Site icon

আমন রোপন শুরু হয়নি,সম্পুরক সেচ দেয়ার জন্য প্রস্তুত বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ

 

 

মোঃ রাসেল ইসলাম,দিনাজপুর প্রতিনিধি ॥

বৃষ্টির অভাবে আমন রোপন শুরু হয়নি

শ্রাবনের ১২ ও ভাদ্র মাসের ১৩ এর মধ্যে যত পার আমন চারা গাড়। কিন্তু এবার শ্রাবনের ১২ তারিখ পার হলেও এখন সেই বৃষ্টির দেখা নেই। আকাশে মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ালেও  বৃষ্টি হচ্ছেনা। আর মাঝে মাঝে যে  বৃষ্টি হচ্ছে এটাকে দিনাজপুরের কৃষকেরা ছাগল তাড়ানো  বৃষ্টি বলে আখ্যায়িত করছেন। এই শ্রাবন মাসেও আবাদি জমি পুড়ছে। জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।

সদর উপজেলার খোদমাধবপুর গ্রামের কৃষক আমিনুল হক বলেন,শ্রাবন মাস আসিলে পানিতে জমি থৈথৈ করে। কিন্তু এইবার জমি ফাটি গেইছে। এখনও পানির দেখা নাই। এভাবে যদি চলে তাহলে তো জমি পড়ি থাকিবে, আবাদ-সাবাদ করা যাবেনাই । বিচন যে গারিমো সেই পানিটাও দিবা হচে মেশিন দিয়া। তিনি জানান, বীজতলায় চারা বড় হয়ে গেলেও বর্ষার পানির অভাব দেখা দিয়েছে। এতে কৃষক জমিতে চারা রোপণ করতে পারছেন না। যারা করেছেন সেটা হিসাবে ধরার নয় । তারা মেশিন দিয়ে পানি দিয়ে চারা রোপন করেছে। এখন তাদের জমি শুকিয়ে ফেটে গেছে।

বৃষ্টি না হওয়ায় আমন আবাদ নিয়ে শংকায় থাকায় এমন মন্তব্য শুধু আমিনুল ইসলামেরই নয়, দিনাজপুর সদর উপজেলার ২ সুন্দরপুর ইউনিয়নের কৃষক দয়া রাম রায়, বাবুল হোসেন, বিরল উপজেলার সোহরাব আলী, কাহারোল উপজেলা আব্দুল্লাহ, বীরগঞ্জের ইয়াছির আলীসহ অনেকের। আমিনুল ইসলাম জানান, তার ৪ বিঘা জমিতে আমন আবাদ হয়। এ জন্য প্রায় ২৫ শতক জমিতে বীজতলা তৈরি করেছেন। চারাও বড় হয়েছে। পানির অভাবে রোপণ করতে পারছেন না। এ বছরই শুধু নয়, কয়েক বছর ধরেই আবহাওয়া এমন বিড়ম্বনায় ফেলছে। মেশিন দিয়ে চারা রোপণ করলে খরচ অনেক হয়ে যায়, বোরোর মত আমনের ফলন হয়না । আর সে তুলনায় ধানের দাম পাওয়া যায় না। তাই তিনি বুঝতে পারছেননা সামনের দিনে বৃর্ষ্টি হবে কিনা।

দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শ্রাবনের মাঝামাঝি সময়ে এসেও জমিতে কোনো পানি নেই। প্রচ- রোদে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। আর যারা আগাম চাষ দিয়ে রেখেছেন, সেসব জমিতে কাদার পরিবর্তে ধুলা উড়ছে। ভরা বর্ষায়ও প্রচ- রোদে পুড়ছে আবাদি জমি। বিরল উপজেলার রবিপুর গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, আমন আবাদের জন্য জমিতে চাষ দিয়েছি। কিন্তু এক ফোঁটা পানিও নেই। এ অবস্থায় কীভাবে আমন রোপণ করব এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা খরার কথা স্বীকার করে জানান, আমন রোপণের সময় চলছে। এ সময় বৃষ্টি দরকার। বৃষ্টির অভাবে জমিতে পানি নেই। সে কারণে এবার আমনের আবাদ ১৫ দিন পিছিয়ে যেতে পারে । বিরল উপজেলার ১নং আজিমপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আফজাল হোসেন জানান, জমিতে পানি না থাকায় একদিকে যেমন আমন আবাদে বিলম্ব হচ্ছে। অন্যদিকে উপকারও হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জমিতে পানি না থাকায় কৃষকদের আগাম চাষ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে জমির আগাছা দমন হবে এবং বৃষ্টি হলে চাষকৃত জমি উর্বর হবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে জানান তিনি। দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তৌহিদ ইকবাল জানান, দিনাজপুরে চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ জন্য ইতিমধ্যেই ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। তীব্র খরার কারণে জমিতে পানি না থাকার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত আমন রোপণের সময়। এখন আমন রোপণের উপযুক্ত সময় চলছে। তবে এ অঞ্চলের কৃষকরা সার আগষ্ট মাসেই আমন চারা রোপণ করে থাকে।

তিনি জানান, আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী এই মাসের শেষের দিকে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বৃষ্টিপাত না হলে কৃষকদের বিকল্প উপায়ে সেচ দিয়ে জমিতে আমন রোপণের পরামর্শ দেওয়া হবে। এ জন্য তারা প্রস্তুত। অপরদিকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিএডিসিসহ (সেচ) কৃষকদের সেচযন্ত্র ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দিনাজপুরের সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, আমরা বৃর্ষ্টির জন্য অপেক্ষা করছি । যদি অল্প সময়ের মধ্যে বৃর্ষ্টির দেখা না মিলে তাহলে বরেন্দ্র অঞ্চলে সম্পুরক সেচ শুরু করা হবে। ডিপ টিউবয়েল গুলো চালু করা হবে। এ জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

Exit mobile version