তরমুজের বাম্পার ফলন
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির.সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার,বাগেরহাট: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাগেরহাটসহ ১০ জেলার তরমুজের বাম্পার ফলন করোনার কারণে বাজারে ক্রেতা নেই তাই তরমুজ নিতেও আসে না ব্যাপারীরা।মাঠেই নষ্ট হচ্ছে বহু কষ্টে আর অনেক টাকায় ফলানো তরমুজ। প্রাণঘাতী করোনার কারণে আবার ভয়াবহ ধাক্কা, এত বড় বিপর্যয় কিভাবে কাটাবেন তা জানেন না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাগেরহাটে চাষিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে দেশে চলমান করোনা পরিস্থতিতে বাংলাদেশ তৃতীয় ধাপে অবস্থান করায় তা প্রতিরোধে ও সংক্রমণ ও মোকাবিলায় স্থানীয় হাটবাজার বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ। বাগেরহাট জেলায় তরমুজচাষ করে চাষীরা ব্যাপক ফলন পাওয়ায় তাদের মাঝে তরমুজ চাষের আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নতুন চাষীরাও আগ্রহী হয়ে উঠছে।মাঠেই নষ্ট হচ্ছে বহু কষ্টে আর অনেক টাকায় ফলানো তরমুজ। এ অঞ্চলের লাভজনক ফসল হিসেবে তরমুজ চাষ বেশ পরিচিত। এ এলাকার মাটি তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় বেশি লাভের আশায় তরমুজ চাষ করেন চাষিরা। ধান ও অন্যান্য ফসলের লোকসানের ধকল পোষাতে এবার আবাদ করেছিলেন আরো বেশি। সরেজমিনে জানা গেছে,বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ বাজারের ফল ব্যবসায়ী দেলোয়ার শেখ জানায়,করোনা ভাইরাসে বাজার বন্ধ থাকায় তরমুজবিক্রি করতে পারছি না, বিপাকের মধ্যে পড়েছি। এই ভাইরাসের কারণে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে না। ফলে মহাজন আমাদের মজুরি দিতে পারছেন না, এতে করে আমরাও বেশ বিপাকের মধ্যে পড়েছি। কতদিন এমন অবস্থা চলবে বুঝতেও পারছি না।
বাগেরহাটের ৯উপজেলায় ধান আবাদে উপর্যুপরি লোকসান, সম্ভাবনা দেখে শুরু করেছিলেন তরমুজ আবাদ কিন্তু তাতেও এত বড় বিপর্যয়! প্রাণঘাতী করোনার কারণে আবার ভয়াবহ ধাক্কা, এত বড় বিপর্যয় কিভাবে কাটাবেন তা জানেন না বাগেরহাটের চাষিরা।
এদিকে চাষের উপযোগী জমি কমে যাওয়ায় তরমুজ চাষের জন্য বিখ্যাত মোল্লাহাট উপজেলার গাংনী ইউনিয়নের অনেক কৃষক পার করছে বেকার সময়। এ বছর জমির পরিমাণে তরমুজের আবাদ কম হলেও বিগত বছরের চেয়ে ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবি তরমুজ চাষীদের।
তরমুজের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে খুশির ঝিলিকনেই করোনা বিপর্যয় করে দিয়েচে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠেই নষ্ট হচ্ছে বহু কষ্টে আর অনেক টাকায় ফলানো তরমুজ। ঘুরে দেখা যায় বিস্তীর্র্ণ এলাকাজুড়ে শুধু তরমুজক্ষেত। দুই-তিন কেজি সাইজের এই তরমুজ আর কয়েক দিনের মধ্যে বিক্রি করা যাবে কিন্তু করোনার কারণে পাইকার না আসায় বড় ধরনের লোকসানের মুখে চাষিরা। প্রতিবার তরমুজ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে থেকে পাইকাররা এসে জমি থেকে কিনে নিয়ে যান ট্রাক ট্রাক তরমুজ। এখানকার তরমুজ যেত যশোর, মাগুরা, চাঁদপুর, মানিকগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় তরমুজের বিশেষ খ্যাতি ছিল। কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তরমুজ তোলা ও বাজারজাতকরণের কাজে ব্যস্ত থাকতেন চাষিরা। বেলে-দোআঁশ মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় অন্য জেলায় উৎপাদিত তরমুজের চেয়ে এখানকার তরমুজ মিষ্টি বেশি, টকটকে লাল ও চামড়া পাতলা হওয়ায় সবার প্রিয়।
কৃষকরা বেশি লাভের আশায় ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দ্বিগুণ হারে তরমুজের চাষাবাদ করেছেন। শেষ পর্যন্ত করোনার কারণে খরচের টাকার অর্ধেকটাই ওঠে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত তারা। ধানখালী ইউনিয়নে পাঁচজুনিয়া গ্রামের তরমুজ চাষি মোহাম্মদ সান্টুমাল বলেন, মাঘ মাসের শুরুতে তরমুজ চারা রোপণ করি কিন্তু মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় তরমুজ চারা নষ্ট হয়ে যায়। আবার চারা রোপণ করি। আর পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলতে হবে কিন্তু দেশের যে অবস্থা তাতে তরমুজ বিক্রি করতে পারি কি না তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালো জানেন। এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তরমুজ চাষ করছি। এখন বিক্রি করতে না পারলে রাস্তায় বসা ছাড়া কোনো উপায় দেখি না।
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর জানান, করোনার কারণে তরমুজচাষিরা বড় ধরনের বিপাকে পড়েছেন। তাদের ক্ষেতে উৎপাদিত তরমুজ পাকলেও বাজারজাত করতে পারছেন না। মৌসুমের শুরুতে বুলবুলের কারণে কৃষকের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে, এখন আবার করোনার কারণে বড় ধরনের লোকসানের মুখে তারা। তাদেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে প্রতিদিন ক্ষেতে পানি দিলে তরমুজ কম পাকে। পানি দেয়া বন্ধ করলে অল্পতে তরমুজ পেকে যাবে। ১১ তারিখ পর্যন্ত লোকজন বাজারে আসতে পারবে না, দেখা যাক তারপর পরিস্থিতি কী হয়।