কভিড-১৯ বাগেরহাটে কোরবানির পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারীরা

পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায়

পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায়

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :

পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় ঃ আসছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। কোভিডড-১৯ এর পরিস্থিতিতে হাটে কোরবানির গরু বিক্রি নিয়ে এবার চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বাগেরহাটের গরু পালনকারীরা। এ সংকটে খামারিরা কোরবানির হাটের ওপর ভরসা করতে পারছেন না। তাই ধারদেনায় বড় করা গরুগুলোকে বিক্রির চেষ্টা করছেন তারা। তবে, লোকসান পুষিয়ে নিতে প্রনোদনার দাবি জানিয়েছেন তারা।

বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ডেইরি খামারে গরু মোটা-তাজাকরণ প্রকল্প এবং দুধ উৎপাদন চালু আছে। আর আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাগেরহাটের খামারীরা গরু মোটাতাজাকরণের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শেষ করেছে। খামারীরা স্থানীয় বাজারের জন্য ৫০হাজার গরু ও ১৫ হাজার ছাগল প্রস্তুত রেখেছে বলে নিশ্চিত করেছে বাগেরহাট জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ।

বাগেরহাটেরর বিভিন্ন হাট ও খামার ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির এখনো এক মাসের বেশি থাকলেও হাটগুলোতে গরু উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু বেচা-বিক্রি একদম নেই। কোরবানি দাতা এবং পাইকার কারোরই দেখা মিলছে না। বিক্রেতারা বলছেন, খামার থেকে গরু হাটে আনা অনেক কষ্টকর। কারণ, গরুগুলো সেখানে গরমের সময় ফ্যানের নিচে থাকে। হাটে আনার পর অস্থির হয় গরুগুলো। কিন্তু গরুর দাম অনুযায়ী ক্রেতা না থাকায় বিক্রি হচ্ছে না। সে কারণে আবার গরুগুলো ফেরত নিতে হয়। ফলে লোকসানের পাল্লা বাড়ছেই। সেই সঙ্গে কষ্ট বাড়ছে গরুগুলোর।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাগেরহাটে কোরবানির পশুর চাহিদা শেষে অতিরিক্ত পশু বিক্রি হতো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ব্যাপারীদের আগাম আনাগোনা ছিলো। কিন্তু এবার এবার হাকডাক নেই তাঁদের। তাই অতিরিক্ত গরুগুলো বিক্রির সম্ভাবনা কম।

খামারিরা বলছেন, ঈদকে টার্গেট করে ধারদেনা বা ঋণ করে বড় করা গরুগুলোতে স্বপ্ন দেখতো খামারিরা। কিন্তু করোনায় সেই স্বপ্ন ফিকে। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ উঠবে না বলে উদ্বেগে খামারিরা। তাই কোরবানির হাট শুরু হতে মাসখানেক দেরি থাকলেও গরু পালনকারীরা এখনই তাঁদের গরু বিক্রির চেষ্টা করে যাচ্ছেন। করোনাকালে কোরবানির ঈদের অপেক্ষায় থাকলে লাভের বদলে লোকসান গুনতে হবে তাদের।

স্থানীয়রা জানান, বিগত বছর গুলোর মত এবছর বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনার কোন আগ্রহ ব্যাপারীদের দেখা যাচ্ছে না। হাটে যে সকল গরু উঠছে তাও খদ্দেরের অভাবে খুব বিক্রি হচ্ছে না। অপরদিকে অনলাইনের মাধ্যমে গরু বেচাকেনার বিষয়ে গ্রামের খামারি ও ব্যাপারীদের কোন অভিজ্ঞতা নেই। যার কারণে অনলাইনে গরু বিক্রি করার কোন সুযোগ পাচ্ছেনা তারা।

কয়েকজন খামার মালিক জানান, বিগত বছর গুলোতে এই সময় বেশীর ভাগ গরু বিক্রি হয়ে যেত। কিন্তু এবছর করোনা ভাইরাসের জন্য কোন ব্যাপারী বা গৃহস্থ খদ্দের পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে গরুর খাবারের দাম বেড়েই চলেছে। গত বছর ষাঁড় দুই লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে এবছর তাঁর দাম এক লাখও হচ্ছে না।

তারা আরো জানান, ধারদেনা করে খামারে গরু তুলেছেন। ঠিকমত দাম না পেলে এবার পথে বসতে হবে। এছাড়া অনলাইনে গরু বেচাকেনার খবর তারা কেবল টিভিতেই দেখেছেন। এনিয়ে তাদের সাথে কেউ কোন আলাপ আলোচনা করেনি।

এ ব্যাপারে গরু ব্যবসায়ী জানান, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর এখনও কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ের তেমন কোন প্রভাব পড়েনি।

বাগেরহাট জেলা প্রাণি সম্পদক কর্মকর্তা ডা. মো. লুৎফর রহমান বলেন,করোনা কালীন সময়ে পশুর হাটে আগের মতো কেনাকাটা নেই। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে খামারী ও গৃহস্থরা চরম লোকসানে পড়বেন। এদিক বিবেচনা করে আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পশুর হাটে ক্রেতাদের আসার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছি।

Advisory Editor

Advisory Editor of http://www.krishisongbad.com/

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *