আম্পানে সুন্দরবন উপকূলে
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির.সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার,বাগেরহাট:
আম্পানে সুন্দরবন উপকূলে ঃ করোনা ভাইরাসের মধ্যেই অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় সুপার সাইক্লোন আম্পানের তাণ্ডবে সুন্দরবনের উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। জেলায় থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ, ঘরবাড়ি ও মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে জেলার কোথাও হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। মাঠে থাকা পাকা ধান ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসন বলছে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন।
বুধবার (২০ মে) রাতে পাউবো বাগেরহাটের ৩৫/১ পোল্ডারের শরণখোলা উপজেলার বগী-গাবতলা অংশের ২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে বাঁধের আশপাশের কয়েকটি গ্রামের নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিতে ভেসে গেছে সহস্রাধিক মৎস্য ঘের। এছাড়া বাঁধের আশপাশের বেশকিছু কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে বেশ কিছু গাছপালা।
এদিকে ভাঙা বাঁধ দিয়ে পুনরায় জোয়ারের পানি ঢুকে আবারও লোকালয় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বাঁধ সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে মৎস্য ও বিদ্যুত খাতে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন পঞ্চকরণ ইউনিয়নের দেবরাজ-কুমারিয়া জোলা ভাঙ্গন কবলিত বেড়ি বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। একই দিনে তিনি বহরবুনিয়ার ইউনিয়নের ফুলহাতা ও সদর ইউনিয়নের গাবতলা ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পুরিদর্শন করেন। এসময় তার সাথে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান,থানা অফিসার ইন চার্জ কেএম আজিজুল ইসলাম , যুবলীগ নেতা তাজেনুর রহমান পলাশ ।
বিদ্যুতের ২০টি খাম্বা ভেঙ্গে পড়েছে। ছিড়ে পড়েছে ৬০০ কিলোমিটার লাইন। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে পল্লী বিদ্যুৎ মোরেলগঞ্জ ডিজিএম দিলিপ কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন। শুক্রবার বিকেল নাগাদ শতভাগ বিদ্যুৎ সচল হবে বলেও এ কর্মকর্তা জানান।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার জানান, ১২৫২টি মৎস্য ঘের ডুবে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহেনা পারভিন জানান, ৭০ একর জমির কলা বাগান ও সবজি ক্ষেত বিনষ্ট হয়ে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মোরেলগঞ্জ পৌরসভা মেয়র এসএম মনিরুল হক তালুকদার জানান, ১ নং ওয়ার্ডে প্রায় এক কিলোমটার রাস্তা নদীতে ধ্বসে গেছে। কয়েক শ’ পরিবার ঝুকির মধ্যে রয়েছে। যাবতীয় ক্ষতির হিসাব নিরুপন চলছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, খাউলিয়া বাজার সংলগ্ন একটি ব্রীজ ধ্বসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। প্রায় ২ হাজার বসতবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ঝড়ে প্রায় দেড় লাখ লোক আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরুপন চলছে।
মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বাগেরহাট জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া বন্দরের বানিজ্যিক জাহাজের পন্য খালাস-বোঝাই এবং অপারেশন কাজ ৬০ ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুরু হয়েছে। বন্দর জেটি ও চ্যানেলে অবস্থানরত ১০াট বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে যথারীতি পণ্য ওঠানামার কাজ চালু করা হয়েছে। তবে ঘুর্নিঝড় আম্পানের তান্ডবে তেমন কোন বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়নি বন্দরকে।
এদিকে আম্পানের তান্ডবে সুন্দরবনের ঢাংমারী ষ্টেশন, লাউডোব, দুবলা ও মরাপশুর ক্যাম্পের জেটি, ঘরবাড়ীসহ অন্যান্য স্থাপনা এবং বনের গাছপালার বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সুন্দরবনের ভেতরে মিষ্টি পানির পুকুর প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া বনপ্রহরীদের জব্দকৃত কাঠ জোয়ারের তোড়ে ভেসে গেছে বলে জানিয়েছে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ বেলায়েত হোসেন। তবে এতে কোন জেলের নৌকা ডুবি, জেলে নিঁখোজ কিংবা বন্যপ্রানীর হতাহতের খবর এখন পর্যন্ত নেই বলেও জানান তিনি।
শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন মুক্তা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি পড়ে গেছে, উড়িয়ে নিয়ে গেছে ঘরের টিনের ছাউনি। উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। নদীর পানির চাপে বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থানও ভেঙে গেছে। ফলে সাউথখালী, দক্ষিণ সাউথখালী, তেরাবেকা, বগী, গাবতলীসহ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পাউবো বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদুজ্জামান খান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় রিং বেড়িবাঁধ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক জানান, আমরা উপজেলা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তারা মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করছে।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ জানান, আম্পানে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা নিরূপণ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।