কৃষি সংবাদ ডেস্কঃ গত কয়েক ধরে পুরো দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলাতে ব্যাপক আকারে সূর্যমুখীর চাষ হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় বরগুনা জেলায় চলতি মৌসুমে ১৮২২ একর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করা হয়েছে। বরগুনা সদর উপজেলায় ৪৩০ একর, আমতলীতে ৩৮৫ একর, বেতাগীতে ৩৭৫ একর, বামনায় ৩০০ একর, পাথর ঘাটায় ৩৩২ একর জমিতে সূর্যমূখীর চাষ করেছেন জেলার ২৮২৮ জন কৃষক। কম পরিশ্রম ও কম অর্থ বিনিয়োগ করে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। সূর্যমুখী চাষ কৃষি অর্থনীতিতে সমৃদ্ধির মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে কৃষক ও কৃষিবিদরা জানিয়েছেন।
জেলার কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচী সূর্যমুখী চাষকে জনপ্রিয় করতে কাজ করছে।
সূর্যমুখী চাষে কোন ঝুঁকি নেই। ভোজ্য তেল ও সব ধরনের সবজির সঙ্গে খাওয়া যায়। পুষ্টিমান অনেক অনেক গুণে বেশি। কোলেস্টেরলমুক্ত তেল। এ অঞ্চলের কৃষকের কাছে লাভজনক কৃষি ফসল হিসেবে সূর্যমুখী চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
আমতলী উপজেলার পূর্বচিলা গ্রামে আউশ ও আমন ধানের চাষ ছাড়া কৃষক কোন অর্থকরী ফসল ফলানোর চিন্তা মাথায় নেয়নি। কৃষকের কাছে বিকল্প কোন চাষযোগ্য ফসল ছিল না। ব্র্যাক তাদের বিকল্প হিসেবে সূর্যমুখী চাষ করার সুযোগ তৈরি করে। এই সূর্যমুখী চাষের সুবাদে দুই ফসলি জমি তিন ফসলিতে পরিণত হয়েছে।
ব্র্যাকের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচীর পটুয়াখালী-বরগুনা অঞ্চলের এলাকা ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন মোল্লা জানান, সূর্যমুখীর চারা রোপণের ১১৫ দিনের মধ্যে ফসল পাওয়া যায়। মূলত প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সূর্যমুখীর চাষ করা হচ্ছে। সূর্যমুখী ফুলের দানা থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদন করা হয়। এছাড়া সর্ষে বাটার মতো করে সূর্যমুখী ফুলের দানা খাওয়া যায়। সূর্যমুখী গ্রামের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনছে।
তিনি আরও জানান, এক একর জমিতে সূর্যমুখী চাষে খরচ পড়ে প্রায় ১২ হাজার টাকা। একরে সূর্যমুখী উৎপাদন হয় ৩৩-৩৫ মণ। একমণ সূর্যমুখী ফুলের বীজের বাজার মূল্য প্রায় ১৩-১৪ শ টাকা। একর প্রতি উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের প্রায় কমবেশি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ থাকে। সূর্যমুখী ফুলের বীজ সংগ্রহ করার পর বিশাল বিশাল গাছগুলো জমিতে পচিয়ে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে জমির জৈবসারের ঘাটতি পূরণ হয়। অনেক কৃষক পরিবার তার দৈনন্দিন জীবনে রান্নার কাজের জ্বালানি হিসেবে সূর্যমুখির খড়ি ব্যবহার করে থাকে। এতে করে জ্বালানি কাঠের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা বদরুল হোসেন জানান, নতুন লাভজনক ফসল চাষে কৃষককে প্রেরণা যোগাতে মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এই লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে মাঠ পর্যায়ে দু’ফসলা জমিতে কীভাবে বছরে ৩টি অর্থকরী কৃষি ফসল খাদ্য শষ্য চাষ করা যায় তা নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সফলতাও এসেছে।
বরগুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অশোক কুমার হালদার জানান, সূর্যমুখী চাষে কৃষক পরিবারগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে। সূর্যমুখী চাষ গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। কৃষক পরিবারগুলো ফুলচাষে লাভের মুখ দেখায় সূর্যমুখী ফুল চাষে ঝুঁকে পড়েছে। সূর্যমুখী চাষ অর্থনৈতিকভাবে খুবই লাভজনক।
কৃষির আরো খবরাখবর জানতে আমাদের পেইজে লাইকদিনঃ facebook.com/krishisongbad.com