কৃষিবিদ এম এ মজিদঃ
আধুনিক বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জেনে রাখা উচিত দেহকে সুস্থ-সবল রাখতে হলে ফলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। পুষ্টি বিজ্ঞানিদের মতে এক জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক মোট খাদ্য শক্তি চাহিদা ২২২২ কিলোক্যালোরি এর মধ্যে কমপক্ষে ২.৫% (৫৫.৫৫ কিলোক্যালোরি) ফল থেকে আসা উচিত। কিন্তু আমরা বাংলাদেশে গড়ে ফল থেকে পাচ্ছি মাএ ১% (২২.২২ কিলোক্যালোরি)। শুধু খাদ্য হিসাবে নয় জীবন যাএার মান উন্নয়নে, চিকিৎসা শা¯েএ, অর্থনীতি, সামাজিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদিতে ফল বিভিন্ন ভাবে অবদান রাখছে। বিভিন্ন পুষ্টি বিজ্ঞানি ও লেখকের জ্ঞানের আলোকে ফলের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো ঃ
(১) পুষ্টির উৎস ঃ বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও খনিজের সবচেয়ে সহজ ও সস্তা উৎস হলো ফল। প্রায় সব ফল রান্না ছাড়া খাওয়া যায় বলে পুষ্টি উপাদান সরাসরি দেহে গ্রহণ করা যায় এবং দেহকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। ফলের মধ্যে বিদ্যামান উপাদান যেমন শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, পানি ইত্যাদি দেহে সরবরাহ করে দেহকে সুস্থ রাখে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকার খনিজ যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস ইত্যাদি দেহের বিপাকীয় কার্যাবলি স্বাভাবিক রাখে।
(২) উৎপাদন বৃদ্বিতে ঃ দানাজাতীয় শস্যের থেকে বেশীর ভাগ ফলের উৎপাদন বেশী। তাই ফল চাষে দেশে সামগ্রিক ভাবে খাদ্যের উৎপাদন বেশী হয়। উদাহরন হিসাবে বলা হেক্টর প্রতি গমের ফলন ২-৩ টন, ঐ পরিমান জমিতে কলা ও পেয়ারার ফলন যথাক্রমে ১৫-২০ টন ও ৮-১০ টন।
(৩) আয় বৃদ্বিতে ঃ যেহেতু সমপরিমান জমিতে মাঠ শস্য অপেক্ষা গড় ফলন বেশী এবং ফলের মুল্যও অনেক বেশী সেহেতু তা থেকে স্বভাবিক ভাবে আয়ও অনেক বেশী। এ ছাড়া ফলের মৌসুম ছাড়া বাকী সময় আন্তঃশস্য যেমন আদা, হলুদ, শাক-সবজি প্রভৃতি চাষ করে বাড়তি আয় করা যায়।
(৪) ন’তন শিল্প স্থাপনে ঃ একটি দেশের উন্নতি সাধন করতে হলে শিল্প স্থাপন করা অতি জরুরী। এ ক্ষেএে ফলভিত্তিক শিল্প স্থাপন করে ( যেমন আম, কাঠাল, লিচু,কলা,নারিকেল, বাদাম প্রভৃতি ) দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্ব দুর করা যায় এবং উৎপাদিত পণ্য বিদেশে বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
(৫)ঔষধ হিসাবে ঃ বিভিন্ন প্রকার ফল যেমন আম, পেঁপে, বেল, আমলকি, ইত্যাদি ঔষধ হিসাবে গুরুত্ব পূর্ণ। শিশুদের দৈহিক বৃদ্বিতে ফল অতি প্রয়োজণীয়। স্কার্ভি, বেরিবেরি, রাতকানা, ব্রংক্রাইটিস, জ্বর, পেটের পীড়া প্রভৃতি রোগ নিরাময়ে ফল কাজ করে।
(৬)অনুষ্ঠানে ঃ জন্ম বার্ষিকী, বিবাহ উৎসব, বিবাহ বার্ষিকী, জামাই ষষ্ঠী প্রভৃতি অনুষ্ঠানে আপ্যায়নের জন্য ফল ব্যবহার হয়ে থাকে। এ ছাড়া হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন পূজা পার্বনে ফল ও ফল গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার হয়ে থাকে।
(৭) পতিত জমির সঠিক ব্যবহার ঃ এমন কিছু জমি আছে যাতে স্বার্থক ভাবে মাঠ শস্য জন্মানো যায় না যেমন বাড়ির উঠান, বাড়ির আশপাশ্ব, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন স্থান ( বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মক্তব, মাদ্রাসা, মসজিদ, মনন্দির, গির্জা, পেগোডা ইত্যাদি), রাস্তার ধার, বাঁধ, পুকুর ইত্যাদি স্থানে ফল গাছ লাগিয়ে জমির সঠিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
(৮) জাতীয় অর্থনীতিতে ঃ বাংলাদেশে জাতীয় অর্থনীতিতে ফলের অবদান অনেক। বাংলাদেশে ফলের আওতায় রয়েছে মোট চাষ যোগ্য জমির প্রায় চার (৪) ভাগ জমি; কিন্তু জাতীয় অর্থনীতিতে মোট ফসলভিত্তিক আয়ের প্রায় দশ (১০) ভাগ আসে ফল থেকে। ফল গাছ মোট আবাদকৃত জমির প্রায় ৪ ভাগ জমিতে থাকলেও ইহা দেশে মোট খাদ্য উৎপাদনের প্রায় সাত (৭) ভাগ যোগান দেয় এবং যা মোট জিডিপির প্রায় ২.৫০ % যোগান দেয়। এ থেকে বুঝা যায় যে, জাতীয় অর্থনীতিতে ফলের অবদান অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
উপরোক্ত বিষয়গুলি ছাড়াও ফলের অনেক গুরুত্ব আছে যা সহজে বলে শেষ করা যাবে না; যেমন- ছায়া প্রদান করা, অতি বৃষ্টি, ঝড়ের তীব্রতা কমানো, মাটির গুনাবলি উন্নত করা, ভূমিক্ষয় রোধ করা, আসবাপএ তৈরী, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা ইত্যাদিতে ফল গাছের গুরুত্ব অপরিসীম।
লেখক ঃ প্রভাষক, কৃষিশিক্ষা বিভাগ, নাটোর সিটি কলেজ, নাটোর। মোবাইল ঃ ০১৭২২-৪০৩২২০