারনা ছিলনা।
ডিলারশীপ হয়তো ছোট কোম্পানীর, কিন্তু শামীমের মধ্যে ছিল নিজে কিছু করার একাগ্রতা, বিচক্ষনতা। প্রশ্ন করলে বলতো, আমাকে দ্রুত একটা কিছু করতে হবে মায়ের অনেক টাকা ঋন। কাজ যত পরিশ্রমেরই হোক না কেন আমি করতে পারবো। শামীর ঠিক দেড় বছরে প্রমান করে দিয়েছে যদি লক্ষ্য স্থির থাকে, ধৈর্য আর একগ্রতা থাকে অনেক অসম্ভব কাজকেও সম্ভব করা যায়।