Site icon

আশা জাগানিয়া ‘সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’

kamar picture
খামার ব্যবস্থাপনা

কৃষিবিদ জাহেদুল আলম রুবেল

সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা প্রকল্প

ভূমিকাঃ গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ। ‘সুখী’ চাষির সেই প্রতিচ্ছবি ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা শুরু করেছে সরকার। বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ, ফলদ বৃক্ষের বাগান, হাঁস-মুরগী পালন, পুকুরে মাছ চাষের মত প্রচলিত ব্যবস্থাকে এবার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষকের ঘরে ফিরিয়ে আনবে সরকারের নতুন এই উদ্যোগ। গ্রামীণ কৃষি নির্ভর পরিবার গুলোতে আয়ের পরিমান বাড়ানো, বেকারদের কর্মসংস্থান, আমিষের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রকল্প সাজানো হয়েছে। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা উপাদান ( ইন্টিগ্রেটেড ফার্ম ম্যানেজমেন্ট কম্পোনেন্ট-আইএফএমসি)।

যেভাবে কাজ করা হয়ঃ

কৃষকের বাড়িতে যে ধরনের মুরগী পালন করা হয় তা বছরে সাধারণত তিন বার ডিম দেয়। ডিম থেকে দেশীয় পদ্ধতিতে বাচ্চা উৎপাদনের কারনে বাকি সময় মুরগীর ডিম দিতে পারে না। মুরগীর বাচ্চার জন্মের পর এদের উন্নত খাবার দিয়ে একমাস পরেই মা মুরগীটিকে বাচ্চাগুলো থেকে আলাদা করে দিলে বছরে পাঁচ থেকে ছয় বার ডিম দিতে পারবে।
আবার কৃষকের বাড়ির আনাচে কানাচে সবজি চাষ হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। যা চাষি পরিবারের প্রতিদিনের খাদ্যের অন্যতম উৎসও বটে। তবে বাড়ির আশেপাশের জায়গাগুলো যথাযথভাবে চিহ্নিত করে জায়গার ধরন অনুযায়ী সবজি চাষের পরিকল্পনা বাতলে দেওয়া দেবে এই প্রকল্প। ছায়াযুক্ত স্থানে কি ফসল লাগালে ভালো ফলন পাওয়া যাবে, তা হয়ত কৃষক জানেন। কিন্তু বিষয়টিকে এবার পদ্ধতিগত ভাবে উপস্থাপন করে দেবে এই প্রকল্প। এছাড়াও ধান, পাট ও অন্য ফসল চাষের ক্ষেত্রে সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা উপাদান ( ইন্টিগ্রেটেড ফার্ম ম্যানেজমেন্ট কম্পোনেন্ট-আইএফএমসি) প্রকল্পের আওতায় কৃষকের টেকসই পরিবর্তনের জন্য এমন খুঁটিনাটি অসংখ্য বিষয় সংযুক্ত থাকছে।
উন্নয়ন সহযোগী ডানিডার সহায়তায় কৃষি মন্ত্রনালয়ের অধীনে এই প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৮ সালের মধ্যে দেশজুড়ে ৬১ জেলার ৩৭৩ উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় কমপক্ষে এক লাখ কৃষক প্রশিক্ষিত হবে এবং এই এক লাখ কৃষকের মধ্যে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কৃষাণী প্রশিক্ষণ পাবেন।
প্রতিটি গ্রামের কিছু কিষাণ-কৃষাণীকে উন্নত এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বসতবাড়িকে খামার বাড়িতে রূপান্তরের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পরবর্তীতে সে সব কিষাণ -কৃষাণীরা অন্য প্রতিবেশীদের মাঝে এই জ্ঞান ছড়িয়ে দেবে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) ৩০ হাজারেরও বেশি নিবন্ধিত কৃষক রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির লীফ টিমের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সম্প্রতি নাটোরে এই প্রশিক্ষণ নিয়েছে। পরবর্তীতে তাদের নিবন্ধিত কৃষক পরিবারগুলোকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনায় পারদর্শী করে তুলবেন লীফ টিমের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় , প্রথম পর্যায়ে এই প্রকল্পের অধীনে যেসব কৃষক পরিবারকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে তাদের আয় অন্য কৃষক পরিবারের চেয়ে কমপক্ষে ১০ শতাংশ বাড়বে। এই প্রকল্প অর্ন্তভুক্ত কৃষি পরিবারের শিশুদের আমিষ সক্ষমতা কমপক্ষে ৫ শতাংশ বাড়বে। পাশাপাশি যেসব গ্রামীণ নারীরা ছদ্ম বেকার তারা ও আয়ের পথের সঙ্গে যুক্ত হবেন।
আইএফএমসি প্রকল্পের পরিচালক মো. ইকবাল জানান, ২০১৩ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুনে শেষ হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাষি সহায়তাকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা খামার পদ্ধতিতে মুরগি পালন ও ফসল চাষে চাষিদের হাতে-কলমে শেখাচ্ছেন। এতে চাষিরা উপকৃত হচ্ছেন। তাঁদের উৎপাদন ও আয় বাড়ছে। প্রকল্প শেষেও সুফল মিলবে। কেননা প্রশিক্ষিত চাষিদের মধ্যে প্রশিক্ষণটা থেকেই যাবে। তাঁরা অন্যদের মধ্যেও এটি ছড়িয়ে দেবেন।
বিএটিবির লীফ বিভাগের প্রধান জহুরুল হক সরকার বলেন, ‘দেশ এসডিজি লক্ষে এগিয়ে চলছে। বিএটিবি তাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মশক্তিকে ব্যবহার করে সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে এসডিজি লক্ষ পূরণের অংশীদার হতে চায়। কৃষকের টেকসই উন্নয়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাব।’


লেখকঃকৃষিবিদ জাহেদুল আলম রুবেল,মফস্বল সম্পাদক, কালের কণ্ঠ,বসুন্ধরা, বারিধারা

Exit mobile version