মো. মোশারফ হোসেন, শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার সব কৃষক আমন ধানের চারা রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ বীজতলা থেকে চারা তুলছেন, কেউবা জমিতে সেচ ও চাষ-মই দিয়ে সমান করছেন, কেউবা আবার চারা রোপনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কৃষি অফিসের তথ্য মতে, গত বছরের ১২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের অর্জনটাই এবারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।
বৃষ্টি নির্ভর আউশ আবাদের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা আউশ মৌসুমের ধান কাটার পরে ওই সব জমিতে আমন ধান রোপন করছেন। ফলে গত ৩/৪ সপ্তাহ ধরে চলেআসা আমন ধানের চারা রোপনের কাজ চলবে আরও ২/১ সপ্তাহ, এমনটাই জানালেন অনেক কৃষক।
কৃষক জানান, বৃষ্টির পানিতে আমন ধানের চাষ ভালো হয়। আমনে সেচ খরচ সাধারনত কম লাগে। ফলে অল্প খরচে বেশি লাভবান হন কৃষকরা। সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার গনপদ্দী, নকলা, উরফা, গৌড়দ্বার, বানেশ্বরদী, পাঠাকাটা, অষ্টধর ও চন্দ্রকোণা ইউনিয়নসহ পৌর এলাকায় চলছে আমন ধানের চারা রোপনের ধুম।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় গত বছরের অর্জিত ১২ হাজার ৩৫০ হেক্টর আবাদকেই এবারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। তারমধ্যে হাইব্রিড জাত ৯০০ হেক্টর, উফশী জাত ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমি। এতে সম্ভাব্য উৎপাদিত ধান থেকে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে- ২৮ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন। এতে হাইব্রিড জাতের চাল প্রতিহেক্টরে ৩.৪৫ মেট্রিকটন করে মোট ৩ হাজার ১০৫ মেট্রিকটন, উফশী জাতের চাল প্রতি হেক্টরে ২.৭৮ মেট্রিকটন করে মোট ১৮ হাজার ৭০ মেট্রিকটন এবং স্থানীয় জাতের চাল প্রতিহেক্টরে ১.৫০ মেট্রিকটন করে মোট ৭ হাজার ৪২৫ মেট্রিকটন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। যদিও উৎপাদন কম বেশি হতে পারে। যেমন গত বছর আমন মৌসুমে ১২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে ৩০ হাজার ৩১৩ মেট্রিকটন চাল উৎপাদন হয়েছিল বলে জানা গেছে।
ভূরদী এলাকার ছাইদুল, মকুল, হেলাল ও ঈসমাইল; মোজার বাজার এলাকার কিতাব আলী, পোলাদেশীর হালিম, বানেশ্বরদীর দেলোয়ার, ছাত্তার, আবুল, আমিন ও মোস্তাফিজুর রহমান; উরফার রেজাউল, চন্দ্রকোণার সাজু সাঈদ সিদ্দিকী, মোকসেদ, মুক্তার, রফিকুল ও আজিমসহ অনেক কৃষক জানান, এবার মৌসুমের শুরুতে তথা যথা সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় এবং মাঠে আউশ আবাদ থাকায় একটু দেড়িতে আমন ধান রোপন করা শুরু হয়েছে। তবে এখন প্রায় দিনই বৃষ্টি হওয়ায় আগামী দুই এক সপ্তাহের মধ্যে সব এলাকায় আমন ধানের চারা রোপনের কাজ শেষ হবে বলে তারা আশা করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, কৃষকরা তাদের অনেক জমিতে আউশ ধান রোপন করেছিলেন। ওইসব ধান কাটার পরে আমন ধানের চারা রোপন শুরু করেছেন। দেড়িতে রোপন শুরু হলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারও লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে অর্জন বেশি হতে পারে বলে তিনি ধারনা করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর জানান, আমন ধান রোপন উপযোগী উপজেলার সব জমিকে চাষের আওতায় আনতে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও কৃষি প্রনোদনা দেওয়া হ”েছ। তাছাড়া সম্প্রতি ময়মনসিংহে কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়। তার মধ্যে এলএলপি পদ্ধতিতে আমন ধানের চারা রোপনের উপর অধিক গুরুত্ব দওয়া হয়। যা সব শ্রেনির কৃষি কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রম ও প্রচারের মাধ্যমে নকলার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এই পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন বলে তিনি আশা করছেন।