* কৃষিবিদ বকুল হাসান খান *
বর্ষাকাল । বৃষ্টির রমঝমা শব্দ। আষাঢ়ীয় শুভেচ্ছা। তাই আসুন জেনে নেই , এ সময়ের কৃষিতে করণীয় কাজ ।
শাক-সবজি ঃ- সবজির অধিক ফলনের জন্য হস্ত পরাগায়ণ করুন। মনে রাখবেন, শাক সবজি চাষে অনেক লাভ বেশি । তাই শাক-সবজি চাষের দিকে বেশি করে ঝুকি নিতে পারেন। সবসময় অগ্রিম চাষ করুন, সঠিক ভাবে যতœ নিন। অধিক ফলনের জন্য দেশী-বিদেশী আধুনিক জাতের ব্যবহার করুন। এ সময়ে উৎপাদিত সবজির মধ্যে যেমন- ডাটা, গিমাকলমি, পুঁইশাক, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, ঝিঙা, শসা, ঢেঁড়স,কাকরোল, গ্রীষ্মকালীন টমেটো, বেগুন। পূর্বে বপনকৃত সবজি গোড়ার আগাছা পরিষ্কার দিতে হবে। লতা জাতীয় সবজি মাচায় তুলে দেওয়ার জন্য ব্যবস্তা নিতে হবে। পাতা বা লতা বেশি হলে ছাটাই করে দিতে হবে।
আমন ধান ঃ– এখনও রোপা আমন ধানের বীজতলা যারা তৈরির করেননি তাড়াতাড়ি বীজতলা তৈরি করুন। বীজতলা তৈরির জন্য উঁচু জমি নির্বাচন করতে পারেন যেখানে সূর্যে আলো পরে। বীজের জন্য নির্বাচিত জমি ভালভাবে চাষ দিয়ে কাদা কাদা করুন। জমির আয়তন অনুযায়ী লম্বা ৪ ফুট চওড়া করে বীজতলার বেড তৈরি করুন। বেডের চারপাশে দেড়ফুট চওড়া নালা রাখা প্রয়োজন। ভাল চারা পাওয়ার জন্য ২ কেজি গোবর, ১০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০ গ্রাম জিপসাম সার দিন। রোপা আমনের জন্য উন্নত কয়েকটি ধানের জাত হচ্ছেঃ- বি আর-৫, বি আর-১০, বি আর-২২, বি আর-২৩, বি আর-২৫, ব্রিধান-৩০, ব্রিধান-৩১, ব্রিধান-৩২, ব্রিধান-৩৩, ব্রিধান-৩৪, ব্রিধান-৩৭, ব্রিধান-৩৮, ব্রিধান-৩৯, ব্রিধান-৪০, ব্রিধান- ৪১, বিনাশাইল। ৩০ দিন বয়সী চারা মূল জমিতে রোপণ করূন।
আউশ ধান ঃ– আউশ ধান শতকরা ৮০ ভাগ পাকলে তাড়াতাড়ি কেটে মাড়াই ঝাড়াই করার ব্যবস্থা নিন।
পাটঃ- পাটের জমির আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। পাট গাছ বেশি ঘন হলে সুস্থ ওসবল চারা রেখে পাতলা করে দিতে হবে। বৃষ্টির পানি বেশি জমে গেলে বের করে দিতে হবে। পাটে বিচা ও ঘোড়া পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। পাখি বসার ব্যবস্থা করে দিলে এ পোকা খেয়ে ফেলবে আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত কীঠনাশক ব্যবহার করতে হবে। পাটে ফুল আসলে কাটার সময় হয়। বীজ রাখার জন্য এখনই ১৫-২২ সেমি. পাটের াগা কেটে দিন।
অন্যান্য ফসলঃ- যদি চাষ না করে থাকেন তাহলে আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি আদা হলুদ চাষ করতে পারেন। গ্রীষ্মকালীন মুগডালের চাষচাষ করা যেতে পারে। সবুজ সার ফসল –ধৈঞ্চা,শনপাট ও ডালজাতীয় ফসলের বীজ বুনে দিতে পারেন। পূর্বে চাষকৃত সবুজ সার ফসলের বয়স ৩৫-৪৫ দিন হলে চাষ ও মই দিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে পারেন।
গাছপালা ঃ- গাছের চারা কলম লাগানোর উপযুক্ত সময় । ভুলে যাবেন না, বছরে দু’বার গাছপালায় সার দিতে হয়। বর্ষার আগে একবার আর বর্ষার পরে আরেকবার।সার না দিয়ে থাকলে দ্রুত পূর্বে রোপণকৃত গাছপালার গোড়ার চারাপাশ কুপিয়ে দিন। আগাছা পরিষ্কার করে সার দিয়ে দিন। আরো নতুন গাছ লাগিয়ে দিন। ১ ফুট গভীর, ১ চওড়া করে গর্ত তৈরি করুন। নতুন করে গাছ রোপণ করার জন্য জৈব ও রাসায়নিক সার দিয়ে গর্ত ভরাট করে রাখুন। গর্ত ভরাটের ৭-১০ দিন পর চারা রোপনের কাজ করতে পারেন। পরিকল্পিতভাবে ফল ও ঔষধি গাছের বাগান করুন।
পশু সম্পদ ঃ– কচুরি পানা সুলভ হরেও বেশি খাওয়াবেন না। গবাদি পশুর আবাসস্থল মেরামত করে নিন। ঘরের চারপাশ পরিষ্কার করে রাখুন।বর্ষায় যাতে খাদ্যে সংকটে নাপরতে হয় তার জন্য গো-খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। । গবাদি পশুকে খড়ের সাথে কাচা ঘাস খাওয়ান। গর্ভবর্তী গাভী ও বাছুরের যতœ নিন। গবাদি পশুর তড়কা, গলাফোলা, মুরগীর রানীক্ষেত, হাঁস-মুরগীর কলেরাসহ অন্যান্য রোগের প্রতিষেধক টিকা দিয়ে নিন।
মাছ ঃ- বন্যায় মাছের ক্ষতি করতে পারে। তাই আগেই প্রস্তুতি নিয়ে থাকুন। বর্ষার পূর্বে পুকুর পাড় সংস্কার করে নিন। এখন মাছের প্রজননের সময় সময় পুকুরের আগাছা পরিষ্কার করে নিন। সম্পূরক খাবার দিন, সার প্রয়োগ করুন। জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরিক্ষা করে নিন।
রোগমুক্ত, উন্নত জাতের বীজ, আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ও সঠিক নিয়ম অনুযায়ী চাষ করুন। যে কোন পরামর্শের জন্য আপনার এলাকায় নিয়োজিত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, নিকটের কৃষি পরামর্শকেন্দ্র অথবা উপজেলা কৃষি, মৎস্য ও পশু সম্পদ অফিসে যোগাযোগ করুন।
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম