Site icon

কমছে সীমান্ত আপরাধ বাড়ছে কর্মসংস্থান: রাবার বাগানে নতুন আশা

রাবার বাগানে নতুন আশা

মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) :

শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী রাবার বাগান পাহাড়ি অধিবাসীদের নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে রাবার বাগানই তাদের আয়ের একমাত্র ভরসা। এ আয়েই তাদের সংসার ও ছেলে মেয়েদের শিক্ষা খরচ চলে। দিন দিন রাবার বাগানের পরিধি বাড়াতে শ্রমিকের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতেকরে একদিকে বাড়ছে কর্মসংস্থান অন্যদিকে কমছে চুরা কারবারীসহ বিভিন্ন অপরাধ। কোন একদিন গহীন বন থেকে লাকড়ি বা ঝরাপাতা সংগ্রহ করে বিক্রি করে তাদের সংসার চালাতে হতো। তাতে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে তাদের জীবন কাটতো। কিন্তু আজ তারা রাবার বাগানের শ্রমিক, কেউ কেউ বলেন তারা রাবার বাগানে চাকরি করেন। বর্তমানে সবাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন, পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোই কাটছে তাদের জীবনকাল।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শেরপুরের উত্তর সীমান্ত এলাকা জুড়ে গারো পাহাড়। ভারতের সীমানা ঘেষা এগারো পাহাড়ে রয়েছে লাউচাপড়া, মেঘাদল, দিঘলাকোনা, গারো পাড়া, বাবেলাকোনা, চান্দাপাড়া, হাড়িয়াকোণা ও রাজারপাহাড় নামক অনেক পাহাড়ি গ্রাম। এসব গ্রামে সামান্য কৃষিকাজ, বনের লাকড়ি ও লতাপাতা কুড়িয়ে বিক্রি করা ব্যাতিত অন্য কোনো আয়ের পথ ছিলনা। ফলে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে অনেকে জড়িয়ে পড়তো নানা অপকর্মে। কেউবা জড়িয়ে পড়তো বনের বৃক্ষ চুরি ও মাদকসহ চোরাচালানে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ১৯৯৪ সালে বনবিভাগের কাছ থেকে কর্ণঝোড়া পাহাড়ে ৬২০ একর জমি নিয়ে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন রাবার এস্টেট গড়ে তোলে। এ রাবার গাছের উৎপাদিত রস সংগ্রহ থেকে চালু হয় রাবার উৎপাদন ও প্রসেসিং, গড়ে উঠে রাবার প্রসেসিং কারখানা। এতে রাবার বাগানে স্থানীয় জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে কর্ণঝোড়া রাবার বাগানে নিয়মিত শতাধীক শ্রমিক কাজ করছেন। একেকজন শ্রমিক ৩০০ করে রাবার গাছ দেখবাল করেন এবং ওই গাছ থেকে রাবার উৎপাদন করেন। আগস্ট মাস থেকে জানুয়ারী মাস পর্যন্ত রাবার সংগগ্রহের ভরা মৌসুম চলে। এসময় প্রতি শ্রমিক দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে আয় করতে পারেন। অন্যান্য মৌসুমে আয় একটু কম হয়, প্রতিদিন একেকজন শ্রমিক ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা মজুরী পান। এখন তারা বনের গাছ কাটার পরিবর্তে রাবার বাগান দেখাশোনা, পরিচর্যা ও রাবার রস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এতে বাড়ীর কাছেই সৃষ্টি হয়েছে আয়ের পথ। রাবারে নিয়মিত আয়-রোজগার হওয়ায় তারা অপরাধ থেকে দূরে চলে এসেছেন। রাবার বাগানেই তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাদের ছেলে মেয়েরাও নিয়মিত লেখা পড়া চালিয়ে যেতে পারছে।

অন্যদিকে রাবার বাগান গড়ে উঠায় বনবিভাগের জমি বেদখল হওয়ার হাত থেকেও রক্ষা পাচ্ছে, কমেছে বনের গাছ চুরির প্রবণতা। সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় বেকারদের কর্মসংস্থান। ওই রাবার বাগানে কর্মরত শ্রমিক আলী আকবর, মর্জিনা বেগম ও আশরাফ আলী জানান, তারা আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন। আগে তারা বেকার ছিলেন, এখান কাজ পেয়ে তাদের দৈনিক আয় করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। রাবার বাগানের ট্রেকিং সুপার ভাইজার ইদ্রিস আলী জানান, এখন থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসারের খরচসহ ছেলে মেয়েকে শিক্ষা খরচ চলছে। কর্ণঝোড়া বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের ম্যানেজার এ এম শাহাজাহান সরকার জানান, এ রাবার বাগানে প্রতিদিন ৩ হাজার ১০০ কেজি থেকে ৩ হাজার ৫০০ কেজি রাবার পাওয়া যাচ্ছে। যা প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে ৮৫০ কেজি থেকে একহাজার কেজি আরএসএস নামীয় রাবার উৎপাদিত হয়। এখানকার আরএসএস রাবারের মান খুবই ভাল। বাজারে এর বেশ চাহিদা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, কর্ণঝোড়া রাবার এস্টেটে বিদ্যুৎ না থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বিদ্যুৎ থাকলে আরও বেশী এবং মানসম্পন্ন রাবার উৎপাদন করা সম্ভব হতো। স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এখানকার আবহাওয়া ও মাটি রাবার চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে নতুন নতুন রাবার বাগান গড়ে উঠার উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে। বনবিভাগের এমন আরও অনেক জমি রয়েছে যেখানে রাবার বাগান করা যেতে পারে। এতে গারো পাহাড়ের জনগোষ্ঠি সহ বেকারদের যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, সেই সাথে বন সংরক্ষনের পাশাপাশি সরকারি কোষাগারেও জমা হবে বিপুল পরিমানের রাজস্ব। এমনটাই মনে করছেন সুধী জনরা।

 

Exit mobile version