অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকা টিকা গ্রহণকারী কোভিড রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মূল্যায়ন

অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকা টিকা

অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকা টিকা

কৃষি সংবাদ ডেস্কঃ

অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকা টিকা ঃ চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)- এর মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ এর নেতৃত্বে এক দল গবেষক উপরোক্ত বিষয়ে দীর্ঘ দুইমাস ধরে গবেষণা করেন। গবেষণা দলের অন্য সদস্যরা হলেন প্রফেসর ড. শারমিন চৌধুরী, ডাঃ মোহাম্মদ খালেদ মোশাররফ হোসেন, ডাঃ ইফতেখার আহমেদ রানা, ডাঃ ত্রিদীপ দাশ, ডাঃ প্রনেশ দত্ত, ডাঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম, ডাঃ তানভীর আহমদ নিজামী। গবেষণায় তারা চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর অঞ্চলে অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকা টিকা গ্রহণকারী ও টিকা গ্রহণ না করা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের তুলনামূলক স্বাস্থ্যঝুঁকির মূল্যায়ন করেন। সিভাসু ও চাঁদপুর কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ ল্যাবে গত ২২ এপ্রিল ২০২১ থেকে ২২ জুন ২০২১ পর্যন্ত মোট ১২৯৩৬ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যার মধ্যে ২১৩৭ (১৬.৫২%) জনের শরীরে SARS-CoV-2 বা নোভেল করোনা ভাইরাস এর উপস্থিতি শনাক্ত হয়। উক্ত কোভিড-১৯ পজিটিভ ব্যক্তিদের মধ্যে কন্টাক্ট ট্রেসিং এর মাধ্যমে মোট ১০৯৫ জনের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সমস্ত তথ্য ও উপাত্ত সম্পূর্ণরূপে পর্যবেক্ষণ করে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৯৬৮ জন কোভিড-১৯ এর টিকা গ্রহণ করেন নি। অন্যদিকে, ৬৩ জন এমন ব্যক্তি পাওয়া যায়, যারা বিভিন্ন সময়ের মধ্যে নির্ধারিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ডের শুধুমাত্র ১ম ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন এবং ৬৪ জন ১ম ও ২য় উভয় ডোজ টিকা গ্রহণ করেছিলেন। গবেষণায় আরো পাওয়া যায় যে, সংগৃহীত সমস্ত নমুনার মধ্যে ১ম ও ২য় ডোজ টিকা গ্রহনকারীদের কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের হার মোট নমুনা পরীক্ষার যথাক্রমে ০.৪৮ এবং ০.৪৯ শতাংশ ছিলো।

গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, কোভিড-১৯ টিকা না নেওয়া রোগীদের মধ্যে ১৩৭ জনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয়েছে। যেখানে ১ম ও ২য় ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে যথাক্রমে ৭ জন ও ৩ জন রোগী কে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত টিকা অগ্রহণকারী রোগীদের ৮৩ জনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট পরীলক্ষিত হয় এবং তাদের মধ্যে ৭৯ জনের অতিরিক্ত অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন হয়। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা সর্বনিম্ন ৭০% পরীলক্ষিত হয়।

অপরদিকে টিকা গ্রহণকারী রোগীদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন স্বাভাবিক (৯৬.৭%) পাওয়া যায়। উপরন্তু, টিকা অগ্রহণকারী হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে ৭ জনের আই সি ইউ সেবার প্রয়োজন হয়, অপরদিকে টিকা গ্রহণকারী রোগীদের কোন ধরণের আই সি ইউ সেবার প্রয়োজন হয়নি। টিকা অগ্রহণকারী রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সময়কাল সর্বোচ্চ ২০ দিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়েছে, উক্ত গবেষণায় পাওয়া যায়, যে সর্বমোট ১০ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে তারা কেউই ১ম ও ২য় ডোজ টিকা গ্রহণ করেননি। গবেষণায় আরো দেখা যায়, যে সমস্ত টিকা অগ্রহণকারী কোভিড-১৯ রোগী পূর্বে থেকে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় (কো-মরবিডিটি) ভুগছিলেন তাদের মধ্যে করোনার সংক্রমণের হার ছিলো ৭৬.৭ শতাংশ, যা টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ১২শতাংশ পরীলক্ষিত হয়।

গবেষণার ফলাফল থেকে জনসাধারণের নিকট এই ইতিবাচক বার্তা উপস্থাপন করা যায় যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক যে টিকা বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে, এটি টিকা গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে পুনরায় করোনা আক্রান্তের হার নিন্মমুখী করার পাশাপাশি কেউ যদি কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয় তবে নিঃসন্দেহে তার মৃত্যুঝুঁকি কমাবে বলে আশাবাদী। এছাড়াও টিকা অগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের অধিকাংশেরই বয়স পঞ্চাশ বছরের বেশি ছিলো। অতএব, টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের (সিনিয়র সিটিজেন) প্রাথমিক ভাবে টিকার আওতায় আনা গেলে করোনার স্বাস্থ্য এবং মৃত্যুঝুঁকি অনেংকাংশে কমে আসবে বলে গবেষকরা উপলব্ধি করেন। এই ধরনের উচ্চ গবেষণা বৃহৎ পরিসরে পরিচালনা করার মাধ্যমে টিকা প্রয়োগের পরে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাসের বিশদ তথ্য পেতে সহায়ক হবে যা বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Advisory Editor

Advisory Editor of http://www.krishisongbad.com/

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *