অধিক ফলনের জন্য আউশ ধানের সার ব্যবস্থাপনায় করনীয়

আউশ ধানের সার

ড. এম. মনজুরুল আলম মন্ডল*

আউশ ধানের সার

ভাল ফলনের জন্য সুষম সারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সার প্রয়োগ করতে দু’টি বিষয়ের প্রতি বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন। প্রথমত মাটির উর্বরতার মান যাচাই এবং ধানের জাত, জীবনকাল ও ফলন মাত্রার উপর ভিত্তি করে সারের মাত্রা ঠিক করা। দ্বিতীয়ত, সারের কার্যকারীতা বৃদ্ধির জন্য কোন সার কখন ও কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে তা নির্ধারণ করা। মাটির উর্বরতা ও ফলনের লক্ষ্যমাত্র্র উপর ভিত্তি করে সারের মাত্রা কম-বেশী হতে পাগুটি ইউরিয়া দিচ্ছেরে। জৈবসার যেমন ধৈঞ্চা বা ডাল জাতীয় ফসল, গোবর বা পচা আবর্জনা ব্যবহারের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। জৈব সারের সাথে রাসায়নিক সার সমন্বয় করে ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় ও ভাল ফলন পাওয়া যায়।

সারের মাত্রাঃ প্রতি বিঘায় ইউরিয়া ১৭-২০ কেজি, টিএসপি ৭-১০ কেজি, পটাশ (এমওপি) ১০-১৩ কেজি, জিপসাম ৫-৭ কেজি এবং দস্তা ০.৫-০.৭ কেজি।

সার প্রয়োগের নিয়মাবলীঃ ধান গাছের বাড়-বাড়তির বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন মাত্রায় ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয়। প্রথম দিকে কুশি গজানোর সময় ইউরিয়া সার প্রয়োগ করলে তা থেকে গাছ প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন গ্রহণ করে কার্যকরী কুশির সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। ইউরিয়া সার ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, প্রথম দিকেই চারার কুশির সংখ্যা বাড়ানো। কারণ সাধারণত প্রথম দিকের কুশিতেই ছড়া ভাল হয়। তাই প্রথম দিকে কুশি বাড়ানো এবং সেসব কুশিকে সবল রাখার জন্য ১ম কিস্তির ইউরিয়াসহ (মোট ইউরিয়ার ১/৩ অংশ) অন্যান্য সব প্রয়োজনীয় সার জমি তৈরীর শেষ পর্যায়ে ছিটিয়ে প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালবাবে মিশিয়ে দিতে হবে। তবে বেলে মাটিতে পটাশ সার দু’কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। মোট পটাশ সারের তিনভাগের দু’ভাগ জমি তৈরীর শেষ চাষের সময় এবং বাকী এক তৃতীয়াংম কাইচ থোড় আসার ৫-৭ দিন আগে প্রয়োগ করতে হবে। দস্তা সার ফসলচক্রের কোনো একটিতে প্রয়োগ করলে তা পরবর্তী দু’টি ফসরের জন্য প্রয়োগ না করলেও চলবে। সার দেয়ার সময় অবশ্যই মাটিতে প্রচুর রস থাকা প্রয়োজন। শুকনো জমিতে কিংবা জমিতে বেশী পানি থাকলে অথবা ধানগাছের পাতায় পানি জমে থাকলে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা ঠিক নয়। ইউরিয়া সার মাটিতে ক্ষণস্থাযী এবং অপচয় হয়ে যাওয়ার আশাঙ্কা খুব বেশী। তাই ধান চাষে ইউরিয়া সার সাধারণত তিন কিস্তিতে সমান ভাগে ভাগ করে প্রয়োগ করতে হবে। তবে বেলে মাটিতে চার কিস্তিতে প্রয়োগ করাই উত্তম। ইউরিয়া সার ছিটানোর পর হাত দিয়ে বা নিড়ানি দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারলে ভাল ফলন আশা করা যায়। মাটির সাথে সার মিশানোর ২-৩ দিন পর জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি রাখা দরকার। যদি কোন কারণে গন্ধক বা দস্তা ব্যবহার করা না হয়ে তাকে, তাহলে গাছের গন্ধক/দস্তার অভাব জনিত লক্ষণ বুঝে সার দিতে হবে।

গন্ধক এবং দস্তা সার প্রয়োগঃ ইউরিয়া সার প্রয়োগ করার পরেও ধান গাছ যদি হলদে থাকে এবং বাড়-বাড়তি কম হয় তাহলে গন্ধকের অভাব হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসাবে জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। অতঃপর বিঘাপ্রতি ৮ কেজি জিপসাম সার উপরি প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায। যদি ধান গাছ মাঝে মধ্যে খাটো বা বসে যায় এবং পুরনো পাতায় মরচে পড়া বাদামী রং থেকে কমলা রং ধারণ করে এবং ধানের কুশি কম থাকে তখন দস্তার অভাব হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। সে ক্ষেত্রেও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসাবে জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। অতঃপর বিঘাপ্রতি ১.৫ কেজি দস্তা সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

গুটি ইউরিয়া ব্যবহারঃ গুটি ইউরিয়া হলো, ইউরিয়া সার দিয়ে তৈরী বড় আকারের গুটি যা দেখতে ন্যাপথালিন ট্যাবলেটের মতো। গুটি ইউরিয়া সার কম লাগে। আবার গুটি ইউরিয়া জমিতে একবারই প্রয়োগ করতে হয়। এরপর সবসময় গাছের প্রয়োজন অনুযায়ী নাইট্রোজেন সরবরাহ থাকায় গাছের কোন সুপ্ত ক্ষুধা থাকে না। গুটি ইউরিয়া প্রয়োগের পূর্ব শর্ত হলো, ধান রোপন করতে হবে সারিবদ্ধভাবে। সারি থেকে সারি এবং গোছা থেকে গোছার দূরত্ব হবে ৮ ইঞ্চি (২০ সে.মি.)। আউশ ও আমন মৌসুমে চারা রোপনের ৭-১০ দিনের মধ্যে প্রতি চার গোছার মাঝখানে ৩-৪ ইঞ্চি কাদার গভীরে গুটি পুতে দিতে হবে। জমিতে সব সময় প্রয়োজনীয় ১-১/২ ইঞ্চি (২-৩ সেন্টিমিটার) পানি রাখতে হবে। গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে বিঘা প্রতি নাইট্রেজেনের মাত্রা দাড়ায় ১২-১৫ কেজি। ফলে আউশ মৌসুমে বিঘা প্রতি ৫-৭ কেজি ইউরিয়া সাশ্রয় হয়।
*প্রিন্সিপাল সায়িন্টিফিক অফিসার, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ, মোবাইলঃ ০১৭১৬৭৪৯৪২৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *