Site icon

আমবাগানে বালাইনাশক স্প্রে প্রয়োজনীয়তা ও করণীয়

                                                     

কৃষিবিদ ড. মো শরফ উদ্দিনঃ 

আমবাগানে বালাইনাশক স্প্রে ঃ

বর্তমানে দেশের অনেক জেলাতেই বাণিজ্যিকভাবে আমের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। তবে সকল জেলাতে বাগান ব্যবস্থাপনা একই রকম নয়। রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাই আম বাগান বেশ ভালো ভাবেই নিয়মকানুন মেনে ব্যবস্থাপনা করা হয়। আমের ফলন আবহাওয়ার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। চলতি মৌসুমে শীতের প্রকোপ ততটা বেশি নয়। ফলে আমের মুকুল বের হবে কিছুদিন আগেই। কোন কোন জেলাতে কুয়াশা পড়তে দেখা যাচ্ছে।

ইতিমধ্যেই আমচাষীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বালাইনাশক স্প্রে গতানুগতিক নিয়মরক্ষায়। খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে, কোন কোন চাষী চলতি মৌসুমে ভালো ফলন পাওয়ার জন্য ইতিমধেই ২/৩ বার স্প্রে  করেছেন তার আমবাগানে। এইভাবে স্প্রে  চলতে থাকলে আম সংগ্রহ পর্যন্ত সংখ্যা দাড়াবে ১৫-৬২ বার জাতভেদে। তবে বেশিরভাগ চাষী এখনও স্প্রে  করা শুরু করেননি। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শুরু করবেন অতি শীঘ্রই। স্প্রে খরচ বেশি হওয়ায় এবং আমের দাম কম হওয়ার কারণে বিগত বছরগুলোতে আমচাষীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। লাভতো দুরের কথা আমের উৎপাদন খরচ উঠাতে হিমসিম খেয়েছেন আমচাষীরা। কারণ অনুসন্ধানে দেখো গেছে, আমচাষীদের সবচেয়ে বেশি খরচ হয় বালাইনাশক স্প্রে  করার পেছনে। তবে কোন কোন আমচাষী বেশ কিছু অর্থের অপচয় করেন চোরাই পথে আসা হরমোন ব্যবহার করে। দেশের সকল মানুষই চাই বিষমুক্ত ও নিরাপদ ফল খেতে। বিজ্ঞানিরাও আশা করেন সবচেয়ে কম বালাইনাশক ব্যবহার করে চাষীরা যেন তাদের ফল উৎপাদন করেন। কিন্তু কেন এত স্প্রে করা হচ্ছে আমবাগানে? প্রকৃতপক্ষে এতগুলো স্প্রে  প্রয়োজন কিনা!

এমতাবস্থায় আম বাগানে স্প্রে করার কারণ অবশ্যই জানা দরকার আমচাষীদের। আর এখনই উপযুক্ত সময় সেটি জানার জন্য। আম গবেষকদের মতে, সঠিক সময়ে, নির্দেশিত মাত্রায় ও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ক্ষেত্র বিশেষে ৩-৫বার স্প্রে  যথেষ্ঠ। তবে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে মাত্র ৩ বার স্প্রে  যথেষ্ঠ সবচেয়ে ভালমানের রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের জন্য। প্রথম স্প্রে  করতে হবে মুকুল বা পু®পমঞ্জুরী বের হওয়ার আনুমানিক ১৫-২০ দিন পূর্বে সাইপারমেথ্রিন/ কার্বারিল / ল্যামডা সাইহ্যালাথ্রিন/ ইমিডাক্লোরোপ্রিড গ্র“পের কীটনাশক এবং সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক দিয়ে ভালভাবে সমস্ত গাছ (বাকলসহ) ধুয়ে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে গাছে বসবাসকারী হপার বা ফুদকি পোকাসহ অন্যান্য পোকার আক্রমন হতে রক্ষা পাওয়া যাবে। আমের মুকুল যখন ১০-১৫ সেন্টিমিটার হবে কিন্তু ফুল ফুটবে না তখন দ্বিতীয়বার একটি কীটনাশক ও মেনকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক একত্রে মিশিয়ে স্প্রে  করতে হবে ফলে পু®পমঞ্জুরীর বৃদ্ধি ও ফুটন্ত ফুলকে এ্যানথ্যাকনোজ রোগের আক্রমণ রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং আমের গুটি মটরদানার সমান হলে তখন তৃতীয়বার কীটনাশকের সাথে মেনকোজেব অথবা কার্বেনডাজিম গ্র“পের ছত্রাকনাশক নির্দেশিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে। কারণ আমের গুটি বাধাঁর পর এ্যানথ্রাকনোজ রোগ দেখা যায় ফলে গুটির উপর কালো কালো দাগ হয় ও পরে গুটি ঝরে পড়ে। আমের মুকুলের ফুল ফোটার পর কোন অবস্থাতেই স্প্রে  করা যাবেনা। এর পরই ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।

ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি গ্রহন করলে আম সংগ্রহ করা পর্যন্ত কোন ধরনের স্প্রে  করার প্রয়োজন নেই। তবে কেউ যদি এই প্রযুক্তিটি ব্যহার না করেন তাহলে ফলছিদ্র কারী পোকা ও ফলের মাছি পোকা দমনে আরও দুইটি স্প্রে  করা প্রয়োজন। এরপরও এই পোকার আক্রমণজনিত কারণে আমের ক্ষতি হবে ৫-১০ ভাগ। আমাদের দেশের যেসব এলাকায় বেশি বৃষ্টিপাত হয় এবং নাবী জাতের ক্ষেতে মাছি পোকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে। বর্তমানে প্রচলিত বাগান ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই পোকাটিকে কোন ভাবেই সম্পূর্নভাবে দমন করা সম্ভব নয়। পাহাড়িয়া এলাকাসহ এসব ক্ষেত্রে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি দ্বারা এই পোকাটিকে শতভাগ দমন করা সম্ভব। এছাড়াও সম্ভব হলে আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (আম গবেষণা কেন্দ্র) বিজ্ঞানিদের সাথে/ কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে আমবাগানে স্প্রে  করা দরকার। একই কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক বার বার স্প্রে  না করে মাঝে মাঝে গ্র“প পরিবর্তন করা উচিত কারন একই ঔষধ বার বার স্প্রে  করলে পোকা বা রোগের জীবানুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যেতে পারে। প্রখর রৌদ্রে স্প্রে  করা মোটেই উচিত নয়। আমবাগানে স্প্রে  করার সময় প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবশ্যই মেনে চলা উচিৎ। গাছ থেকে ফল সংগ্রহের ১৫-২০ দিন মধ্যে গাছে কোন বালাইনাশক স্প্রে  করা উচিত নয়। উল্লেখিত বিষয়সমুহের উপর নজর দিলে খুব সহজে এবং কম খরচে আমবাগানের রোগ-পোকামাকড় দমন করা সম্ভব হবে। আমরা আশাকরি কৃষি উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় দেশে উৎপাদিত হবে গুনগত মানসম্পন্ন ফল-ফসল যা নিশ্চিন্তে ভোগ করবেন দেশের সাধারণ জনগন।

Exit mobile version