অ্যাকুরিয়ামে বাহারি মাছের রোগব্যধিতে করনীয় নানা বিষয় (শেষ পর্ব)

অ্যাকুরিয়ামে বাহারি মাছের রোগব্যধিতে

অ্যাকুরিয়ামে বাহারি মাছের রোগব্যধিতে

রোগ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার

অ্যাকুরিয়ামে বাহারি মাছের রোগব্যধিতে
অন্য মাছের ন্যায় বাহারি মাছেও রোগ হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই অ্যাকুরিয়ামকে সবমসয় জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। এ জন্য ফরমালিন, ডেটল, সেভলন, লবণ এসব ব্যবহার করতে পারেন। তবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়। মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এক ধরনের তরল ভিটামিন পাওয়া যায়। দেখতে গোলাপি রঙের। এগুলোর দু’তিন ফোঁটা খাবারের সাথে মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে। এরপর খেতে দিলে ভালো হয়। যদি রোগ হয়েই যায়, তখন চিকিৎসা জরুরি। অ্যাকুরিয়ামে পালিত মাছে যেসব রোগ হতে পারে; এর মধ্যে লেজ পচা, অ্যাঙ্কর, কোষ্ঠকাঠিন্য, সাদা দাগ রোগ অন্যতম। এসব রোগের লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার একেক করে দেয়া হলো-

লেজ পচা রোগ: অ্যাকুরিয়ামে পালিত মাছের মধ্যে লেজ পচা রোগ বেশি হয়। ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগের কারণ। তবে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে এর প্রকোপ বেশি। প্রথমে লেজ কিংবা পাখনায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পরে লেজ আস্তে আস্তে পচন ধরে। প্রতিকার হিসেবে অক্সি সাইক্লিন গ্রুপের যে কোনো ওষুধ প্রয়োগ করলে উপকার পাওযা যায়। তবে আক্রমণের তিব্রতা বেশি হলে টেট্টাসাইক্লিন ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি ক্যাপসুলের ভেতরে থাকা পাউডার পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ওষুধ ব্যবহারের পর অ্যাকুরিয়ামের পানির রঙ হলুদ অথবা লালচে বর্ণ, সেইসাথে পানির উপর ফেনা জমতে পারে। এতে কোনো ক্ষতি নেই। শুধু ফেনা সরিয়ে ফেললেই হবে।

অ্যাঙ্কর: মাছের পেটের নিচে পাখনার কাছাকাছি কিংবা লেজের আগের অংশে লাল ফুসকুরি দেখা যায়। পরে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। এরপর ওখান থেকে গাছের শিকড়ের ন্যায় বের হয়। প্রতিকার হিসেবে লেজ পচা রোগের ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করলে কয়েক দিনের মধ্যে আক্রান্ত মাছ সুস্থ হয়ে যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ: এ রোগে মাছের পেটে গ্যাস হয়ে ফুলে যায়। খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয়। মলত্যাগে অসুবিধা হয়। প্রতিকার হিসেবে খাবার পরিবর্তন জরুরি। সাধারণত বাজার থেকে কেনা লাল ও সবুজ রঙের দানাদার খাবার পরিবর্তন করে খাওয়াতে হবে। খাবার হিসেবে জীবন্ত ওয়ার্ম এবং কৌটাবদ্ধ মৃত ওয়ার্ম (প্রক্রিয়াজাতকৃত) ব্যবহার করলে ভালো হয়।

সাদা দাগ রোগ: এ রোগ হলে মাছের শরীরে সাদা দাগ দেখা যায়। এক ধরনের পরজীবীর কারণে এ রোগের সৃষ্টি। এর আক্রমণ শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়। এমনকি মাছ মারাও যেতে পারে। প্রতিকার হিসেবে আলাদা একটি পানির পাত্রে পরিমাণমতো ফরমালিন এবং ক্লোরাইড সল্ট মিশিয়ে আক্রান্ত মাছকে প্রায় আধা ঘন্টা সময় গোসল করাতে হবে। এ কাজ সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত দিনে দু’বার করতে হবে।

অ্যাকুয়ারিয়াম পরিষ্কার রাখা এবং পানি পরিবর্তন করাকে কেউ কেউ ঝামেলা মনে করেন। আসলে এ কাজের জন্য সপ্তাহের ছুটির দিনই যথেষ্ঠ। শুধু প্রয়োজন ইচ্ছেশক্তি এবং কিছুটা সময় বের করে নেয়া। এর ফলাফল: দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ, সেইসাথে মনের প্রশান্তি । এমন সুযোগ হতে আমরা বঞ্চিত না হই।

লেখক: টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট, কৃষি তথ্য সার্ভিস ও পরিচালক, কৃষিবিষয়ক আঞ্চলিক অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ
বেতার, বরিশাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *